নাস্তিকেরা প্রায়শ নোবেল প্রাইজের তালিকা অনুযায়ী দাবি করে থাকে, মুসলমানরা যেহেতু নোবেল প্রাইজ কম পেয়েছে, ইহুদীরা বেশি পেয়েছে, সেহেতু বিজ্ঞান-সাহিত্যে মুসলমানদের কোনো অবদান নেই।

 

কিন্তু আমি বলব, কোনো মুসলমানই আজপর্যন্ত নোবেল প্রাইজ পায়নি। বিসিএস সাধারণ জ্ঞানের বইতে প্রশ্ন আসে, প্রথম মুসলিম নোবেল প্রাইজ বিজয়ী কে? আনোয়ার সাদাত। কেন পেয়েছে? আরব দেশগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য।

 

আবদুস সালাম তার সূত্র ফর্মুলেট করেছিল ১৯৬৮ সালে, তাকে নোবেল প্রাইজ দেয়া হয় ১৯৭৯ সালে। মাঝখানের ১১ বছর সময়কালে একটি ঘটনা ঘটে গিয়েছিল, তা হলো জুলফিকার আলী ভুট্টো রাষ্ট্রীয়ভাবে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করায় আবদুস সালাম ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান ছেড়ে স্বেচ্ছানির্বাসনে যায়।

 

সুতরাং এই পুরষ্কার কি আদৌ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের জন্য দেয়া হয়েছে? নাকি দেয়া হয়েছে পশ্চিমাদের দ্বারা আবদুস সালামকে কাদিয়ানী আইকনহিসেবে তুলে ধরার জন্য?

 

মূলত নোবেল প্রাইজ কখনোই প্রতিভা বিচারের স্বীকৃতি নয়, বরং এটি নির্ভেজাল একটি রাজনৈতিক পুরষ্কার। আসিফ মহিউদ্দীনদের মতো নাস্তিকেরা যে নোবেল প্রাইজ দিয়ে বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষতা বিচার করতে যায়, এর কারণ তারা বিজ্ঞানের কিছুই বোঝে না। এরকম নজির রয়েছে যে, রাজনৈতিক গুরুত্বের বিচারে ফালতু বিজ্ঞানী/সাহিত্যিককে নোবেল প্রাইজ দেয়া হয়েছে, এরপর সেই গুরুত্ব হারিয়ে গেলে তাকে প্রাইজদাতারাই যাচ্ছেতাই অপমান করেছে।

 

“Gradually, the mood in the west which has derived pleasure and relief of his writings, wore off, and he came to be regarded as a provider of more or less artificial prettiness. Thus an englishman writing some years ago could draw the following comparison between him and Iqbal: “Iqbal’s Secret of Self, great philosophical poetry with a biting edge which makes tagore’s poems look as soft and spiritless as ganges mud.” (from the archives of nirad c, page 399)

 

অর্থাৎ নীরদ সি চৌধুরীর বক্তব্য অনুযায়ী, পশ্চিমে রবীন্দ্রের লেখা নিয়ে যে আনন্দ-উচ্ছাস শুরুতে ছিল, তা স্তিমিত হয়ে আসতে থাকে এবং একপর্যায়ে রবীন্দ্র সাহিত্যকে artificial বা কৃত্রিম হিসেবে বিবেচনা করা হতে থাকে। এক ইংরেজ তার লেখায় আল্লামা ইকবালের Secret of Self বা আসরারে খুদীর অনুবাদের সাথে রবীন্দ্রের কবিতার তুলনা করতে গিয়ে উল্লেখ করে যে, ‘আসরারে খুদীমহান দার্শনিক কাব্য, যার ছত্রগুলো তরবারির ন্যায় ধারালো। বিপরীতে রবীন্দ্রের কবিতা গঙ্গা তীরের আবর্জনার ন্যায় নিষ্প্রাণ।

 

অথচ আল্লামা ইকবালকে কিন্তু নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়নি। এখনও উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে আল্লামা ইকবাল, ফয়েজ আহমদ ফয়েজ অনেক পরিচিত সাহিত্যিক, সে তুলনায় রবীন্দ্রের নামই শোনা যায় না। নোবেল প্রাইজ নিয়ে একটি ধারণা রয়েছে যে, সবচেয়ে ভালো বিজ্ঞানী কিংবা সাহিত্যিককে তাদের নিজ নিজ ফিল্ডে নোবেল প্রাইজ দেয়া হয়, এই ধারণাটি ভুল, সম্পূর্ণই ভুল। নোবেল পুরষ্কারের তালিকায় যেসব ইহুদীদের দেখিয়ে আসিফ মহিউদ্দীনরা ফুটানি মারে, তাদের তুলনায় বহু উঁচু লেভেলের মুসলিম বিজ্ঞানী দুনিয়াতে রয়েছে। তাদেরকে বিশ্ববাসী চেনে না মিডিয়া ফোকাস না থাকার কারণে।

 

মিডিয়া ফোকাস দিয়ে তিলকে তাল বানানো যায়, সাধারণ বিষয়কে বড় করে তুলে ধরা যায়। আমি এই পোস্টটি লেখা পর্যন্ত গোটা বিশ্বে ২৭,১৫৫ টি করোনা ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স তৈরী করা হয়েছে, যার মধ্যে একটি হলো বাংলাদেশের হিন্দু বাপ-বেটির তৈরী করা জিনোম সিকোয়েন্সটি। সেটা নিয়েই চলছে মিডিয়ায় বিরাট মাতামাতি, যা পাবলিককে বিভ্রান্ত করে হিন্দুর মুখাপেক্ষী করা বৈ কিছু নয়।

 

উল্লেখ্য, প্রতি বছরে ৬টি ডিসিপ্লিনে নোবেল কমিটি কর্তৃক মোট ৫৭ কোটি টাকার মতো পুরষ্কার দেয়া হয়। এরকম একটি পুরষ্কার অনায়াসে মুসলমানরা দিতে পারে, কিন্তু তার জন্য তো সাম্প্রদায়িক চেতনা দরকার। খ্রিস্টানরা নোবেল প্রাইজ দেয় প্রতিপক্ষের সমাজে তাদের দালালদের পুরষ্কৃত করার জন্য। পশ্চিমবঙ্গের আনন্দ পুরষ্কারের টোপ দিয়ে এদেশে হিন্দুদের দালাল তৈরী করা হয়। সেরকম মানসিকতা তো মুসলমানদের নেই, যেহেতু তাদের সাম্প্রদায়িকতা নেই।

 

সাম্প্রদায়িকতার অভাবে মুসলমানদের কিছুই নেই, নেতৃত্ব, মিডিয়া, পুরষ্কার, কর্তৃত্ব, কিছুই নেই। আসলে সাম্প্রদায়িকতার অভাবে মুসলমানদের সবকিছু থেকেও নেই। অনেকে বলে থাকে, মুসলমানদের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার হ্যানত্যান করতে হবে, তারা আসলে মূল সমস্যা অনুধাবনে ব্যর্থ। পাকিস্তান ৪র্থ জেনারেশনের জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান বানায়, ভারত একটা রাইফেলও বানাতে পারে না। তারপরও পাকিস্তান ব্যাকফুটে আছে কারণ হিন্দুরা সাম্প্রদায়িকতার যুদ্ধে মুসলমানদের তুলনায় অনেক এগিয়ে।

 

মুসলমানদের সবার আগে সাম্প্রদায়িক হতে হবে, তাহলেই বাকি সবকিছুতে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। সাম্প্রদায়িকতা হচ্ছে ঐ কবিতার সাঁতার শেখার মতো, যা ব্যতীত হাজারো পয়সা টাকা যোগ্যতা থাকলেও তার ষোল আনাই মিছে হয়ে যায়। 

Post a Comment

 
Top