==
কাশ্মীরে ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারাকে আজ সরিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার। যারা এই ধারার ইতিহাস সম্পর্কে অবগত, তারা জানে যে এই ধারা ছিল ছলনার হাতিয়ার। কারণ এই ধারায় যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তা ভারত সরকার বহু আগে থেকেই লঙ্ঘন করে আসছে। তারপরও ভারতীয় হিন্দুপ্রেমিক মুসলমানরা আশায় বুক বেঁধে ছিল নামকাওয়াস্তে খাতাকলমে এই
৩৭০ ধারা যুক্ত থাকার কারণে।

৯৮ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীর উপত্যকা কখনোই হিন্দুপ্রধান ভারতের সাথে যুক্ত হওয়া স্বাভাবিক ছিল না, কিন্তু নেহরুর দালাল শেখ আব্দুল্লাহ এই ৩৭০ ধারার মূলা দেখিয়েই কাশ্মীরিদের ভারতের সাথে যুক্ত হতে প্ররোচিত করেছিল। এই ধারানুযায়ী কাশ্মীরের আলাদা পতাকা, আলাদা সংবিধান ছিল এবং কাশ্মীরের শাসককে সম্বোধন করা হতো ‘প্রধানমন্ত্রী’ বলে, ভারতের অন্যান্য প্রদেশের মতো ‘মূখ্যমন্ত্রী’ বলে নয়। মূলত হিন্দুদের সাথে জোট বেঁধে কাশ্মীরের একচ্ছত্র অধিপতি হওয়াটা এই বেঈমান শেখ আব্দুল্লাহর মূল উদ্দেশ্য ছিল, যা বৃহত্তর পাকিস্তানের সাথে যোগ দিলে সম্ভব ছিল না।

কিন্তু হিন্দুরা তো কাশ্মীরিদের মধ্যে কোনো শক্তিশালী নেতৃত্ব গড়ে উঠতে দিবে না, তাই ১৯৫৪ সালেই শেখ আব্দুল্লাহকে গভর্নরের মাধ্যমে গ্রেফতার করায় নেহরু নিজেই। তৎকালীন সময়ে কাশ্মীরের গভর্নর ছিল কাশ্মীরের শেষ রাজা হরি সিংয়ের পুত্র করণ সিং, বর্তমানে সে একজন কংগ্রেস নেতা। শেখ আব্দুল্লাহকে জেলে বন্দী রাখা হয়েছিল টানা দশ বছর, ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত।
পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর ভারত সরকার আরো আগ্রাসী হয়ে উঠে, ক্ষমতায় তখন নেহরুর মেয়ে ইন্দিরা। ১৯৭৫ সালে শেখ আব্দুল্লাহর সাথে ইন্দিরা এক চুক্তি করে তাকে ফের কাশ্মীরের ক্ষমতায় বসায়, কিন্তু তার টাইটেল তখন হয় ‘মূখ্যমন্ত্রী’, পূর্বের মতো ‘প্রধানমন্ত্রী’ নয়।

অর্থাৎ ৩৭০ ধারার কবর সেই ইন্দিরার আমলেই দেয়া হয়ে গিয়েছিল। ১৯৮২ সালে শেখ আব্দুল্লাহ মারা যায়, কিন্তু তার বেঈমানির সিলসিলা তার পরিবারের মধ্যে বিদ্যমান থাকে। মূলত শেখ আব্দুল্লাহর ছেলে ফারুক, তার ছেলে ওমর, এদের প্রত্যেকেই হচ্ছে কংগ্রেসের দালাল ও বেঈমান। সবচেয়ে বড় কথা, কংগ্রেসের দ্বারা বারংবার ফুটবলে পরিণত হলেও তাদের মধ্যে কখনো আনুগত্যের ঘাটতি হয়নি।

উদাহরণস্বরূপ, শেখ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর পর তার ছেলে ফারুক আব্দুল্লাহ কাশ্মীরের মূখ্যমন্ত্রী হয়, কিন্তু তাকেও তার পিতার মতো গভর্নরের মাধ্যমে সরিয়ে দেয়া হয় ১৯৮৪ সালে। তখন কাশ্মীরের গভর্নর ছিল ‘জগমোহন’, ইন্দিরার ছেলে সঞ্জয়ের বন্ধু।

১৯৮৪ সালে এই ফারুককে কংগ্রেস সরকার লাথি দিয়ে সরিয়ে দিলেও সে-ই আবার ১৯৮৭ এর কুখ্যাত নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গী হয়। উক্ত নির্বাচনে কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার ব্যাপক কারচুপি করেছিল কাশ্মীরের ‘মুসলিম ইউনাইটেড ফ্রন্ট’ কে ক্ষমতায় আসা থেকে বিরত রাখার জন্য, জিতিয়ে দেয়া হয়েছিল এই বেঈমান ফারুককে।

মূলত ঐ সময়ের ঘটনারই ধারাবাহিতায়-ই এখনো কাশ্মীরে আগুন জ্বলছে। ১৯৮৭ সালের ভুয়া নির্বাচন ও বিক্ষোভের প্রেক্ষিতেই ১৯৯০ সালে ‘আর্মড ফোর্সেস পাওয়ার অ্যাক্ট’ জারি করা হয়, যার ফলশ্রুতিতে কাশ্মীর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সেনা অধ্যুষিত এলাকায় পরিণত হয়েছে। ২০১২ সালে মোদি আসার আগে এই ফারুকের ছেলে ওমর (সম্প্রতি যাকে গৃহবন্দী করা হয়েছে) ছিল মূখ্যমন্ত্রী, তখন সে বক্তব্য দিয়েছিল যে কাশ্মীরে নাকি ‘আর্মড ফোর্সেস পাওয়ার অ্যাক্ট’ তুলে নেয়ার মতো পরিবেশ নেই!

উল্লেখ্য, এই ওমরের সাথে গৃহবন্দী হিসেবে উঠে আসছে আরেক বেঈমান মেহবুবা মুফতির নাম। এই মেহবুবা মুফতি ওমরকে হারানোর জন্য বিজেপির সাথে জোট বেঁধেছিল, যার ফলশ্রুতিতে কাশ্মীরে সর্বপ্রথম বিজেপি ক্ষমতা লাভ করেছিল। এর পর আসিফার ঘটনায় বিজেপির নেতাদের দ্বারা ধর্ষণকে সমর্থন ও অন্যান্য ঘটনার দ্বারা কাশ্মীরে উগ্র হিন্দুত্ববাদ আরো প্রভাববিস্তার করে এবং এর ফলশ্রুতিতেই আজকে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা তুলে নেয়া হয়েছে। 

ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে যারা ৩৭০ ধারা বাতিল হওয়ায় মায়াকান্না কাঁদছে, তাদের কান্নার মূল কারণ হচ্ছে এই ধারা বাতিল হলে কাশ্মীরের ভারতের সাথে থাকার কোনো আইনগত ভিত্তি থাকে না, আলগা হিন্দুপ্রেমের ভিত্তি থাকে না। হিন্দুরা ৩৭০ ধারার মূলা ঝুলিয়ে রেখেছে যে কাশ্মীরিদের প্রধানমন্ত্রী দেয়া হবে, পতাকা দেয়া হবে, স্বাধীনতা দেয়া হবে। এর কিছুই দেয়া হয়নি, তারপরও ভারতের হিন্দুপ্রেমিক মুসলমান আশায় বুক বাঁধতে চায়।

ভারতীয় মুসলমানরা তাদের কল্পিত হিন্দুপ্রেমের বেহেশত থেকে বের হতে চায় না। হাসান বিন সাব্বাহ যেমন হাশিশ খাইয়ে কৃত্রিম বেহেশতী সুখের আয়োজন করত, যেই নেশা কেটে গেলে ব্যক্তি পাগল হয়ে যেত যে কোন মূল্যে ফের সেই বেহেশতে প্রবেশের জন্য, ভারতীয় মুসলমানদের অবস্থা হয়েছে ঠিক সেরকম। ৩৭০ ধারা রদের মাধ্যমে তারা বাস্তবে ফিরতে চায় না। তারা এই বাস্তবতা স্বীকার করতে চায় না যে ভারতের ভারতের বিরুদ্ধে তাদেরকে যুদ্ধ করতেই হবে। ভারতের অংশ তারা নয়, হিন্দুরা তাদের বন্ধু নয়।

Post a Comment

 
Top