ভারতীয় হিন্দুদের জাতির পিতা মোহনদাস গান্ধী, যাকে উগ্র হিন্দুরা গুলি করে মেরেছিল। কারণ তারা মনে করেছিল গান্ধী বোধহয় মুসলমানদের দালাল। নীরদ সি চৌধুরী তার আত্মজীবনীতে লিখেছে যে, তার ছোটবেলায় একবার তার আশেপাশের হিন্দুরা এক পুকুরঘাটে বসে আলোচনা করছিল, বিষয়বস্তু ছিল গান্ধী হলো গিয়ে মুসলমানদের দালাল। তাদের আলোচনার মধ্যে এক ব্রাহ্মণ বাধা দিয়ে উঠে বলল, গান্ধীকে বিধাতা পাঠিয়েছে হিন্দুজাতিকে উদ্ধার করার জন্য।
উপরের ঘটনায় গান্ধীর বিরোধিতাকারীরা হলো গিয়ে চ্যাংড়া পোলাপান, যাদের চিন্তাভাবনা ম্যাচিউরড না হওয়ায় তারা গান্ধীকে চিনতে পারেনি। এরকম উগ্র মেজাজের হিন্দু গুণ্ডা টাইপের ছোকরা আমাদের দেশেও কম নেই, আফটার অল আম্লীগ তাদের শেল্টার দিচ্ছে। সজীব দেব নামক এক যুবক, তেজগাঁও কলেজ কেন্দ্রিক উগ্র হিন্দু ছাত্রদের গ্যাংটির নেতৃত্ব দেয়। সে তার স্ট্যাটাসে লিখেছিল-
//পিনাকি ভট্টাচার্যকে আগে মনে হতো অতি ভন্ড টাইপের একজন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে লোকটি আসলে ভয়াবহরকম মানসিক প্রতিবন্ধী। যেকোন উপায়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের কুৎসা রটনা করে তিনি বিকৃত মানসিক আনন্দ লাভ করেন। //
সেই স্ট্যাটাসে দয়াময় বিশ্বাস দিপু, যে কিনা রমনা কালীমন্দিরের সভাপতি ও বাংলাদেশের উগ্র হিন্দুদের অন্যতম প্রধান নেতা, সে কমেন্ট করেছে-
//ভাই রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।
সত্যি কথা বললে রেগে যাবেন।
শুধু জেনে রাখুন পিনাকি ভট্টাচার্য সবার থেকে বড় হিন্দু। আপনারা যা পারছেন না উনি তা প্রায় পেরে গেছেন।
তার কারন আপনিও ভাবছেন উনি হিন্দু বিদ্বেষী। এটাই উনার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।// (https://goo.gl/0yLhmy)
পিনাকী ভট্টাচার্য সবার থেকে বড় হিন্দু, অন্য হিন্দুরা যা পারে না সে তা পেরে গেছে। গান্ধীর সাথে তুলনা করলে বিষয়টি সহজে বোঝা যাবে। তৎকালীন উগ্র হিন্দুরা কিন্তু পারত না ভারতীয় মুসলমানদের ফুসলিয়ে অখণ্ড ভারতে যোগ দেওয়াতে, কারণ তাদের ক্ষমতা নেই ভালো সেজে মুসলমানদের চোখে ধুলো দেয়ার। কিন্তু গান্ধী তা পেরেছে এবং এর ফলেই ভারত রাষ্ট্রটি আজ এতো বড় হতে পেরেছে। গান্ধীকে তার লক্ষ্য অর্জনে মুসলমানদের সাথে লোকদেখানো অসাম্প্রদায়িক অভিনয় করতে হয়েছিল, আর সে জন্যই উগ্র হিন্দুরা প্রচার করত গান্ধী হচ্ছে মুসলমানদের দালাল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, গান্ধী ঐসব উগ্র হিন্দুদের চেয়েও অনেক বড় হিন্দু ছিল।
পিনাকীর বদলে যদি অন্য কোন উগ্র হিন্দু যদি বলত, কাসেম বিন আবু বাকার হলো গিয়ে এদেশের মুসলমানদের সাহিত্য সম্রাট, তখন কিন্তু মুসলমানরা জোর প্রতিবাদ করে উঠত। কারণ মুসলমানদের চোখে তখন স্পষ্ট হয়ে উঠত যে, কাসেম বিন আবু বাকার স্থুল প্রকৃতির প্রেমের উপন্যাস লেখে দেখেই ‍মুসলমানদের হেয় করতে এই টিটকারী দেয়া হয়েছে। কিন্তু পিনাকীর ক্ষেত্রে ঘটনাটি হয়েছে ভিন্ন। ছয়মাস আগে থেকে যখন পিনাকী কাসেম বিন আবু বাকারকে হাইলাইট করে লেখা শুরু করেছিল, তখন কেউ সেটার প্রতিবাদ তো দূরের কথা, অনেকেই এপ্রিশিয়েট করেছে। যার ফলে এখন বিশ্ব মিডিয়ায় এদেশের মুসলমান পাঠকদের পরিচিত করানো হচ্ছে কাসেম বিন আবু বাকারের ফ্যান হিসেবে। বিষয়টি যে কতোটা লজ্জাজনক, এটা মুসলমানরা বুঝতেই পারছে না। কারণ তারা বুঝছে না যে, বন্ধুবেশের আড়ালে পিনাকী কতো বড় হিন্দু। এমনকি সাধারণ হিন্দুরাও পিনাকীর মতো গভীর পানির মাছকে চিনতে অক্ষম, তার মূল রূপটি চেনে কেবল দয়াময় বিশ্বাসের মতো কেন্দ্রীয় নেতারা।
একই কথা খাটে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতার ক্ষেত্রেও। তাকে মিডিয়াতে যতোই মুসলিমবান্ধব হিসেবে প্রচার করা হোক না কেন, হিন্দুরা তাকে যতোই গালি দিক না কেন, বাস্তবতা হলো সে মোদীর চেয়েও অনেক বড় হিন্দু। পুরীর মন্দিরে গিয়ে মমতা যে বলেছে, ‘আমি সাচ্চা হিন্দু’ কথাটি কিন্তু কৌতুকের বিষয় নয়। অচিরেই পশ্চিমবঙ্গের মমতাভক্ত মুসলমানরা এই কথাটির বাস্তব প্রতিফলন দেখতে পাবে।

Post a Comment

 
Top