Image may contain: one or more people
 
কাশ্মীরে মুসলমানরা এবারের ঈদ পালন করতে পারেনি, এই সংবাদে অনেকেই ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। কিন্তু ঈদ পালন করার আগে তো মুসলমান হওয়া দরকার, আর কাশ্মীরিরা কি মুসলমান হতে পারবে তওবা করার আগপর্যন্ত? ৪৭-এ এই কাশ্মীরিদের পূর্বপুরুষেরাই মুসলমানের বদলে সেক্যুলার হতে চেয়েছিল, আর মুসলমান হওয়ার ‘অপরাধে’ জম্মুর মুসলমানদের উপর হিন্দুদের গণহত্যায় ইন্ধন দিয়েছিল তারা।
ইন্টারনেটের কল্যাণে জম্মু গণহত্যার ইতিহাস আমরা সবাই কমবেশি জানি। বর্তমান ভারতে জম্মু নামক অঞ্চলটি হিন্দু অধ্যুষিত হলেও দেশবিভাগের আগে তা ছিল মুসলিম অধ্যুষিত, জম্মুর ৬১ শতাংশ জনসংখ্যাই ছিল মুসলমান। সেই জনসংখ্যা রাতারাতি ৩৫% এ নেমে আসে গণহত্যার ফলে। ১৯৫১ সালের আদমশুমারি করতে গিয়ে এজন্য দেখা যায়, জম্মুতে গ্রামের পর গ্রাম কোন মানুষ নেই। ১২৩টি গ্রাম সম্পূর্ণ জনমানবহীন ছিলো, জম্মুর কাঠুয়া জেলার ৫০ শতাংশ মুসলিম গায়েব হয়ে গিয়েছিল। প্রিয়া সাহারা যে মিথ্যাচার করে থাকে, হিন্দুরা হারিয়ে গিয়েছে, কিভাবে হারিয়ে গিয়েছে? হারিয়ে যাওয়া কাকে বলে, তা জম্মু গণহত্যার দিকে তাকালে বোঝা যায়।
এখন প্রশ্ন হলো, জম্মুতে মুসলিমদের গণহত্যা হলেও কাশ্মীরে কেন তা হলো না? এখানেই রয়ে গিয়েছে জম্মু গণহত্যার উত্তর, যা গতানুগতিক লেখায় উঠে আসেনি। জম্মুর মুসলমানরা সেক্যুলার হতে চায়নি, যে কারণে তারা একইসাথে শত্রুতে পরিণত হয়েছিল হিন্দুদের এবং সেক্যুলার কাশ্মীরি নেতা শেখ আব্দুল্লাহ ও তার অনুসারী কাশ্মীরি জনগণের।
কাশ্মীরে মুসলমানদের একটিই সংগঠন ছিল, ‘অল জম্মু এন্ড কাশ্মীর মুসলিম কনফারেন্স’, তার দুইজন প্রধান নেতা ছিল। একজন ছিলেন চৌধুরী গোলাম আব্বাস, যিনি ছিলেন জম্মুর অধিবাসী ও জম্মুর মুসলমানদের নেতা। আরেকজন ছিল শেখ আব্দুল্লাহ, যে ছিল কাশ্মীরের অধিবাসী ও কাশ্মীরি মুসলমানদের নেতা। এই শেখ আব্দুল্লাহ একপর্যায়ে কংগ্রেস নেতা নেহরুর সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে এবং সেক্যুলাঙ্গারে পরিণত হয়। সে তার দলটির নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে দেয়, নতুন নাম দেয় ‘জম্মু এন্ড কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স’। অনেকটা আওয়ামী মুসলিম লীগের নাম থেকে ‘মুসলিম’ বাদ দেয়ার মতো।
চৌধুরী গোলাম আব্বাস প্রতিবাদস্বরূপ দল থেকে বের হয়ে যান এবং নিজেই আলাদাভাবে ‘মুসলিম কনফারেন্স’ গঠন করেন তার ন্যায় মুসলিম চেতনাসমৃদ্ধ নেতাকর্মীদের নিয়ে। এর পর থেকেই জম্মু অঞ্চলটি চৌধুরী গোলাম আব্বাসের নেতৃত্বে মুসলিম কনফারেন্স, এবং কাশ্মীর অঞ্চল শেখ আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে ন্যাশনাল কনফারেন্সের ঘাঁটিতে পরিণত হয়।
শুধু তাই নয়, চৌধুরী গোলাম আব্বাসের সাথে ছিল জিন্নাহর সুসম্পর্ক, আর নেহরুর সাথে শেখ আব্দুল্লাহর দোস্তালি তো আগে থেকেই ছিল। এর ফলশ্রুতিতেই ৪৭ এ জম্মুর মুসলমানদের উপর গণহত্যা চালানো হয়, কারণ জম্মুর জনগণ ছিল ‘মুসলিম কনফারেন্স’ এর সমর্থক ও চৌধুরী গোলাম আব্বাসের নেতৃত্বে পাকিস্তানে যোগ দিতে আগ্রহী।
তবে শুধু হিন্দু নয়, শেখ আব্দুল্লাহ নামক বেঈমানটিও ছিল এই জম্মু গণহত্যার ইন্ধনদাতা। কারণ জম্মু ছিল মুসলিম কনফারেন্সের ঘাঁটি, সেখানকার নেতা চৌধুরী গোলাম আব্বাস ছিল তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। শেখ আব্দুল্লাহ বেঈমানটি চিন্তা করেছিল, জম্মুকে মুসলিম মুক্ত করতে পারলে ভারতভুক্তির পর তার একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে কোনো সমস্যা হবে না। এ প্রসঙ্গে lostkashmirihistory.com ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে-

Soon after taking over as the emergency administrator of the state, Sheikh Abdullah crushed the dissidents in Kashmir. A galaxy of leaders of the Muslim Conference including Aga Showkat Ali, Qureshi Muhammad Yusuf, Yusuf Buch and many others were exiled. Hundreds were jailed. The “Peace Brigade” commonly known as Khuftan Fakirs let loose a reign of terror. Even listening to Radio Pakistan was forbidden. Sheikh Abdullah also allowed the massacre of Jammu Muslims. The massacre had begun in July for a purpose. He expected stiff resistance from Jammu. Earlier the Muslim Conference, headed by Chowdhury Abbas, had passed a resolution seeking accession of Jammu & Kashmir to Pakistan. And, to tame the Jammu Muslims, they were massacred and forced to migrate. Being the head of the administration, Sheikh Abdullah could have prevented the carnage but he did not act because preventing it did not fit anywhere in New Delhi’s scheme of things. Sheikh visited Jammu when it had been cleared of ‘mischief mongers’ only to sent Chowdhury Abbas and Allah Rakha Sagar into exile.
অর্থাৎ কাশ্মীরের তৎকালীন জরুরী অবস্থাজনিত প্রশাসনের দায়িত্ব নেয়ার পরই শেখ আব্দুল্লাহ তার প্রতিদ্বন্দ্বী ন্যাশনাল কনফারেন্সের সব নেতাকর্মীদের জেলে ভরেছিল। জম্মুর মুসলমানদের tame তথা বশীভূত করতে চালানো হয়েছিল গণহত্যা। এই শেখ আব্দুল্লাহ তখনই জম্মু পরিদর্শনে গিয়েছিল, যখন যাবতীয় ‘mischief mongers’ তথা সমস্যা সৃষ্টিকারী মুসলমানদের বের করে দেয়া হয়েছিল এবং চৌধুরী আব্বাস ও আল্লাহ রাখা সাগরের মতো নেতাদের নির্বাসিত করা গিয়েছিল।
উল্লেখ্য, বর্তমানে পাকিস্তানের অধীনে যে আজাদ কাশ্মীর অঞ্চলটি রয়েছে, তা ভারতের জম্মু অঞ্চলের পাশে একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। জম্মুর মুসলমানরা পূর্ব থেকেই প্রস্তুত থাকায় পাঠান মুজাহিদদের দ্বারা জম্মুর ‘পুঞ্চ’ ও সংলগ্ন এলাকাকে কেন্দ্র করে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভবপর হয়, যার ফলে উক্ত অংশটি পরবর্তীতে পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত হয়।
বর্তমানে যে ৩৭০ ধারা তুলে নেয়ার কথা হচ্ছে, তা ছিল ভারতভুক্তির পর কাশ্মীরে শেখ আব্দুল্লাহর আধিপত্য বিস্তারের চুক্তি। কিন্তু মুসলমানদের সাথে বেঈমানি করা মুনাফিকদেরকে কখনোই আল্লাহ পাক সফলতা দেননি, ইতিহাসের পাতায় তার নজির নেই। ১৯৫৪ সালেই এই শেখ আব্দুল্লাহকে ‘পাকিস্তানের সাথে ষড়যন্ত্রকারী’ তকমা দিয়ে জেলে ছুঁড়ে ফেলেছিল তার দোস্ত নেহরু, অবশেষে ১৯৭৫ সালে, ২০ বছর পর নেহরুর মেয়ে ইন্দিরার সাথে আজ্ঞাবহ হয়ে থাকার চুক্তি করে তবেই তার পরিত্রাণ মিলেছিল।
সুতরাং ৩৭০ ধারার জন্য আফসোস কেন, কাশ্মীরের মুসলমানরা ঈদের নামায পড়তে পারেনি সেজন্য আফসোস কেন? ঈদের নামায কি মুনাফিকদের জন্য, নাকি মুসলমানদের জন্য? পশ্চিমবঙ্গের জিম নওয়াজ সম্প্রতি জম্মু গণহত্যা নিয়ে একটি লেখা লিখেছে, স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে সেখানে সে উল্লেখ করেছে যে,
“হরি সিং-এর ডোগরা সেনা, আর এস এস কর্মী, হিন্দু মহাসভার কর্মী, কংগ্রেস নেতা, পাঞ্জাব ও অন্যান্য প্রদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী হিন্দু এবং শিখদের যোগসাজশে জম্মুতে ব্যাপক মুসলিম নিধনযজ্ঞ চালানো হলেও প্রতিক্রিয়া হিসেবে কাশ্মীর প্রদেশের মুসলিমরা একজন কাশ্মীরি পণ্ডিতকেও হেনস্থা করেনি, হত্যা দূরে থাক।”
অর্থাৎ ভারতীয় মুসলমান হিসেবে জিম নওয়াজ বোঝাতে চেয়েছে যে, কাশ্মীরি মুসলমানরা কতোটা অছাম্প্রদায়িক! আসলে অছাম্প্রদায়িকতা নয়, কাশ্মিরী মুসলমানরা তো গণহত্যার সমর্থক ছিল। সমর্থক ছিল বলেই তারা জম্মুর গণহত্যার প্রতিবাদে কাশ্মীরে একটি হিন্দুর মরামুখও নিশ্চিত করেনি। এখন সেই জম্মুর মুসলমানদের রক্তের কাফফারা, জম্মুর মুসলিম মা-বোনদের ইজ্জতের কাফফারা কাশ্মিরী বেঈমানদের দিতে হবে। না আমি তাদেরকে মুসলিম বলতে রাজি নই, যতক্ষণ তারা না প্রকাশ্যে বলবে আমরা ভুল করেছি, আমাদের পূর্বপুরুষেরা ভুল করেছে। আমরা ক্ষমাপ্রার্থী, আমরা তওবাপ্রার্থী।

Post a Comment

 
Top