‘স্টকহোম সিনড্রোম’ একধরণের মানসিক রোগ, আভিধানিক অর্থে যার দ্বারা অপহরণকারীর প্রতি অপহৃতের ভালোবাসা জন্মানোকে বোঝানো হয়। এছাড়াও হামলাকারীর প্রতি ভিকটিমের, অত্যাচারিতের প্রতি অত্যাচারীর ভালোবাসা জন্মানোকেও বলা হয় ‘স্টকহোম সিনড্রোম’। এই স্টকহোম সিনড্রোমের চূড়ান্ত পর্যায়ে ভিকটিম জাতি তার স্বজাতির উপর চালিত অত্যাচারকে প্রতিবাদের ইস্যুতে পরিণত না করে তাকে অত্যাচারীর কৃপালাভের হাতিয়ার বানায়।

এরকম ঘটনা প্রচুর দেখা যায় হিন্দুদের গোলামিতে অভ্যস্ত ভারতীয় মুসলমানদের ক্ষেত্রে। খুশবন্ত সিংয়ের আত্মজীবনীতে উল্লেখ রয়েছে, সে চুরাশির দাঙ্গায় যখন শিখ হত্যার প্রতিবাদে রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘পদ্মভূষণ’ বর্জন করেছিল, তখন ভারতীয় সেনা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত শিখদের ‘স্বর্ণমন্দির’ এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ ডিসিপির নাম ছিল আসাদ ফারুকী। সেই পুলিশ ডিসিপি খুশবন্ত সিংয়ের সাথে দেখা করে তাকে প্রশ্ন করল-
“এই সামান্য বিষয়ে আপনি কেন সরকারের উপর এতো ক্ষিপ্ত হয়ে গেলেন?”

খুশবন্ত সিং তখন আশ্চর্য হয়ে বলল, “সামান্য বিষয়! আপনি জানেন একটিমাত্র সরকারি অভিযানে প্রায় ৫,০০০ শিখ নিহত হয়েছে?”

“তাতে কি হয়েছে? হিন্দুরা তো প্রতি বছরই এই পরিমাণ মুসলমান হত্যা করছে।” আসাদ ফারুকীর নির্লিপ্ত উত্তর।

খুশবন্ত সিং এবার আর নিজেকে সামলে রাখতে পারল না। রীতিমতো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বলল “আপনাদের মুসলমানদের মার খেতে খেতে তো অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।”

কিন্তু তাতে ‘মুসলমান’ পুলিশ অফিসারের কোন প্রতিক্রিয়া হতে দেখা গেল না। “ইনশা আল্লাহ, শিখদেরও অভ্যাস হয়ে যাবে” বলে সে খুশবন্ত সিংকে উত্তর দিল। (http://bit.ly/2Oirqjl)

সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের ঘটনাটির পর নিহত মহিলাটির বেঁচে যাওয়া স্বামীর ক্ষমা করে দেওয়া, কিংবা নিউজিল্যান্ডের প্রতি সেখানকার মুসলমানদের ভালোবাসা কমবে না এরকম সংবাদে অনেকেই নিউজিল্যান্ডের মুসলমানদের নিয়ে গর্ব করছে। কারণ মুসলমানরা জানে না কোন বিষয়টি নিয়ে গর্ব করতে হয়, আর কোন বিষয়টি নিয়ে লজ্জিত হতে হয়। কোনো সন্দেহ নেই, ৫০ জন মুসল্লী নিহত হওয়ার পরও সেটাকে প্রতিবাদে রূপান্তরিত না করে তাকে উল্টো নিউজিল্যান্ডের প্রতি ভক্তি প্রদর্শনের হাতিয়ার করেছে সেখানকার স্থানীয় মুসলমানরা, কারণ তারা ‘স্টকহোম সিনড্রোম’ এ আক্রান্ত। আর এই ‘স্টকহোম সিনড্রোম’-কেই কতিপয় গণ্ডমূর্খ "ক্ষমা মহৎ গুণ, মুসলমানরা মহৎ বিধায় ক্ষমা করে দিয়েছে" বলে ঠাওড়াচ্ছে!

না এটি মহত্ব নয়, বরং দুনিয়াবী লোভ-লালসা-নীচতা-গোলামির চেতনা থেকে এধরণের আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। কারণ প্রতিবাদ করলে কিছু না কিছু ত্যাগ করতে হয়। বিপরীতে এই কথিত ‘মহত্ব’ কিংবা ‘দেশপ্রেম’ প্রদর্শন করা হয় দুনিয়াবী কলাটা-মুলাটা পাবার লোভে, যা থেকে খ্রিস্টান সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত মহিলার প্রতিবন্ধী স্বামীটিও মুক্ত নয়।  নিউজিল্যান্ডের স্থানীয় মুসলমানরা চিন্তা করছে, যদি এই সুযোগে ভিসার মেয়াদটা বাড়িয়ে নেওয়া যায়, চামে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। চুরাশির সময়কার ঐ পুলিশ আসাদ ফারুকী চিন্তা করেছিল, যদি মুসলিম হত্যায় সমর্থন দিয়ে হিন্দু রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছ থেকে পুরষ্কারস্বরূপ প্রমোশন বাগিয়ে নেওয়া যায়।

মুসলমানদের এই নীচ-হীন পর্যায়ে উপনীত হওয়া প্রসঙ্গেই প্রসঙ্গেই হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে “দস্তরখানার উপর যেমন খাদকরা ঝাঁপিয়ে পড়ে, তেমনিভাবে শীঘ্রই বিভিন্ন জাতি তথা কাফিররা তোমাদের মুসলমানদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। একথা শুনে উপস্থিত একজন বললেন, সেদিন আমাদের সংখ্যা স্বল্পতার কারণেই কি এটা হবে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- না, বরং সে সময় সংখ্যায় তোমরা অনেক বেশি হবে, কিন্তু তোমরা হবে স্রোতে ভাসমান ফেনার মতো। তোমাদের বদ আমলের কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের প্রতি ভীতি উঠিয়ে নিবেন এবং তখন তোমাদের অন্তরে ওহান প্রবেশ করবে। তখন জিজ্ঞাসা করা হলো- ওহান কী, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- ওহান হলো দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং মৃত্যুর প্রতি অনীহা।”

Post a Comment

 
Top