·
==
গত কয়েকদিন আগে, ভারতের এক কথিত ‘মর্দে মুজাহিদ’ এর একটি স্ক্রীনশট শেয়ার করেছিলাম। সে এমন এক হিন্দু মহিলার পোস্ট শেয়ার করেছিল, যে কিনা ২০১৬ সালের দিকে ফেসবুকে সরাসরি লিখেছিল-

//এসব কি অসভ্যতা? আমাকে বাংলাদেশের কট্টরপন্থী মৌলবাদী মুসলমানদের সব হাবি জাবি গ্রুপ গুলোয় ঈশ্বর জানেন কি করে জয়েন করানো হয়েছে। ফিড আসছে। আর ভয়ানক সব পোস্ট পড়ে শিউরে উঠছি। কোনটা বোরখা পড়ার আবশ্যকতা নিয়ে পোস্ট। কোনটা বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়া বিষয়ক পোস্ট। আমি হিন্দু নাস্তিক। মরার পর শ্মশানে যাব। ইসলাম ধর্ম আমি সহ্য করতে পারি না। এই ধর্ম আধুনিক পৃথিবীর কাছে অভিশাপ।//

স্বাভাবিকভাবেই এই মহিলার পোস্ট সে কেন শেয়ার করলো, এ নিয়ে ঐ ভারতীয় মর্দে মুজাহিদের সাথে কথা কাটাকাটির মাঝে স্ট্যাটাসে এসে হাজির হয় ঐ উগ্র হিন্দু মহিলা, এসে বলে যে, “আপনারা হয়তো জানেন না যে আমার জামাই মুসলমান”! ঐ মর্দে মুজাহিদও তখন দ্বিগুণ উৎসাহে বলে উঠে, ইনশাআল্লাহ আমরা আপনার পাশে ছিলাম, আছি, থাকব!

বিষয়টি দেখে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগবে যে, যে মহিলা দ্বীন ইসলামকে এতো ঘৃণা করে, সে কেন মুসলমান বিয়ে করতে যাবে? ঐ মহিলার ফেসবুক একাউন্ট চেক করলাম। প্রসঙ্গত বলে রাখা দরকার যে, ঐ মহিলা একজন লেখিকা ও তার বেশকিছু বই পশ্চিমবঙ্গের আনন্দ প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে, অর্থাৎ সে অপরিচিত কেউ নয়। বাংলাদেশে কোনো পরিচিত লেখক বা অভিনেতা যদি বলত, ‘আমি হিন্দুধর্মকে সহ্য করতে পারি না’ তাহলে যে কি হতো চিন্তা করা যায়?

একটি পোস্টে দেখলাম ঐ উগ্র হিন্দু মহিলাকে একজন শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, “বাংলাদেশী ছেলে বিয়ে করে আপনিতো আমাদের আরো কাছের হয়ে গেলেন। অনেক অনেক শুভকামনা।”

অর্থাৎ ঐ মহিলার জামাই শুধু মুসলমান নামধারী নয়, সে বাংলাদেশীও! তার জামাইকে নিয়ে একটি স্ট্যাটাসে সে লিখেছে, “আমার বরকে আমার ভীষণ পছন্দ”।

আবার আরেকটি স্ট্যাটাসে লিখেছে, “এই যে, যারা বিবাহিত, স্বামী-স্ত্রী এক সঙ্গে স্নান করুন।”

উগ্র হিন্দুদের মধ্যে এই মুসলিম-জামাইপ্রীতি শুধু এই মহিলার ক্ষেত্রে নয়, বরং বিজেপির প্রথমসারির সব নেতার ক্ষেত্রেই দৃষ্ট হয়। বিজেপি নেতা সুব্রাহ্মণিয়াম স্বামী, কট্টর হিন্দু যে বাংলাদেশকে ভাগ করার কথা সবসময় বলে। তার মেয়েজামাই মুসলমান। শুধু তাই নয়, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা অশোক সিংঘলের মেয়েজামাই, বিজেপি নেতা মুরলী মনোহর যোশীর মেয়েজামাই, বাল ঠাকরের ভাইঝি-জামাই এরা সবাই মুসলমান।

এখানে মনস্তত্ত্ব বা সাইকোলজিটা কি? আমার কাছে বিষয়টি দেখে ‘ইত্যাদি’ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের একটি পর্বের কথা মনে পড়ে যায়। এক হোটেল মালিক, সে তার নিজের হোটেলে না খেয়ে পাশের হোটেলে ভাত খেতে যায়, কারণ তার হোটেলের খাবারে ভেজাল দেয় সে।

বঙ্গভঙ্গের সময়ে রবীন্দ্রের ভাইঝি সরলা, উগ্র হিন্দু যুবকদের সংগঠিত করার কাজ করত। সে তার একটি চিঠিতে ঐসব হিন্দু যুবকদের সম্পর্কে বলেছিল যে, তাদের স্বভাবচরিত্র রীতিমতো পশুকেও হার মানায়।

বৃষ্টি কর্মকার নামে একটা নিক থেকে কয়েকবছর আগে লিখেছিল, আমি আমার জীবনে যতো লুইচ্চা, হারামি, ইতর আর পারভার্ট ছেলে দেখছি তার ম্যাক্সিমামই হিন্দু ছেলে।

অর্থাৎ সোজা কথায়, উগ্র হিন্দু নেতারা সেই ফ্যাক্টরী চালায়, যেখান থেকে ইতর, পারভার্ট ছোকরা-যুবক বের হয়। ফ্যাক্টরীর মালিক হিসেবে সে তার প্রোডাক্ট সম্পর্কে ধারণা রাখে বিধায় তার পরিবারের সদস্যদের সেই প্রোডাক্ট সে গছিয়ে দেবে না।

এজন্যই তারা তাদের মেয়েদের মুসলমান ছেলেদের সাথে বিয়ে দেবে, আর বাইরে ‘লাভ জিহাদ’ বলে গলা ফাটাবে।।   [Dastaar Rajdarbaar]

Post a Comment

 
Top