গত রাতে যে লিখেছিলাম, রংপুরের গ্রামগুলোর মুসলিম পরিবারগুলো পুরুষশূন্য করা হবে, তা ২৪ ঘণ্টা পার হতে না হতেই সত্যিতে পরিণত হলো। ইতিমধ্যে গ্রেফতার আতঙ্কে রংপুরের ২০টি গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে গিয়েছে, সেখানে মহিলাদের নিরাপত্তা দেয়ার মতো কারো উপস্থিতি এখন আর নেই!

অথচ প্রতিবাদকারীরা হিন্দুদের ঘরে আগুন দেয়া তো দূরের কথা, হিন্দু এলাকার আশেপাশেই যায় নি। প্রতিবাদকারী মুসলমানরা রাজপথে থাকা অবস্থাতেই পুলিশ তাদের উপর গুলিবর্ষণ করে এবং ঘটনাস্থলেই ২ জনের মৃত্যু হয়। নিচের ছবিতে দেখুন, পুলিশ ও প্রতিবাদকারীদের অবস্থান থেকে কমপক্ষে ৫০০ মিটার দূরে কতগুলো টিনের ঘর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। যদি প্রতিবাদকারীরাই হিন্দুদের ছাপড়ায় আগুন দিতো, তাহলে আগুনে পোড়া বাড়িগুলোর আশেপাশে মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যেত। কিন্তু আশেপাশে কোন মানুষজনই নেই, ফাঁকার মধ্যে টিনের ছাপড়াগুলো পুড়ছে। এর থেকে এটিই স্পষ্ট হয় যে, বহিরাগতরা নয় বরং হিন্দুপাড়ার বাসিন্দারাই ভেতর থেকে নিজেদের ঘরে নিজেরা আগুন দিয়েছে।

আফসোসের বিষয়, বার্মায় বিবিসির এক খ্রিস্টান সাংবাদিক জোনাথন হেড হিন্দুদের নিজ বাড়িতে আগুন দিয়ে মুসলিমদের ফাঁসানোর বিষয়টি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশ এখনো সেই ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত হতে পারল না। এই পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে দায়ী এদেশের ‘আলগা অসাম্প্রদায়িকতা’ দেখানো মুসলমানগুলো। উদাহরণস্বরূপ, পাশ্ববর্তী দেশের বহু মুসলমানদের জমি-সম্পত্তি ‘শত্রু সম্পত্তি’ গণ্য করে তাদেরকে বের করে দেয়া হয়েছিল, সেগুলো এখনও ফেরত দেয়া হয়নি। এদেশে অভিনেতা রাজ্জাক, বামপন্থী লেখক বদরুদ্দীন উমরসহ অনেকেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে এভাবেই বিতাড়িত হয়ে এদেশে এসেছিল। তারপরও এদেশের মুসলমানরা চাচ্ছে, একতরফাভাবে অসাম্প্রদায়িকতা প্রদর্শন করে বাংলাদেশের শত্রু সম্পত্তিগুলো হিন্দুদেরকে ফেরত দিয়ে দিতে।

হিন্দুরা মুসলমানদের জমি ফেরত না দিলে আমরা কেন দিব, এই সোজা জিনিসটাই এদেশের মুসলমানরা বুঝতে চাইবে না। ঠিক সেভাবেই রংপুরের হিন্দুরা যে বার্মা স্টাইলে নিজেদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে, সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেও এদেশের মুসলমানরা বুঝবে না। তারা অন্ধের মতো ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ এর ভাঙা রেকর্ড বাজাতেই থাকবে। সব মিলিয়েই রংপুরের মুসলমানরা কোনঠাসা হয়েছে। হিন্দুপ্রীতির কারণে এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই হওয়ার বদলে শত্রুতে পরিণত হয়েছে।

এভাবেই অসাম্প্রদায়িক হতে গিয়ে একজন আরেকজনের গোশত খেতে খেতে বাংলার মুসলমানরা নিঃশেষ হয়ে যাবে, আর হিন্দুরা জায়গা দখল করবে। আর কতোদিন হিন্দুদের সাজানো নাটকের শিকার হয়ে নিজেদের মা-বোনদের হায়েনাদের মুখে ফেলে মুসলমানরা নিজেদের বাড়িঘর ত্যাগ করবে? ৭১ এর যুদ্ধের সময়ে ঢাকা থেকে পাকিস্তানী সেনা আসার সময়ে প্রতিরোধ গড়া হয়েছিল, তাহলে কেন মুসলমানরা এই জালিম পুলিশ-সেনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে না? রংপুরের ২০ গ্রামের পুরুষরা ফিরে আসুক, একত্রিত থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলুক, নিজেদের মা-বোনদের ইজ্জত রক্ষা করুক। সবাই মিলে ধারালো অস্ত্র নিয়ে একত্রিত হলে কোন পুলিশের বাপও তাদের কিছু করতে পারবে না।

Post a Comment

 
Top