“যারা এবার ইসলামবিদ্বেষী চেতনা বহন করে গাল্লিপলিতে আসবে, তাদেরকে কফিনে ভরে তাদের নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে যেমনটি তাদের পরদাদাদের পাঠানো হয়েছিল।”

“কেন তারা অতদূর থেকে যুদ্ধ করতে এই তুরস্কে এসেছিল? কি ছিল তাদের স্বার্থ? এর কারণ কি এই নয় যে, আমরা মুসলমান আর তারা খ্রিস্টান।”

সিংহপুরুষ এরদোয়ান অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে উপরোক্ত হুঙ্কারগুলো না ছাড়লে মসজিদে হামলার মানসিকতার উদ্ভব কোথায়, তা জানা মোটেই সম্ভব হতো না। কারণ গতানুগতিক মিডিয়া তা জানাবে না, আর নিউজিল্যান্ডের মুসলমান নামধারী ভেড়াগুলো জানলেও মুখ ফুটে বলার সুযোগ নেই। তারা গাধার সামনে মূলা ধরার মতো জেসিন্ডার মাথার একটুকরো কাপড়ের বন্দনায় ব্যস্ত।

ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মীয় কেন্দ্র যেমন ভ্যাটিকান, ঠিক তেমনি অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের ধর্মীয় কেন্দ্র ছিলো কনস্টান্টিনোপল। ১৪৫৩ সালে এক ঐতিহাসিক বিজয়ের দ্বারা শহরটি তুর্কী উসমানীয় সালতানাতের অধিকারে আসে, শহরটির নাম হয় ইস্তাম্বুল। তখন থেকেই ক্রুসেডাররা পাখির চোখ করেছে ইস্তাম্বুলকে, তাকে ফের খ্রিস্টানদের অধিকারে আনার সুযোগ সৃষ্টি হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে। সেই বিশ্বযুদ্ধে গাল্লিপলিতে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী অবতরণ করে ইস্তাম্বুল দখলের ক্রুসেডে, তাদের সাথে ছিল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের যৌথ সেনাবাহিনী, সংক্ষেপে যাদেরকে বলা হতো আনজাক (ANZAC, australian and new zealand Army Corps)

কিন্তু তুরষ্কের উসমানীয় সেনাবাহিনী তাদের হারিয়ে দেয়, ব্রিটিশ ও আনজাক সেনারা বাধ্য হয় পিছু হটতে। গাল্লিপলি যুদ্ধে ব্রিটিশ ও আনজাক যৌথ সেনাবাহিনীর ৫৬০০০ সৈন্য নিহত হয়, যার মধ্যে ৮০০০ এর মতো ছিল অস্ট্রেলীয় ও ২০০০ এর কিছু বেশি ছিল নিউজিল্যান্ডের। (https://en.wikipedia.org/wiki/Gallipoli_Campaign)

উইকিপিডিয়াতে রয়েছে যে- Though the Gallipoli campaign failed to achieve its military objectives of capturing Constantinople and knocking the Ottoman Empire out of the war, the actions of the Australian and New Zealand troops during the campaign bequeathed an intangible but powerful legacy. The creation of what became known as an "Anzac legend" became an important part of the national identity in both countries. This has shaped the way their citizens have viewed both their past and their understanding of the present. The heroism of the soldiers in the failed Gallipoli campaign made their sacrifices iconic in New Zealand memory, and is often credited with securing the psychological independence of the nation. (https://en.wikipedia.org/wiki/Anzac_spirit)

অর্থাৎ “যদিও গ্যালিপল্লি অভিযান তার উদ্দেশ্য সাধনে ব্যর্থ হয়েছিল, তথা ‘কনস্টান্টিনোপল উদ্ধার’ এবং যুদ্ধ থেকে উসমানীয় সালতানাতের বিতাড়ন, তবুও অস্ট্রেলিয় ও নিউজিল্যান্ডের সেনাদের কর্মকাণ্ড তাদের জনগণের মনে এক কিংবদন্তী চেতনার সঞ্চার করে। যার নামকরণ হয় ‘আনজাক লিজেন্ড’, যে চেতনা উভয় দেশের জনগণের আত্মপরিচয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। এই আনজাক চেতনাই উক্ত দেশের জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি গঠন করে দেয়, যে দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা তারা অতীতের ইতিহাস পর্যালোচনা করবে এবং বর্তমানকে বিচার করবে। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডের জাতীয় চেতনায় এটি আইকনিক বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।”

উল্লেখ্য, প্রতি বছর ২৫শে এপ্রিল উক্ত উভয় দেশে আনজাক দিবস পালিত হয়। শুধু তাদের নিজেদের দেশে নয়, প্রতি বছর খোদ তুরষ্কের গাল্লিপলিতে গিয়েও প্রায় ১ হাজারের বেশি অস্ট্রেলিয় ও নিউজিল্যান্ডের খ্রিস্টান উক্ত দিবসটি পালন করে থাকে। (https://en.wikipedia.org/wiki/Anzac_Day)

ব্রেন্টন টারান্ট তার বন্দুকে অতীতের যত খ্রিস্টান নেতাদের নাম লিখেছে, সেগুলো প্রায় সবগুলোই উসমানীয় খিলাফতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা অর্থোডক্স খ্রিস্টান সেনাপতিদের। গাড়িতে বসে সে যেসব গান বাজাচ্ছিল, যেমন ‘রিমুভ দ্য কাবাব’ এটি ছিল সার্বীয় খ্রিস্টান সন্ত্রাসীদের দ্বারা তুর্কী মুসলিম নির্মূল করার গান। অর্থাৎ ব্রেন্টন টারান্টের মুসলিমবিদ্বেষী চেতনা মূলত সার্বীয় ও গ্রিসের অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের তুর্কীবিরোধী চেতনার সমতুল্য, যা এসেছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আনজাক চেতনা থেকে। যে চেতনার বশবর্তী হয়ে বহু দূরের অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড থেকে খ্রিস্টানরা মাসের পর মাস পথ পাড়ি দিয়ে জাহাজে করে এসেছিল কনস্টান্টিনোপল ছিনিয়ে নিতে, তুর্কীদের হত্যা করতে।

এজন্যই এরদোয়ান হুঙ্কার দিয়েছেন যে, যদি এবার কোনো অসি কিংবা কিউই খ্রিস্টান তাদের আনজাক দিবসে গাল্লিপলিতে আসে তার ইসলামবিদ্বেষী আনজাক চেতনাকে সঙ্গে করে, তাকে কফিনে ভরে তার পূর্বপুরুষদের ন্যায় দেশে ফেরত পাঠানো হবে। উল্লেখ্য, মিডিয়ার প্ররোচনায় ও মূর্খতাবশত অনেকেই অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে এরকম পার্থক্য করছে যে, “হামলাকারী অস্ট্রেলিয়ান, সে নিউজিল্যান্ডের নয়। অস্ট্রেলিয়ানরা রেসিস্ট, কিউইরা ভালো। দেখ না কিউই প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা কেমন ‘হিজাব’ চড়িয়েছে!”

মূর্খরা জানে না যে, যেই আনজাক চেতনার বশবর্তী হয়ে ব্রেন্টন টারান্ট মুসলিম হত্যা করেছে, তা কেবল অস্ট্রেলিয়ার নয়। এটি নিউজিল্যান্ডেও পালিত হয়। মূলত অস্ট্রেলিয় নাগরিকের দ্বারা নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলার ঘটনাটি উভয় দেশের যৌথ প্লট। বাহিরে তারা আলাদা পরিচয় বহন করেছে, যেন একে অপরকে দোষারোপ করে বোকা মুসলমানদের বিভ্রান্ত করা যায়।

জেসিন্ডা কি তার দেশের ছুটির তালিকা থেকে ‘আনজাক দিবস’ বাদ দেবে? ঘোষণা দিয়ে প্রত্যাখান করবে শত বছর আগে তুর্কী মুসলিম হত্যার, কনস্টান্টিনোপল দখলের ক্রুসেডীয় আনজাক চেতনাকে? নিউজিল্যান্ডের জনগণ কি তা মেনে নিবে? যদি তা না হয়, তবে মুসলমানরা জেনে রাখুক যে এই ‘হিজাব’ নামক সামান্য কাপড়ের টুকরার দ্বারা পরিস্থিতি পরিবর্তন হবার নয়। ক্রুসেডের সন্ত্রাসী চেতনাকে ধারণ করে যেভাবে গোটা ইউরোপে সিরিয়ার শরনার্থীদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, মহিলা ও শিশুদের ধরে ধরে পতিতালয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে, ঠিক সেভাবেই নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে কেন্দ্র করে অচিরেই তা হতে যাচ্ছে।

Post a Comment

 
Top