হঠাৎ করে বিশ্বের বিভিন্ন ইহুদী পরিচালিত মিডিয়ায় কাসেম বিন আবু বাকারকে নিয়ে নতুন করে ক্রেজ তৈরীর প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। তাকে নিয়ে রিপোর্ট করছে এএফপি, ব্রিটেনের ডেইলি মেইল কে নয়? প্রশ্ন হতে পারে, কাসেম বিন আবু বাকার তো নতুন লেখা শুরু করেনি, সেই ১৯৮৬ সালে তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয়। তখন তো তাকে কেউ গুরুত্ব দেয়নি, হঠাৎ করে এই ২০১৭ সালে এসে কেন? মিডিয়ার প্রশংসায় আপ্লুত না হয়ে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরী।
প্রথমত বলতে হয়, কাসেম বিন আবু বাকার তার উপন্যাসগুলো লিখেছিল এমন একটি সময়ে, যখন মিডিয়াতে মাদ্রাসা বা ইসলামপন্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোন চিহ্নই পাওয়া যেত না। কাসেম বিন আবু বাকারের মতে, এই ‘অবহেলিত’ জনগোষ্ঠীর প্রেমের উপন্যাসের চাহিদা মেটানোর জন্যই তার কলম ধরা।
এখন কিন্তু পরিস্থিতি সেরকম নয়। এখন সরকারও মাদ্রাসাশিক্ষাকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষক ও ছাত্ররা এখন জাতীয় পর্যায়ের ঘটনাবলী নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তাদের দাবিতে এখন পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন হয়, হাইকোর্ট থেকে মূর্তি অপসারণে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেয়। এই অবস্থায় যদি তাদেরকে ফের সেই নব্বইয়ের দশকের গণ্ডিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে কেউ তাদেরকে গুরুত্ব দেয় না, একরাশ হতাশার মধ্যে কেবল কাসেম বিন আবু বাকারের বোরখাপরিহিত মেয়ের সাথে কল্পিত প্রেমের উপন্যাসই তাদের একমাত্র সম্বল?
কাসেম বিন আবু বাকার তার সাক্ষাৎকারে বলেছে, মেয়েরা তাকে হাত কেটে রক্ত দিয়ে লেখা চিঠি পাঠায়। এই ২০১৭ সাল, যখন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও ইসলামপন্থী জনগণ জাতীয় পর্যায়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে প্রস্তুত, তখন তাদের মধ্যে এধরণের ছেলেমানুষি চেতনা ঢুকিয়ে দিলে কার লাভ হবে বলুনতো? সমঝদার পাঠকেরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, কেন এই ২০১৭ সালে এসে ইহুদী নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া নতুন করে কাসেম বিন আবু বাকার ক্রেজ তৈরী করতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে?
এই মুহূর্তে আমাদের দরকার কঠোর নাস্তিকবিরোধী, হিন্দুবিরোধী একের পর এক বই ও গবেষণাগ্রন্থ। এজন্য যেই সাম্প্রদায়িক ও জাতীয়তাবোধসম্পন্ন চেতনা লালন করা দরকার, তা কাসেম বিন আবু বাকার পড়ে অর্জন তো করা যাবেই না, বরং উল্টোপথে হাঁটা হবে। ইহুদী আর হিন্দুরা তো সেটিই চায়। এই কাসেম বিন আবু বাকারকে কে প্রথম অনলাইনে ‘সাহিত্য সম্রাট’ বলে পরিচিত করিয়েছে বলুনতো? করিয়েছে ছুপা উগ্র হিন্দু পিনাকী ভট্টাচার্য, যে মুসলমান-হিন্দু সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম তৈরী করে এদেশের মুসলমানদেরকে ভারতীয় মুসলমানদের মতো হিজড়া বানানোর প্রচেষ্টায় তৎপর।
মুসলমানদেরকে বুঝতে হবে, কাফিরেরা তাদেরকে অস্ত্রের যুদ্ধে হারানোর আগে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে হারিয়ে থাকে বা ‘ডি-মরালাইজ’ করে থাকে। মুসলিম স্পেন নিয়ে একটি গল্প আমি ফেসবুকে দেখেছিলাম, গল্পটি এরকম, খ্রিস্টানরা এক গুপ্তচরকে মুসলিম এলাকায় পাঠালো সংবাদ নেয়ার জন্য। সেখানে গিয়ে সে দেখল, এক মুসলিম যুবক কাঁদছে। তাকে সে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বলল, আমি খ্রিস্টানদের মারার জন্য কয়েকটি তীর ছুঁড়েছিলাম, একটি তীর লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। তাই আমি কাঁদছি।
ঐ গুপ্তচর ফিরে গিয়ে সংবাদ দিল, স্পেন আক্রমণের সময় এখনো হয়নি।
কয়েকবছর পর ঐ গুপ্তচরকে আবার পাঠানো হল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য। সে গিয়ে দেখল, এক যুবক কাঁদছে। কেন কাঁদছে জিজ্ঞেস করলে সে বলল, তার প্রেমিকা তাকে ছেড়ে চলে গেছে তাই সে কাঁদছে।
এরপর ঐ গুপ্তচর ফিরে গিয়ে জবাব দিল, সময় হয়েছে স্পেন আক্রমণ করার।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন, এদেশে বর্তমানে মাদ্রাসা ও ইসলামপন্থীদের যে জাগরণ, তাতে করে ইহুদী-হিন্দু-নাস্তিক বাহিনী বুঝছে যে তারা আর আক্রমণ শানাতে পারবে না। তারা তখনই আক্রমণ করতে পারবে, যখন এই ইসলামপন্থী যুবকটিই বোরখা পরা মেয়ের বিরহে আপ্লুত হবে, জিহাদের ময়দানের বদলে চিঠির উপর হাত কেটে রক্ত ঝরাতে উদ্বুদ্ধ হবে। এজন্য এই ২০১৭ সালে দরকার নতুন করে কাসেম বিন আবু বাকারের টোটকা। মুসলমানদের এই মনস্তাত্ত্বিক আগ্রাসনের স্বরূপ বুঝে এর থেকে সাবধান হওয়া উচিত।

Post a Comment

 
Top