বিদ্যানন্দের ঘটনা বলার আগে সম্ভবত একবছর আগে নুহাশ হুমায়ুনের বানানো একটি মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপনের কথা স্মরণ করিয়ে দিই। বিজ্ঞাপনটির কাহিনী ছিল পাহাড়ি বংশোদ্ভূত এক মুসলমান কিশোরকে নিয়ে, যে পাহাড়ূী অঞ্চলে অমুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় থেকে আযান দেয়, নামায পড়ে, রোযা রেখে ইফতার করে ইত্যাদি। ইসলামবিদ্বেষীরা সেই বিজ্ঞাপনকে পুঁজি করে দাবি করে, পাহাড়ে আযান-নামায পড়া দেখিয়ে ‘সাংস্কৃতিক আগ্রাসন’ চালানো হচ্ছে!

এই অভিযোগ ওঠার প্রায় সাথে সাথেই নুহাশ হুমায়ুন ক্ষমা চেয়ে বিজ্ঞাপনটি প্রত্যাহার করে নেয়। এখানে একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায় যে, পুরো বিষয়টিই সাজানো, যা মূলত মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ বৈ কিছু নয়। পাহাড়ে মুসলিম বাঙালিদের জনবসতি, পাহাড়িদের মধ্যে ইসলাম প্রচারকে অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করতেই এই বিজ্ঞাপন বানানো এবং পরবর্তীতে সেই বিজ্ঞাপনের জন্য ‘ক্ষমা প্রার্থনা’র রিভার্স গেম খেলা হয়েছে।

ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইহুদীরাও একই কাজ করত, তারা দ্বীন ইসলাম গ্রহণের অভিনয় করে পরে ইসলাম অস্বীকার করত। বর্তমান সময়ে ‘এক্স মুসলিম’ নামে ফেসবুকে কিংবা মিডিয়ায় যে কার্যক্রম দেখা যায়, তা কিন্তু সেখান থেকেই এসেছে। এসব রিভার্স গেম/ফলস ফ্ল্যাগ এর শুরুতে তাদেরই দলের কেউ ইসলাম গ্রহণ করে, জিহাদ করার নামে আইএসে যোগ দেয় কিংবা করোনায় ত্রাণ দেয়ার নামে কিছু হিন্দু যোগাড় করে তাদের ইসলাম গ্রহণের আহবান জানায়। পরে তারা ইসলাম ত্যাগ করে কিংবা ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দেয়ার জন্য ক্যামেরার সামনে ক্ষমা প্রার্থনা করে, যেন মুসলমানের মধ্যে জিহাদ করা কিংবা ইসলামের দাওয়াত দেয়ার বিষয়ে লজ্জা-সংকোচের সৃষ্টি হয়। মুসলমান ডিমরালাইজড হয়ে যায়।

বিদ্যানন্দের বিষয়টিও তদ্রুপ। পাশ্ববর্তী ভারতে আমরা দেখতে পাচ্ছি, মুসলমানদের ‘করোনা ভাইরাস’ ছড়ানোর নাম দিয়ে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বয়কট করা হচ্ছে, জরুরী চিকিৎসাসেবা না দিয়ে প্রেগনেন্ট মুসলিম মহিলাদের বাচ্চা মেরে ফেলা হচ্ছে, ৩ বছরের অসুস্থ বাচ্চাকেও মুসলমান হওয়ার কারণে হাসপাতালে যেতে না দিয়ে এম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে দিচ্ছে সেখানকার পুলিশ। এমতাবস্থায় মুসলমানদের মধ্যে হিন্দুদের বয়কট করার যে একটি মানসিক দৃঢ়তা, তা আস্তে আস্তে তৈরী হচ্ছে। সেই মানসিক দৃঢ়তা থেকে যেন মুসলমানরা সরে আসে, তারা যেন মনস্তাত্ত্বিকভাবে দুর্বল হয়ে যায়, সে জন্যই বিদ্যানন্দকে দিয়ে হিন্দু বরখাস্ত করার এই রিভার্স গেম খেলানো হচ্ছে।

রিভার্স গেম/ফলস ফ্ল্যাগের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য, সাজানো ইসলামিস্ট/জিহাদি ব্যক্তিটির মধ্যে দুর্বলতা প্রকাশ করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। মূলত তাকে মাঠে নামানো হয়-ই দুর্বলতা প্রকাশ করার জন্য, তাকে ইসলাম গ্রহণ করে/ইসলামের দাওয়াত দিয়ে স্বীকারোক্তি দিতে হবে যে দেখো আমি ইসলাম গ্রহণ করে/ইসলামের দাওয়াত দিয়ে ভুল করেছি, যাতে করে অন্যরা নিরুৎসাহিত হয়। বিদ্যানন্দের কিশোর কুমার দাসকে সরানোর সেই পোস্টটিতেও লাইনে লাইনে দুর্বলতা প্রকাশ করা হয়েছে, বারবার অনুশোচনা প্রদর্শন করা হয়েছে। এমতাবস্থায় যে মুসলমানটি বর্তমান পরিস্থিতিতে হিন্দু বয়কটের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছে, সে নিরুৎসাহিত হবে এবং হিন্দুরাও বাধাহীনভাবে তাদের ইসলামবিদ্বেষী কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে।

পাশ্ববর্তী ভারতে উগ্র হিন্দুদের মুসলিম বয়কট ও মধ্যপ্রাচ্যে হিন্দু বয়কটের এই সময়টিতে ড্যামেজ কন্ট্রোলের জন্যই বিদ্যানন্দ থেকে কিশোর কুমার দাসের পদত্যাগের রিভার্স গেম খেলা হচ্ছে, যেটাকে পুঁজি করে ভারতের ফেসবুকেও ইতিমধ্যে মুসলিম বয়কটের প্রচার বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও আরেকটি বড় কারণ হলো, এই রমযান মাসে বিদ্যানন্দ যাকাত কালেকশনে নেমেছে এবং স্বাভাবিকভাবেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিন্দু হলে সেই প্রতিষ্ঠানে যাকাত দিতে কেউ আগ্রহী হবে না।
ফলস ফ্ল্যাগরা যে মাঠ দখল করে মুসলমানদের বিভ্রান্ত ও একঘরে করতে পারে, এর মূল কারণ ট্রু ফ্ল্যাগের অনুপস্থিতি। ফলস ফ্ল্যাগ তো চাইবেই, ইসলাম গ্রহণ করে ফের ইসলাম ত্যাগ করে কনফেশন দিতে, কিন্তু ট্রু ফ্ল্যাগের উপস্থিতি থাকলে সেই অভিনয়ে মুসলমানরা বিভ্রান্ত কিংবা ডিমরালাইজড হবে না।

Post a Comment

 
Top