হযরত জালালউদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি রচিত ‘মসনবী শরীফ’ কিতাবের অধ্যায়সমূহের মধ্যে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সাথে ইহুদী উজিরের প্রতারণার ঘটনাটি উল্লেখযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয় এবং বিভিন্ন কিতাবে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। ঘটনাটি হচ্ছে, তৎকালীন সময়ে এক ইহুদী রাজা ছিল। সে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উপর অনেক নির্যাতন চালাত তাদের ধর্ম ত্যাগে বাধ্য করানোর জন্য, কিন্তু তাতে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছিল না। অতঃপর তার উজির তাকে পরামর্শ দিল- “মহারাজ! খ্রিস্টানদের ধ্বংস করার জন্য উৎপীড়নের পথই যথেষ্ট নয়। কারণ ধর্ম জিনিসটা অন্তরের বিষয়। বাইরে আপনার ভয়ে খ্রিস্টানরা প্রকাশ্যে ধর্ম পালন করবে না বটে, কিন্তু গোপনে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে নবী বলে মানবে আর উপাসনালয়ে প্রার্থনা করবে। আমার নিকট একটি কৌশল রয়েছে, যে কৌশল মোতাবেক কাজ করলে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের উম্মতরা সমূলে ধ্বংস হয়ে যাবে।

আপনি প্রথমে আমার দুই কান কেটে আমার একটা চোখ কানা করে প্রকাশ্যে রাজ দরবারে হাজির করে ঘোষণা দিন, উজির রাজার দরবার থেকে গোপনে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের ধর্ম পালন করেছে আর বাইরে রাজার কাছে পরিচয় দিয়েছে নিজেকে ইহুদী বলে, তাই এ বিশ্বাসঘাতক উজিরকে শুলে চড়িয়ে হত্যা করা হবে। রাজপথে শুলের কাছে আমাকে বেঁধে রেখে রাজ্যময় এ কথা প্রচার করতে হবে। তারপর আমাকে শুলে চড়ানোর সময় রাজ পরিবারের একজন উপস্থিত জনতার সামনে আপনার কাছে আমার প্রাণ ভিক্ষা চাইবে। আপনি তৎক্ষণাৎ আমার জীবন ভিক্ষা দিয়ে মুক্তি দিবেন। তারপর আমি ঈসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে গিয়ে তাদের ধর্মগুরু সেজে বসবো। তারপর দেখতে পাবেন আমি ঈসায়ীদের কিভাবে ধ্বংস করি।”

অতঃপর উপরোক্ত ষড়যন্ত্র মোতাবেক কাজ হলো। সদ্য দুই কান কাটা, এক চোখ কানা ছদ্মবেশী ইহুদী উজির রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করে খ্রিস্টানদের ধর্মগুরুতে পরিণত হল এবং খ্রিস্টানদের যে ১২টি গোত্র ছিল, তাদের সর্দারদের প্রত্যেককে সে আলাদাভাবে একান্তে বলল যে, আমার মৃত্যুর পর তুমিই হবে খ্রিস্টানদের মূল নেতা। অতঃপর একদিন নিজ কুটিরে উক্ত ইহুদী উজির বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করল, তার মৃত্যুর পরেই খ্রিস্টানদের মধ্যে কলহ ও ফলশ্রুতিতে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বেঁধে গেল খ্রিস্টানদের নেতৃত্ব নিয়ে। এভাবেই তারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করে নিঃশেষ হয়ে গেল। ইহুদী উজির নিজের জীবনের বিনিময়ে খ্রিস্টানদের ধ্বংস করার চক্রান্ত সফল করল।

উল্লেখ্য, ইহুদীদের এই চক্রান্ত মোতাবেক হিন্দুদের মধ্যেও এমন কিছু কুচক্রীর সন্ধান মেলে, যারা মুসলমানদের শুভাকাঙ্খী সেজে হিন্দুদের নিকট ধিকৃত হয়, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয় এবং হত্যার শিকারও হয়। পূর্ববর্তী পোস্টে কাশ্মীরের ব্রাহ্মণদের মধ্য থেকে আগত প্রেমনাথ বাজাজের বিষয়টি আলোচনা করেছিলাম, যাকে তার নিজ সম্প্রদায় ত্যাজ্য করেছিল, এমনকি তার মুখের ওপর প্রস্রাব করে দিয়েছিল মুসলমানদের পক্ষে কথা বলার জন্য।

কিন্তু এর বিনিময়ে এই প্রেমনাথ বাজাজ মুসলমানদের সহানুভূতি পেয়েছিল, যার ফলে সে মুসলমানদের প্ররোচিত করতে পেরেছিল সেক্যুলার হতে, পাকিস্তানে না গিয়ে ভারতে যোগ দিতে। যার জের এখনও কাশ্মীরের মুসলমানরা বহন করে চলেছে।

নিজ সম্প্রদায়ের হাতে প্রেমনাথ বাজাজের লাঞ্ছনা, কিংবা গডসের হাতে গান্ধীর গুলি খেয়ে মরাটা মূলত মসনবী শরীফে বর্ণিত প্রাচীনকালের উক্ত ইহুদী চক্রান্তেরই আধুনিক বহিঃপ্রকাশ। তাদের এক ভট্টাচার্য উত্তরসূরী রয়েছে বাংলাদেশী মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে, যে প্রতিনিয়ত ফেসবুকে ইনিয়ে-বিনিয়ে বলে থাকে সে নির্যাতিত, সে বাড়ি থেকে বিতাড়িত! পাঞ্জাবী-পায়জামা আর দাড়িওয়ালা ছবি প্রকাশ করে সেই ভট্টাচার্য ব্রাহ্মণটি ইতিমধ্যে ফেসবুকে একটি বড় অংশের ধর্মগুরু সেজে বসেছে উক্ত ইহুদী উজিরটির মতো, যার পরিণতি হবে খুবই খুবই ভয়ঙ্কর।

Post a Comment

 
Top