কয়েকদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের কবি শ্রীজাত তার একটি কবিতায় যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে ‘ত্রিশূলে কনডম পরানো’র কথা বলে লাইমলাইটে এসেছিল। আপাতদৃষ্টিতে কাজটি সেক্যুলার মনে হলেও মূল উদ্দেশ্য ছিল উগ্র হিন্দুদের সুযোগ করে দেয়া। কারণ শ্রীজাতের ঘটনা ঘটার পরপরই তসলিমা নাসরিন স্ট্যাটাস দিয়ে বসল, শ্রীজাতকে সাহায্য করলে তাকেও কলকাতায় ফিরতে দিতে হবে। তসলিমার সাথে গলা মেলাল ফেসবুকের সমস্ত উগ্র হিন্দু কমিউনিটি।


অর্থাৎ পুরো বিষয়টিই ছিল সেক্যুলার ও উগ্র হিন্দুদের যৌথ প্রযোজনায় সাজানো নাটক। ভারতীয় মুসলমানরা এই সেক্যুলারিজমের নাটকে মজে থেকে ত্রিশূলকে ফুল দিয়ে মোকাবিলার আকাসকুসুম চিন্তা করে থাকে। সুতীর্থ মুখার্জি নামক পশ্চিমবঙ্গের এক ফেসবুকার তার স্ট্যাটাসে কথিত ‘সেক্যুলার হিন্দু’দের মুখোশ উন্মোচন করে লিখেছে-


“অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকেই দেখেছি, প্রকাশ্যে অথবা গোপনে নিজের মুসলিম বন্ধুদের নিয়ে কটূক্তি করতে, কুৎসিত আলোচনা করতে। সেই কটূক্তি বা আলোচনার বিরোধিতা তো কখনও করিই নি, উল্টে সোৎসাহে অংশগ্রহণ করেছি।...সে সময়গুলিতে কয়েকজন মুসলিম ছাড়া কেউ আমার মুসলিম বিদ্বেষী কথার বিরোধিতা করেতেন না। বরং তাৎপর্যপূর্ণভাবে তথাকথিত স্যেকুলার এবং ধর্মনিরপেক্ষ মানুষরা নীরবে প্রশ্রয় দিয়ে গেছেন। অনেকেই প্রকাশ্যে সমর্থন না করলেও কৃতকর্মের জন্য তাদের থেকেই আড়ালে পিঠ চাপড়ানো, বাহবা খুব একটা কম পাইনি জীবনে। সে সমস্ত গুণীজনদের কথা প্রকাশ্যে বললে, এখুনি অনেক তাবড় সুপারস্টার বিপ্লবীর মুখোস খসে পড়বে। থাক।” (http://archive.is/wUtZw)


আসলে আল্লাহ পাক যে বলেছিলেন- “দেখো! তোমরাই তাদের ভালোবাসো; কিন্তু তারা তোমাদের প্রতি মোটেও সদ্ভাব পোষণ করে না। তারা যখন তোমাদের সঙ্গে এসে মেশে, বলে- 'আমরা ইমান এনেছি।' পক্ষান্তরে তারা যখন পৃথক হয়ে যায়, তখন তোমাদের ওপর রোষবশত আঙুল কামড়াতে থাকে।” (সুরা আলে ইমরান:১১৯) এই আয়াত শরীফেরই সত্যতার প্রমাণ হলো সুতীর্থর উপরোক্ত স্ট্যাটাসটি। তারপরও ভারতের মুসলমানরা কাকে বন্ধু মনে করে? মমতাকে? সমাজবাদী পার্টিকে? কমিউনিস্ট ‘বিপ্লবী’দেরকে? ভারতীয় মুসলমানরা কবে বুঝবে যে, দিনশেষে বিজেপি আর তৃণমূলের হিন্দুরা সব একই ঝাঁকের কই? হিন্দুদের একদল ত্রিশূল তুলে হুঙ্কার দেয়, আরেকদল সেক্যুলারিজমের মেডিসিন দিয়ে মুসলমানদের ঘুম পাড়িয়ে রাখে।


এই মাসের গত ৫ তারিখে ‘রামনবমী’ উৎসবকে কেন্দ্র করে তলোয়ার ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে গোটা পশ্চিমবঙ্গে মিছিল করল উগ্র হিন্দুরা। সেই উৎসবে বিজেপি-আরএসএস তো ছিলই, এমনকি তৃণমূলের নেতারাও যোগ দিয়েছিল সেই মিছিলে। তৃণমূলে মমতার পরেই দ্বিতীয় নেতা হিসেবে ধরা হয় মুকুল রায়কে, তার ছেলে শুভ্রাংশুও তলোয়ার হাতে রামনবমীর মিছিলে যোগ দিয়েছে এবার। ঐ দিন বিজেপি-তৃণমূল নির্বিশেষে তলোয়ার মিছিলের পর পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। সানাউল্লাহ খান, জিম নওয়াজ এরা সবাই বলতে শুরু করল, আবার নতুন করে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ জোট ঢেলে সাজাতে হবে এই তলোয়ারধারীদের ঠেকানোর জন্য।
আফসোস পশ্চিমবঙ্গ তথা গোটা ভারতের মুসলমানদের জন্য, কবে এদের বোধোদয় হবে? ভারতের টাইমস অফ ইন্ডিয়া পত্রিকার জরিপ অনুযায়ী ৭২ শতাংশ হিন্দু মনে করে, গরুর গোশত খেলে মুসলমানদের শাস্তি দেয়া উচিত। এদের সাথে কী জোট করার আশা করে ভারতীয় মুসলমানরা? ভারতীয় মুসলমানরা যে কোন বোকার স্বর্গে বাস করছে, সেটাও টাইমস অফ ইন্ডিয়ার জরিপে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাদের মতে, ৬৭% হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ মুসলিমদের বন্ধু জ্ঞান করে না। যদিও ৭৪% মুসলিমই মনে করে, হিন্দুরা তাদের খুব ভালো বন্ধু। (http://archive.is/5tRxq)


পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের সময় কিন্তু ঘনিয়ে আসছে। রামনবমীর পর আজকের ‘হনুমান জয়ন্তী’ উৎসবেও পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক অস্ত্রমিছিল হয়েছে, পুলিশের সাথেও সংঘর্ষ হয়েছে। (http://archive.is/hazj7) এটি নিশ্চিত যে, খুব শীঘ্রই পশ্চিমবঙ্গে ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লেগে যাবে আর এই সশস্ত্র মিছিলগুলো তারই প্রস্তুতি বা ‘ওয়ার্মআপ’। কিন্তু আফসোস, মুসলমানদের তো কোন প্রস্তুতি নেই! এই মুহূর্তে নিজের জান ও মা-বোনের ইজ্জত বাঁচাতে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের চোখ থেকে এই ‘অসাম্প্রদায়িকতা’র ঠুলি খুলে ফেলতে হবে, তাদেরকে বাস্তবতা অনুধাবন করতে হবে। তাদেরকে বুঝতে হবে যে হিন্দুরা তাদের বন্ধু নয়। পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদেরকে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে হিন্দুদের মোকাবিলায় ঝাপিয়ে পড়তে হবে। রক্ত তো তাদেরকে দিতেই হবে, সেই রক্ত যেন চোখে সেক্যুলারিজমের ঠুলি পরে অপ্রস্তুত অবস্থায় না দেয়া হয়। রক্ত দেয়ার আগে দশটা হিন্দুকে মেরে তবেই যেন রক্ত দেয়া হয়।

Post a Comment

 
Top