Image may contain: stripes

হিন্দুদের ইতিহাসে তাদের বেশকিছু চরিত্র রয়েছে, যারা হিন্দুদের নিকট ধিকৃত, যদিও তাদের কারণেই বর্তমানে হিন্দুদের অস্তিত্ব টিকে রয়েছে বলা চলে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো পাপাত্মা গান্ধী নিজে, যে সেক্যুলার সেজে মুসলমানদের একটি বড় অংশকে ভারতে যোগ দেওয়াতে সমর্থ হয়েছিল। সে ব্যতীত হিন্দুরা কিছুতেই এতো বড় ভূখণ্ড পেতো না, কিন্তু তারপরও তাকে হত্যা করলো হিন্দুরাই। তাকে আজও ধিক্কার দেয় হিন্দুরাই।

কাশ্মীরের মুসলমানদের ইতিহাস প্রসঙ্গে শুরুতেই বলতে হয়, তাদের সাথে আমাদের বাঙালি মুসলমানদের ইতিহাসের একদম খাপে খাপ মিল রয়েছে। ব্রিটিশ আমলে বাংলাদেশে ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ করে মুসলমানদের জমি ও সম্পত্তি হিন্দুদের হাতে তুলে দিয়েছিল ব্রিটিশরা, এর ফলে যেসব হিন্দুরা মুসলমানদের কর্মচারী-আর্দালি ছিল, তারা হঠাৎ করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে মুসলমানদের উপর নির্যাতন করা শুরু করে।

ঠিক সেভাবেই কাশ্মীর অঞ্চলটিও এক হিন্দু গভর্নরের কাছে উপঢৌকন দিয়েছিল ব্রিটিশরা, তার প্রভুর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে ব্রিটিশদের সাহায্য করার বিনিময়ে। ব্রিটিশ আমলের শুরুতে কাশ্মীর ছিল পাঞ্জাবকেন্দ্রিক শিখ শাসকদের অধীন। কাশ্মীরে শিখদের নিয়োজিত গভর্নর ছিল ‘গুলাব সিং’, যে কিনা ব্রিটিশ-শিখ যুদ্ধে তার মনিবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ব্রিটিশদের পক্ষ নেয়। এর প্রতিদানস্বরূপ শিখরা তাকে যে কাশ্মীর অঞ্চলের গভর্নর নিয়োগ দিয়েছিল, সেটারই ‘রাজা’ বানিয়ে দেয় তাকে ব্রিটিশরা।

এর পরপরই বাংলার ন্যায় কাশ্মীরের মুসলমানদেরকেও রাতারাতি চতুর্থ শ্রেণীর নাগরিক বানিয়ে ফেলা হয়। প্রশাসনের সমস্ত পদ ও মুসলমানদের জমিগুলো কেড়ে নিয়ে গুলাব সিংয়ের অনুগত গুটিকয়েক ব্রাহ্মণের (যাদেরকে পণ্ডিত বলা হয়) হাতে কুক্ষিগত করা হয়। কাশ্মীরে গরু জবাই নিষিদ্ধ করা হয় এবং হিন্দুরা গরু জবাইয়ের শাস্তি নির্ধারিত করেছিল সংশ্লিষ্ট মুসলমানকে তার পরিবারসুদ্ধ ঘরে আটকিয়ে সেই ঘরসুদ্ধ পুড়িয়ে হত্যা করা। হিন্দুদের দ্বারা জোরপূর্বক খাদ্যশস্য লুটপাট করার কারণে কাশ্মীরে ১৮৭৭-৭৯ সালে এক ভয়ানক দুর্ভিক্ষ হয়, যে দুর্ভিক্ষে কাশ্মীরের পাঁচভাগের দুইভাগ মুসলমান মারা গেলেও একটা হিন্দু ব্রাহ্মণও না খেয়ে মারা যায়নি বলে বিভিন্ন বইতে উল্লেখ রয়েছে।

উল্লেখ্য, কাশ্মীরের মুসলমানদের ওপর এসব অত্যাচারের দলিল হিসেবে যাদের বই থেকে সবচেয়ে বেশি রেফারেন্স নেয়া হয়, তাদের একজন হলো ‘প্রেমনাথ বাজাজ’। তার ‘ইনসাইড কাশ্মীর’, ‘স্ট্রাগল ফর ফ্রিডম ইন কাশ্মীর’ উল্লেখযোগ্য রেফারেন্স বই হিসেবে ধরা হয়। এই প্রেমনাথ বাজাজ নিজে কাশ্মিরী পণ্ডিত সম্প্রদায়ের লোক হয়েও মুসলমানদের ওপর অত্যাচার নিয়ে বই লেখায় তার নিজের সম্প্রদায় তাকে ত্যাজ্য করেছিল। ‘হিন্দুস্তান টাইমস’ পত্রিকায় লেখা হয়েছে “Bazaz said the Muslim grievances were correct. Some Pandits urinated in his mouth! He had to leave his home and move into another neighbourhood in Srinagar, at Amirakadal,”

অর্থাৎ মুসলমানদের ক্ষোভকে যথার্থ বলে রায় দেয়ায় এই প্রেমনাথ বাজাজের চেহারার ওপর প্রস্রাব করে দিয়েছিল তার সম্প্রদায়ের লোকেরা! ফলশ্রুতিতে তাকে শ্রীনগরে তার নিজ মহল্লা ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে বসবাস করতে হয়।

এপর্যন্ত পড়ে মদারেত মোছলমানরা মনে করবে যে, প্রেমনাথ বাজাজ এক মহান লোক, যে কিনা নিজ সম্প্রদায়ের অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে! গতানুগতিক বইতেও সেরকমটিই লেখা হয়ে থাকে। তবে প্রেমনাথ বাজাজের আরেকটি পরিচয়ও আছে। শুরুতে বলেছি যে, বাংলার সাথে কাশ্মীরের ইতিহাসের মিল খাপে খাপ। যেভাবে হিন্দুদের অত্যাচারের কারণে বাংলার মুসলমান যুবকদের মধ্যে ব্রিটিশ আমলের শেষের দিকে ‘মুসলিম লীগ’ এর নেতৃত্বে পাকিস্তান আন্দোলন তীব্রতা পেয়েছিল, ঠিক সেভাবেই কাশ্মীরেও ব্রিটিশ আমলের শেষের দিকে উদীয়মতা মুসলমান যুবক নেতারা ‘মুসলিম কনফারেন্স’ এর নেতৃত্বে হিন্দু শাসক ও পণ্ডিতদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েছিল। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বাংলার মুসলিমদের ন্যায় কাশ্মীরের মুসলিমরাও পাকিস্তানেই যোগ দিত, কিন্তু সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যায় শেষ সময়ে এসে শেখ আবদুল্লাহ’র হঠাৎ করে সেক্যুলার হওয়ার মধ্য দিয়ে, ‘মুসলিম কনফারেন্স’ দলটি ‘ন্যাশনাল কনফারেন্স’-এ পরিণত হওয়ার মধ্য দিয়ে।

যার প্ররোচনায় শেখ আব্দুল্লাহ সেক্যুলার হলো, সে ব্যক্তিটি আর কেউ নয়, এই প্রেমনাথ বাজাজ! হিন্দুদের দ্বারা ধিকৃত হলেও এই সেক্যুলার ভেকধারী বাজাজই ছিল সবচেয়ে বড় হিন্দু, কারণ শেখ আব্দুল্লাহকে ‘সেক্যুলাঙ্গারে’ পরিণত করা না গেলে গোটা কাশ্মীর আজ পাকিস্তানেই থাকত, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

উল্লেখ্য, এই প্রেমনাথ বাজাজের ন্যায় আরেকটি ব্রাহ্মণ রয়েছে বর্তমান সময়ে, যে কিনা বাজাজের ন্যায়ই নিজ সম্প্রদায়ের অন্যায় ও দেশদ্রোহিতামূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ফেসবুকে সোচ্চার! যার ফলে সেই ব্রাহ্মণটি নিজ সম্প্রদায় কর্তৃক প্রতিনিয়ত ফেসবুকে ধিকৃত হয়। বাজাজের ন্যায় সেই ব্রাহ্মণটিও মুসলিমপ্রীতি প্রকাশ করে একের পর এক বই লিখে বেস্টসেলারে জায়গা করে নেয়। অবশ্য রমনা কালীমন্দিরের প্রধান সেবায়েত দয়াময় বিশ্বাস দীপু বলেছে, আপনারা তাকে গালি দিলেও সে কিন্তু সবার চেয়ে বড় হিন্দু।

ইতিহাসের ক্রান্তিকালে, যখন মুসলমানদের এসপার-ওসপার সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় হয়, তখন এসব ব্রাহ্মণ-পণ্ডিতগুলো মিনমিনে সেক্যুলার ভাব নিয়ে মুসলিম নেতৃত্বের মাঝে প্রবেশ করে মুসলমানদের সর্বনাশ ঘটায়। সাতচল্লিশ ছিল একটি ক্রান্তিকাল, তখন মুসলমানদের মধ্যে যারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে, তাদের উত্তরসূরীরা আজ স্বাধীন দেশে মানুষ হিসেবে জীবনধারণ করতে পারছে। বিপরীতে যারা এই বাজাজ-গান্ধীদের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, তাদের বংশধররা আজ হিন্দুরাষ্ট্রে চতুর্থ শ্রেণীর জনগোষ্ঠী হিসেবে গরুর জন্য রাস্তাঘাটে গণপিটুনির শিকার হয়ে বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে।

বর্তমানেও সেরকমই এক ক্রান্তিকাল এসেছে উপমহাদেশের মুসলমানদের সম্মুখে, বাংলার মুসলমানদের সম্মুখে। প্রিয়া সাহারা বাংলাদেশ আক্রমণের অনুরোধ জানাচ্ছে আসাম থেকে মুসলমান বিতাড়নের সময় ঘনিয়ে আসছে, হিন্দু নেকড়েরা তাদের দাঁত-নখে শান দিচ্ছে, গাযওয়াতুল হিন্দু অতি সমাগত! এখানে যদি এই বাজাজ-গান্ধীদের অনুসারী ভট্টাচার্যর হাতে যদি মুসলমানদের আন্দোলনের স্টিয়ারিং তুলে দেয়া হয়, তাহলে বাংলার মুসলমানদের সামনে কী ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে, তা আশাকরি ব্যাখা করে বোঝাতে হবে না।

Post a Comment

 
Top