হিন্দুদের একজন প্রধান কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর, যে বিভিন্ন অশ্লীল কবিতার রচয়িতা হিসেবে সমাদৃত। তার রচিত ‘আমার সন্তান’ কবিতাটি এসএসসি পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে, যেই কবিতায় রয়েছে হিন্দুদের ‘অন্নপূর্ণা’ দেবীর প্রশংসা। মজার বিষয় হলো, এই ভারতচন্দ্র তার জীবনের শুরুতে হিন্দুয়ানী ভাষা ‘সংস্কৃত’ শিক্ষা করেছিল বলে তার পরিবার তাকে তিরষ্কার করেছিল, কারণ সংস্কৃত শিখে তো চাকরি পাওয়া যাবে না। চাকরি পেতে হলে শিখতে হবে মুসলমানদের ভাষা ‘ফারসী’। তাই ভারতচন্দ্র রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে ফারসী শিখতে চলে যায়।
এখন ফারসী শিক্ষা দেয়া হতো মক্তবে বা মাদ্রাসায়, তাই হিন্দুরা তখন মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত ফারসী শিখে চাকরি লাভের আশায়। তারা যে শুধু ফারসী শিখত তা নয়, বরং তাদের পোশাক থেকে শুরু করে চালচলনেও মুসলিম সংস্কৃতি অনুসরণ করতো মুসলমানদের কৃপালাভের উদ্দেশ্যে। এ প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক নীরদ সি চৌধুরী উল্লেখ করেছে-
“তখনকার দিনে উচ্চ শ্রেণীর বাঙালি হিন্দুর বাহ্যিক রূপ ও আচরণ প্রায় মুসলমান আমিরদের মতো হইতো। ভবানন্দ মজুন্দার (মজুমদার) জাহাঙ্গীরের কাছ হইতে ‘রাজা’ উপাধি পাইয়া বাড়ি ফিরিলো তখন পর্যন্ত অবশ্য মুসলমানী পোশাকই পরিয়া ছিল। কিন্তু অন্তঃপুরে প্রবেশ করিবার আগেই সেই পোশাক ছাড়িতে হইলো-
‘দরবেরে কাপড় ছাড়িল মজুন্দার
দাসু যোগায়িল ধুতিজোড় পরিবার’
‘দরবেরে কাপড় ছাড়িল মজুন্দার
দাসু যোগায়িল ধুতিজোড় পরিবার’
এই শ্রেণীর হিন্দুরা সামাজিক মর্যাদা দেখাইবার জন্য মুসলমানী আচরণ করিতো।পক্ষান্তরে নিম্ন শ্রেণীর হিন্দুরা নেঙটি পরিয়া থাকিতো, অন্য ভদ্র হিন্দুরা (কথিত) হেটো ধুতি পরিতো। কথাবার্তায় ভদ্র ভাষা শোনা যাইতো না, ফারসী বলা দূরে থাকুক।” (সূত্র: শতবর্ষ সংকলন, নীরদচন্দ্র চৌধুরী, মিত্র এন্ড ঘোষ পাবলিশার্স, পৃষ্ঠা ৬৪৪-৬৪৫)
এখানে ‘উচ্চ শ্রেণীর হিন্দু’ বলতে যাদের বোঝানো হয়েছে, তারাই হলো ব্রাহ্মণ ও কায়স্থ শ্রেণী। এই শ্রেণীটি তখন ফারসী শিখে মুসলমানদের গোলামি করতে পেরেছিল বলেই তারা হিন্দুসমাজে নেতৃত্বের আসনে বসতে পেরেছিল, যা তারা এখনও ধরে রেখেছে। পক্ষান্তরে নিন্ম শ্রেণীর হিন্দু তথা শূদ্ররা কিন্তু ফারসী শিখেনি, মুসলমানী সংস্কৃতিকে গ্রহণ করেনি। তাই তারা হিন্দুসমাজের নিন্মস্তরের অন্তর্ভূক্ত তখনও ছিল, এখনও হয়ে রয়েছে।
কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই হিন্দুরা মক্তব-মাদ্রাসায় গিয়ে, ফারসী শিখেও কিন্তু মুসলমান হতে পারেনি। নীরদ সি চৌধুরী যে ‘ভবানন্দ মজুন্দার’ এর উল্লেখ করেছে, তাকে বাড়িতে ঢোকার আগেই মুসলমানী পোষাক ছেড়ে ধুতি পড়তে হয়েছিল। নীরদ সি চৌধুরী তার ‘আত্মঘাতী বাঙালী’ বইতে স্পষ্টই উল্লেখ করেছে-
“বাঙালি হিন্দু পুরুষ ইংরেজ রাজত্বের আগে একমাত্র মুসলমান নবাবের কর্মচারী হইলে মুসলমানী পোষাক পরিত, উহা অন্দরে লইয়া যাওয়া হইত না। বাহিরে বৈঠকখানার পাশে একটা ঘর থাকিত, সেখানে চোগা-চাপকান-ইজার ছাড়িয়া পুরুষেরা ধুতি পরিয়া ভিতরের বাড়িতে প্রবেশ করিত। তাহার প্রবেশদ্বারে গঙ্গাজল ও তুলসীপাতা থাকিত, ম্লেচ্ছ পোষাক পরিবার অশুচিতা হইতে শুদ্ধ হইবার জন্য পুরুষেরা গায়ে গঙ্গাজল ছিটাইয়া মাথায় একটা দুইটা তুলসীপাতা দিত।...মুসলমান যুগে সম্পন্ন বাঙালী হিন্দু সামাজিক মর্যাদার খাতিরে মুসলমানী পোষাক পরিত ও ফারসী বলিত।”
কথাগুলো একারণে বললাম যে, বর্তমানে অনেকেই রয়েছে, যারা হিন্দুদের প্রতি অতিমাত্রায় নরম ও সহানুভূতিশীল। এরা সবসময় চিন্তা করে যে, হিন্দুদেরকে বোধহয় মুসলমান বানানো সম্ভব। এমনকি নাস্তিক হিন্দুগুলো যখন ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করে, তখনও এরা ফুল নিয়ে হাজির হয়ে হাসির পাত্রে পরিণত হয়। উদাহরণস্বরূপ পশ্চিমবঙ্গের ‘তারক বিশ্বাস’ এর কথা বলতে হয়, যে নবীজীর শানে চরম অশ্লীল কটূক্তি করে জেলে গিয়েছিল। তাকে জেলে পাঠিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম নেতা সানাউল্লাহ খান। (https://goo.gl/kqjhk7)
সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের কিছু ফেসবুক সেলিব্রেটি তারক বিশ্বাসের পক্ষে সাফাই গাওয়া শুরু করে। এরকমই এক বেয়াকুফ সেলিব্রেটি একটি সীরাতগ্রন্থের ছবি দিয়ে পোস্ট দেয় এবং তারক বিশ্বাসের মুক্তি দাবি করে। সে দাবি করে এই বইটি তারক বিশ্বাসকে পড়তে দিলেই নাকি সে ভালো হয়ে যাবে, সুতরাং তাকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হোক! (https://goo.gl/jGCFgH)
কি হাস্যকর! যেই সম্প্রদায়টি কিনা মাদ্রাসায় পড়েও মুসলমান হতে পারেনি, তারা কিনা নবীজীর জীবনী নিয়ে একটি বই পড়েই মুসলমান হয়ে যাবে বলে স্বপ্নদোষে ভুগছে এই বেকুবগুলো! কুকুরের লেজ যেমন পাইপের মধ্যে থেকে বের করলেই বাঁকা হয়ে যায়, ঠিক সেভাবেই মুসলিম শাসনামলে এই হিন্দুগুলো সারাদিন মুসলমানী পোষাক পড়ে ও ফারসী ভাষায় কথা বলেও বাড়িতে ফিরে ঠিকই ধুতি পড়ত। এই জাতিকে মুসলমান বানানো কখনোই সম্ভব নয়, বিশেষ করে এই একবিংশ শতাব্দীতে তো তা কোনভাবেই সম্ভব নয়। কারণ এখন না আছে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা, না আছে ইসলামী আইনকানুন, না আছে সমাজে ইসলামী মূল্যবোধ।
হযরত নূহ আলাইহিস সালাম তিনি সাড়ে নয়শ বছর দাওয়াত দিলেন, মুষ্টিমেয় কয়েকজন মাত্র হিদায়েত হলো। অতঃপর বাদবাকি কাফিরদের প্রতি মহাপ্লাবনের গযব নাযিল হল। ঠিক সেভাবেই এই হিন্দুরাও আটশ বছর মুসলমানদের অধীনে ছিল, কিন্তু মুষ্টিমেয় কয়েকজন ব্যতীত অধিকাংশই মুসলমান হয়নি। সাথে সাথে আরো উল্লেখ করতে হয়, হযরত নূহ আলাইহিস সালামের সময়কার কাফিরেরা কিন্তু মুসলিম সংস্কৃতি গ্রহণ করে মানুষকে ধোঁকা দেয়নি, যা এই হিন্দুরা দিয়েছিল। সুতরাং সে হিসাবে এই হিন্দুগুলো মহাপ্লাবনে ডুবে মরা কাফিরদের চেয়েও অনেক বেশি খারাপ।
সে কারণে তাদের জন্য আল্লাহ পাক ও উনার রসূল হুযূর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘গাযওয়ায়ে হিন্দ’ এর ফয়সালা দিয়েছেন, কারণ উনারা জানেন এই হিন্দুরা কখনো মুসলমান হবে না। ধ্বংসই এদের একমাত্র নিয়তি হতে পারে।
Post a Comment