বিশ্ব মিডিয়ায় এখন প্রচারিত হচ্ছে, ভারতের কেরালার ইসলাম গ্রহণকারী বোন হাদিয়াকে জোর করে তার হিন্দু পিতামাতার কাছে আটকে রাখার মর্মন্তুদ কাহিনী। হাইকোর্ট যখন হিন্দুদের হয়ে হাদিয়ার মুসলিম স্বামীর সাথে তার বিবাহ ‘অবৈধ’ ঘোষণা করল, তখন তার স্বামী মামলা দাখিল করল সুপ্রীম কোর্টে। আজ যখন কেরালা থেকে এয়ারপোর্টে করে তাকে দিল্লীতে নেয়া হচ্ছে সুপ্রীম কোর্টের উদ্দেশ্যে, তখন বোন হাদিয়া সুযোগ পেয়ে মিডিয়ার কাছে বলেছেন- তিনি মুসলিম। নিজের ইচ্ছায় মুসলিম হয়েছেন। কেউ তাকে বাধ্য করেননি মুসলিম হতে। তিনি স্বামীর কাছে ফিরে যেতে চান।

এ প্রসঙ্গে কয়েকদিন আগে এক উগ্র হিন্দু নেতার কথা মনে পড়ে গেল। আদিত্যনাথের অনুসারী নগেন্দ্র প্রতাপ তোমর বলেছিল- হিন্দুদের মধ্যে যারা কাপুরুষ ছিলেন তারা মুসলিম হয়েছিল। নওমুসলিম বোন হাদিয়ার প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম প্রমাণ করেছে, নগেন্দ্র প্রতাপের এই আস্ফালন মিথ্যা। বরং হিন্দুদের মধ্যে যারা সাহসী, যারা বিদ্রোহ করতে পারে স্বজাতি ও সমাজের বিরুদ্ধে, কুসংস্কারাচ্ছন্ন হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে, তারাই হিন্দু থেকে মুসলমান হতে পারে। মক্কা শরীফের কুরাইশদের মধ্যে তারাই মুসলমান হতে পেরেছিল, যারা নিজ মুশরিক সমাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে মদীনায় হিজরত করতে পেরেছিল।

স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায় যে, নওমুসলিমদের এই বিদ্রোহ সফল করতে হলে কাফির সমাজকে দুর্বল করতেই হবে। কারণ হিন্দুসমাজ যদি শক্তিশালী হয়, তাহলে তারা নওমুসলিম হতে আগ্রহী হিন্দুদের সামনে বাধার সৃষ্টি করবেই করবে। হাদিয়ার ঘটনাটি কিন্তু তারই প্রমাণ। আমাদের বাংলাদেশেও বর্তমানে এধরণের ঘটনা বিরল নয়। বাংলাদেশী হিন্দুরা এখন প্রায়ই ফেসবুকে নওমুসলিমদের ফের হিন্দুধর্মে ফিরিয়ে নিয়ে আস্ফালন প্রকাশ করছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষক কুশল চক্রবর্তী, যে এদেশে ‘সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ’ নামক একটি উগ্র হিন্দু যুবকদের সংগঠনের কর্নধার। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানের কলেজ-ভার্সিটির উগ্র হিন্দু ছাত্ররা তাকে একবাক্যে ‘গুরু’ বলে স্বীকার করে। এই কুশল চক্রবর্তী একটি গ্রুপ পোস্টে লিখেছিল-

//এই হাসিখুশী নিষ্পাপ ক্লাস টেনের ছোটভাইটিই কিছুদিন আগে তাবলীগ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মুসলিম হয়ে গিয়েছিলো। ওর নাম শুভঙ্কর বর্মন। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্গত বন্দর থানার একরামপুরের বাড়ি ওর। ওখান থেকেই কয়েকদিনের ব্যবধানে তিনটি ছেলে ধর্মান্তরিত হয়, এর মধ্যে একটি নিখোঁজ সহ অন্যদুইজনকে সনাতন ধর্মে ফিরিয়ে আনা হয়েছে বন্দরের স্থানীয় কয়েকজনের সার্বিক সহায়তা এবং একাগ্রতায়।// (স্ক্রীনশট কমেন্টে)

ভারতে মোদি, আর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বদৌলতে হিন্দুদের গর্দানে চর্বি জমাটাই এসব ঘটনার পেছনে মূল কারণ। এর জন্য আখিরাতে মুসলমানদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে যে, তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার পরও কিভাবে তাদের সমাজ থেকে একজন মুসলমানকে ছিনিয়ে নিয়ে ফের হিন্দুধর্ম গ্রহণ করানো হয়েছে? এই ছেলেটি হিন্দুধর্মে ফিরে গিয়ে যতো মূর্তিপূজা করছে, তার গুনাহ তার আশেপাশের মুসলমানদের আমলনামায় অবশ্যই লেখা হচ্ছে।

এই ঘটনাগুলো যে অহরহ ঘটছে, তার প্রমাণ পাওয়া যায় সিলেটের নওমুসলিম আবদুল আজিজের একটি ভিডিওতে। পাঠকদের মনে আছে নওমুসলিম আবদুল আজিজের কথা, যে উগ্র হিন্দু রাকেশ রায়ের মিথ্যা মামলায় মাসের পর মাস জেল খেটেছিলেন? সেই আবদুল আজিজের প্রোফাইলে পুরাতন একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক নওমুসলিম কিশোরের বাবা ২০০০ সালের আগপর্যন্ত দুবাইতে থাকত। বাবা দুবাইতে থাকতেই মুসলিম হয়, দেশে ফিরে নিজ ছেলেকে আস্তে আস্তে বুঝিয়ে মুসলমান বানাতে সমর্থ হয়। সেই বাবাই তার হিন্দুসমাজের জুলুমে আর দৃঢ় থাকতে পারল না, একপর্যায়ে আত্মসমর্পণ করে ফের হিন্দু হয়ে যায় সে। কিন্তু যেই সন্তানকে সে মুসলমান বানিয়েছিল, সে ঠিকই দ্বীন ইসলাম ধরে রেখেছে। (ভিডিও লিঙ্ক কমেন্টে)

এই যে বাবা মুসলমান হয়েও ফের হিন্দু হতে বাধ্য হলো, এর দায় কি কেবল তার একারই? এর দায় কি মুসলমানদেরও নয়, যারা হিন্দুদেরকে বড় বড় চাকরি দিয়ে, বড় বড় প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়ে, সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে নওমুসলিমদের উপর চড়াও হওয়ার শক্তি যুগিয়েছে? শুধু আওয়ামী লীগকে দোষ দিলে হবে না, বাংলাদেশের মুসলমানরাও কম হিন্দুতোষক নয়। এদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যে অবৈধভাবে ভারতীয়রা কাজ করছে, এর পেছনে তো মূল দায়ী বেসরকারি সেক্টরের ব্যবসায়ীরা, যাদের অনেকেই পাকা দাড়িবিশিষ্ট ধার্মিকের বেশ ধরে রয়েছে।

আফসোসের বিষয়, জন্মসূত্রে মুসলমান যারা, তারা নওমুসলিমদেরকে তাদের সংগ্রামে সহায়তা তো করেই না, বরং হিন্দুদের গর্দানে চর্বি জমিয়ে তারা মুসলমান হতে আগ্রহীদের আরো কঠিন পরীক্ষার সামনে ফেলে দেয়। আসলে সাদা কথায় বলতে হলে, যদি মুসলমানরা চায় নওমুসলিমদের ইসলাম গ্রহণে সহায়তা করতে, সেক্ষেত্রে এসব হিন্দুদেরকে কিছুতেই ভালো চাকরি দেয়া যাবে না, সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না। রোহিঙ্গাদেরকে যেভাবে চাকরি-পড়াশোনার কোন সুযোগ দেয়া হয় না, ভারতীয় মুসলমানদেরকে যেভাবে হিন্দু এলাকায় ভাড়া দেয়া হয় না, ঠিক সেইরকম পলিসি হিন্দুদের ক্ষেত্রে মুসলমানদেরও গ্রহণ করতে হবে। হিন্দুদের পায়ের তলায় মাটি রাখা যাবে না, তাদের ভিটায় ঘুঘু চড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। হিন্দুসমাজকে দুর্বল ভগ্ন করে দিয়ে যদি তাদের প্রতি দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দেয়া যায়, কেবল তখনই হিন্দুদের মধ্যে মুসলমান হতে আগ্রহীদের পক্ষে তা গ্রহণ করা সম্ভব হবে, নচেৎ নয়।

Post a Comment

 
Top