(১)
বিভিন্ন মিডিয়া ও বইপত্রে গুজরাট দাঙ্গায় নিহতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হিসেবে সবার আগে এহসান জাফরি’র নাম তুলে ধরা হয়। এই এহসান জাফরি ছিল উর্দু ভাষার প্রথমসারির কবি, তার বন্ধুবান্ধবরাও ছিল ইন্টেলেকচুয়াল সার্কেলের। উল্লেখ্য, এইশ্রেণীর হিন্দুদেরকে অনেকে ‘ভালো হিন্দু’ হিসেবে তুলে ধরে।
কিন্তু এসব ভালো হিন্দুরা এহসান জাফরির নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর কোনো প্রতিবাদ করেনি। সে প্রসঙ্গে এহসান জাফরির মেয়ে একটি চিঠিতে লিখেছিল- “যে শহরকে আপনি আপনার বাড়ি মনে করেন, সেই শহর এবং যাকে আপনি দেশ বলে মনে করেন- সেই দেশ আপনার পাশে দাঁড়াবে না । যেমন দাঁড়ায়নি আমার বাবা এহসান জাফরি ও মা জাকিয়া জাফরির পাশে । তার দীর্ঘদিনের বন্ধুরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল । ন্যায় বিচারের দাবী তুলেনি, কেউ একবার প্রতিবাদও করেনি । অথচ কতবার এই মানুষগুলিকে দেখেছি বাবার টেবিলে বসে খাওয়া দাওয়া করতে । কত মিটিং-মিছিলে এক সাথে হেঁটেছেন । একসাথে উদযাপন করেছেন ঈদ, হোলি, দিওয়ালীর মত উৎসব । একসাথে বসে সিমুই, লাচ্ছা, বিরিয়ানি খেয়েছেন । তখন মনে হত এরা কত আপনজন । কিন্তু গুজরাট দাঙ্গার সময় বুঝলাম পাশে কেউ নেই ।”
উল্লেখ্য, ভারতের লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যভিত্তিক বিধানসভার নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এসব জায়গায় বিজেপিকে সরিয়ে কংগ্রেস জিতেছিল। তখন এক ভারতীয় মুসলমানের স্ট্যাটাস দেখেছিলাম এরকম-“#সব_হিন্দু_খারাপ_নয়। আমাদের ভালো হিন্দু ভাইয়েরাই বিজেপিকে সরানোর জন্য যথেষ্ট, আমাদের ভারতীয় মুসলমানদের শুধুশুধু বিজেপির বিরোধিতা করা উচিত নয়।”
অথচ সেই কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানেই সম্প্রতি গরুর জন্য পিটিয়ে মারা পেহলু খানের প্রত্যেকটি খুনিকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।
(২)
সাংবাদিক ইলিয়াসের একটি ভিডিওতে তাকে দেখলাম আক্ষেপ করতে, প্রিয়া সাহারা দেশবিরোধী কাজ করল, ইসকনিরা মুসলমান বাচ্চাদের প্রসাদ খাওয়ালো, অথচ কারো কোনো বিচার হলো না!
কিন্তু বিচার হবে কিভাবে? যদি মুসলমানরা ‘ভালো হিন্দু’দের নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে এবং তাদের পেয়ারের ‘ভালো হিন্দু’রা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এই আশঙ্কায় কোনোরূপ বাস্তব পদক্ষেপ নিতেই কুণ্ঠাবোধ করে?
কিছুদিন আগে ফেসবুকের একটি জনপ্রিয় পেজ থেকে আহবান করা হয় যে, ভারতে টাকা পাচার রুখতে আপনারা হিন্দুদের চাকরি দেবেন না, হিন্দুদের থেকে অর্থের বিনিময়ে কোনোরূপ সেবা (ডাক্তার উকিল থেকে শুরু করে মুচি-নাপিত পর্যন্ত) গ্রহণ করবেন না। এতে করে যা হলো, কমেন্টবক্সে ঐ পেজের নিয়মিত লাইকাররা ‘ভালো হিন্দু’দের পাছা বাঁচাতে নানাভাগে বিভক্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া শুরু করে দিল। না #সব_হিন্দু_খারাপ_নয়, সবাইকে চাকরিচ্যুত করা যাবে না! একজন পোস্টদাতাকে উদ্দেশ্য করে লিখল, এটা আপনার গত সাড়ে তিনবছরের মধ্যে সবচেয়ে সাম্প্রদায়িক পোস্ট!
এই যদি হয় অবস্থা, সেক্ষেত্রে কী করে প্রিয়া সাহাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব? প্রিয়া সাহাদের বিরুদ্ধে একটিই কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে, তা হলো সরকার এ পর্যন্ত যেসব হিন্দুদেরকে প্রমোশন দিয়ে উপরে তুলেছে, গর্দানে চর্বি জমিয়েছে, তাদেরকে ধীরে ধীরে ওএসডি করে প্রশাসনকে ফের আগের স্বাভাবিক অবস্থানে নিয়ে আসা। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কোনো প্রিয়া সাহারা মাথাচাড়া দিতে পারবে না। রোগ হলে উপশমের ব্যবস্থা গ্রহণের আগে তাকে প্রতিরোধ করাটাই শ্রেয়তর।
কিন্তু আওয়ামী সরকার তা করতে পারবে না, কারণ মুসলমানরাই তাকে সাপোর্ট দিবে না। যেহেতু মুসলমানদের মাথায় প্রবেশ করানো হয়েছে যে #সব_হিন্দু_খারাপ_নয়
মুসলমান বাচ্চাদের প্রসাদ খাওয়ানো নিয়ে ব্যবস্থা নিতে গেলে #সব_হিন্দু_খারাপ_নয়
সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের পুরোহিত দেশবিরোধী কথা বললে মন্দিরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে #সব_হিন্দু_খারাপ_নয়
শ্যামলী পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে #সব_হিন্দু_খারাপ_নয়
‘ঠগ বাছতে গা উজাড়’ বলতে একটি বাগধারা রয়েছে। হিন্দুদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি সেরূপ, অর্থাৎ কাটা বাছার মতো ‘ভালো হিন্দু’ বেছে নিয়ে আপনি খারাপ হিন্দুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাবেন, এটি প্র্যাকটিক্যালি কখনোই সম্ভব নয়। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা অবাস্তব তত্ত্ব আঁকড়ে ধরে থাকায় হিন্দুদের বিরুদ্ধে কোনো বাস্তব পদক্ষেপই নিতে পারছে না, তা হিন্দুরা যতো যা-ই করুক না কেন ।
(৩)
মুসলমানরা অবাস্তব মরীচিকার মধ্যে পড়ে থাকলে কি হবে, হিন্দুরা বাস্তবিকই সব মুসলমানদের খারাপ বলে মনে করে থাকে। যে কারণে পিশাচ বন্দে-পাদ-দেয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে পারে যে, টাখনুর উপরে কাপড় থাকলেই সে সন্ত্রাসী। প্রিয়া সাহারা হোয়াইট হাউজে গিয়ে খোদ আওয়ামী সরকারকেও হিন্দুবিরোধী হিসেবে দাবি করতে কুণ্ঠাবোধ করে না।
এতে করে মুসলমানদের নিজেদের দেশের প্রেক্ষাপটই মুসলমানদের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। মুসলমানদের এই বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে যে, তাদের এই #সব_হিন্দু_খারাপ_নয় থিওরীর মাধ্যমে একটি vacuum বা শূন্যস্থানের তৈরী হচ্ছে, যে শূন্যস্থান হিন্দুরা পরিপূর্ণ করছে সব মুসলমান খারাপ, টাখনুর উপরে কাপড় থাকলে সন্ত্রাসী হয় এসব প্রচারণার মাধ্যমে। পানিতে মূর্তি ডোবালে নদী দূষিত হয়, এই বিষয়টি মুসলমানরা প্রচার না করার কারণে যে শূন্যস্থানের সৃষ্টি হয়েছে, তা পূর্ণ করা হচ্ছে এই প্রচারের মাধ্যমে যে, কুরবানীর রক্তে পরিবেশ দূষিত হয়। রথযাত্রার কারণে, পূজামণ্ডপ করে রাস্তা আটকানোর কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়, এ সম্পর্কিত কোনো প্রচার মুসলমানরা করে না। যার ফলে হিন্দু ও ইসলামবিদ্বেষীদের দ্বারা এটি প্রচার করা সম্ভব হয়েছে যে, কুরবানীর হাটের কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়।
মোটকথা, #সব_হিন্দু_খারাপ_নয় এই প্রচার মডারেট মুসলমানরা করতে পারে, কিন্তু সেটা করতে হবে তাদের সমস্ত মুসলমানদেরকে খারাপ হিসেবে সাব্যস্ত হবার বিনিময়ে। বেসিক নামায শিক্ষার বইগুলো, যেগুলো কোনো কাল্ট বা মতের প্রতিনিধিত্বও করে না, সেগুলোকেও তুলে ধরা হচ্ছে ‘উগ্রবাদী বই’ হিসেবে।
কিন্তু মুসলমানরা এর বিরুদ্ধে কিছুই করছে না, কারণ #সব_হিন্দু_খারাপ_নয়! কিছু বলতে গেলে তো সব হিন্দুর বিরুদ্ধেই বলতে হয়। আরে আমার উপ্রের হিন্দু ভালো, নিচের হিন্দু ভালো, হিন্দু কলিগ ভালো, হিন্দু বৌদি ভালো, ভালো ভালো ভালো। খারাপ হিন্দু দেখার টাইম আমার নাই।
আরে এই হেন্দু হেন্দু নয়,
ভালো হেন্দু আছে
এই হেন্দুরে নিতে হবে
সেই হেন্দুরই কাছে
এ এ এ এ

Post a Comment

 
Top