পাশ্ববর্তী ভারতে যে মুসলমানদের উপর এতো নির্যাতনের পরও তারা সেভাবে কোন কড়া পদক্ষেপে যেতে পারে না, এর মূল কারণ প্রতিটি হামলার পর মুসলমানদের হয়ে প্রতিবাদ করার দায়িত্ব নেয় কতিপয় ‘সেক্যুলার’ হিন্দু লেখক ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা। তারা কিন্তু তাদের লেখাগুলোতে প্রচুর প্রতিবাদের তুবড়ি ছোটায়, মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রচুর দলিলপত্র দাখিল করে।

গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে ভারতীয় লেখকদের কলামের একটি সংকলন রয়েছে “ভারতে মুসলিম নির্যাতন” নামে (পিডিএফ লিংক কমেন্ট বক্সে)। বইটি পড়লে গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে প্রচুর তথ্য পাওয়া যায়, মুসলিম লেখকদের লেখায় যার সিকিভাগও নেই। কিন্তু সবগুলো কলামের মধ্যে একই মেসেজ দেয়া হয়েছে, তা হলো ‘আসুন আমরা ধর্মনিরপেক্ষ হই। ঐসব হিন্দু উগ্রবাদীদের নিয়ে চিন্তিত হবেন না, আমরা ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ হিন্দুরা আছি না...”

এ কারণে ভারতে প্রতিটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর সেদেশের মুসলমানদের মধ্যে হিন্দুদের প্রতি ক্ষোভ তো বৃদ্ধি পায়ই না, উল্টো তাদের মধ্যে হিন্দুপ্রীতি নতুন করে নবায়ন করা হয়। বিষয়টি অনেকটা সাপ হয়ে কেটে ওঝা হয়ে ঝাড়ার মতো। ইহুদীদের একটি পলিসি হচ্ছে, ঘটনার পক্ষে ও বিপক্ষে, দুই জায়গাতেই তাদের এজেন্টরা কাজ করবে। বার্মার রোহিঙ্গা গণহত্যার পক্ষেও সিআইএ কাজ করবে, রোহিঙ্গাদের প্রতি ত্রাণও নিয়ে যাবে তাদের এজেন্ট ব্র্যাক-ইউনিসেফরা। কোন একদিকে গেলেই মুসলমানরা তাদের ফাঁদে ধরা দেবে।

২৫শে মার্চের পর যদি এমন হতো যে, পাকিস্তানী বাহিনীর অত্যাচারের প্রতিবাদ করছে আরো কিছু পাকিস্তানী লেখক, গণহত্যার প্রচুর দলিলপ্রমাণ দিচ্ছে এবং পরিশেষে বাঙালি মুসলমানদের উদ্দেশ্যে ভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করছে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ হয়তো কখনোই স্বাধীন হতে পারত না। কারণ প্রতিরোধের জন্য দরকার উজ্জীবিত করতে পারে এমন নেতা, যে বজ্রকণ্ঠে বলতে পারবে, “রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব।” মিউমিউ করে কখনোই অধিকার অর্জিত হয় না।

সম্প্রতি ৬ জন মুসলমান হত্যা করা হয়েছে রংপুরে, আর এখানে মুসলমানরা কিছুই করতে পারছে না কারণ এখানেও উপরের পলিসির প্রতিফলন ঘটেছে। অনলাইনে নাস্তিকদের নিকট ‘বৈবাহিক সূত্রে মুসলমান’ উপাধি প্রাপ্ত এক হিন্দু ফেসবুকার, শুরুতেই রংপুরে মুসলমান হত্যা নিয়ে সহানুভূতি জানিয়ে প্রচুর মুসলমানকে একেবারে বিমুগ্ধ করে ফেলতে পেরেছে। তবে মুসলমানরা যতোটা না সক্রিয়তা দেখিয়েছে, সংখ্যালঘু হয়েও তার চেয়ে বহুগুণে দেখিয়েছে নাস্তিক ও হিন্দুরা। কেনো সে পোড়া ঘরের চেয়ে মুসলমানের জীবনের দাম বেশি বলে মন্তব্য করলো, এটাই ঐ হিন্দু ফেসবুকারের অপরাধ।

কয়েকদিন ধরে রংপুরে মুসলমান মৃত্যুর কথা বলে অনলাইনে তোলপাড় তোলার পর সম্প্রতি সে আহবান করছে যে, মুসলমানদের হিন্দুদের পাশে দাঁড়াতে হবে। সবাই জানেন যে, উক্ত হিন্দু ফেসবুকারটি হেফাজতের একজন থিঙ্কট্যাঙ্ক। হেফাজতকে দিয়ে সে পত্রিকায় বিবৃতি প্রচার করেছে-

“এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের কর্তব্য হচ্ছে অপরাপর গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের মানুষের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে পূর্ণ সহযোগিতা করা, তাদের যে কোন প্রয়োজনে সহযোগিতা নিয়ে পাশে দাঁড়ানো।"

আর সে নিজে বলেছে- “"আমরা বাংলাদেশে মুসলমানের লগে মিলামিশা থাকুম" এই চিন্তা হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে যেইদিন থেকে শুরু হইবে সেইদিন বাংলাদেশে নতুন জামানার শুরু হইবে।”

আচ্ছা এরকম অলীক চিন্তা কি আপনি কোনদিন করেছেন যে, হিন্দুরা ভবিষ্যতে কোনদিনও এই দেশকে, এদেশের মুসলমানদের আপন মনে করবে? ব্রিটিশ আমলে যখন এই দেশ মুসলমানরা নয়, হিন্দুদের ব্রিটিশ প্রভুরা শাসন করেছিল, তখনও হিন্দুরা এদেশকে আপন মনে করেনি। কুকুরের লেজ সোজা হতে পারে, কিন্তু হিন্দুরা কোনদিনও মুসলমানদের আপন মনে করবে না।

শুনুন মুসলমানরা, রংপুরে ৬ জন মুসলমানকে হিন্দুরা মেরে ফেলেছে ইসলাম অবমাননার বিচার চাওয়ার জন্য, এখানে প্রতিশোধ হিসেবে পাল্টা হিন্দুদের মরামুখ নিশ্চিত ব্যতীত কোন রাস্তা নেই। এ অবস্থায় “হিন্দুরা একদিন বাংলাদেশকে ভালোবাসবে, নতুন জামানা শুরু হবে” এধরণের ছেলেভোলানো মোয়া দিয়ে যে আপনাদেরকে ঠাণ্ডা বানিয়ে রাখতে চায়, সে কিন্তু শিবসেনার চেয়েও অনেক অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। ঐ ফেসবুকার সেক্যুলারিজমের বিরুদ্ধে বললেও সে মুসলমানদের সেই সেক্যুলারিজমের বিষই কিন্তু খাওয়াচ্ছে।

বাংলার মুসলমানদের এখনই এসব ভণ্ড সহানুভূতি দেখানো এজেন্টদের হাত থেকে সাবধান হতে হবে। এমন নেতা খুঁজে নিতে হবে, যে তাদেরকে রক্তের নদী পেরিয়ে হলেও অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম। আফসোসের বিষয়, এরকম নেতা নেই দেখেই বর্তমানে রোহিঙ্গা সংকটে এদেশের জনগণ সঠিক পথে পরিচালিত হতে পারছে না। বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক আ ল ম ফজলুর রহমান বারবার আহবান জানিয়ে যাচ্ছেন, রক্ত ব্যতীত অভীষ্ট লক্ষ্য আসবে না। বার্মার সাথে আমাদের যুদ্ধ করতে হবেই। তার এই আহবান কিছুতেই সফল হচ্ছে না, কারণ বাংলার মুসলমানদের মনমগজ এসব হিন্দু ফেসবুকারের কবলে পড়ে নপুংসক হয়ে গিয়েছে। তাই ৬ জন কেন, ৬০০ জনকে মেরে ফেললেও মুসলমানরা আজ পাল্টা রক্ত ঝরাতে ইচ্ছুক নয়। রোহিঙ্গা হোক আর রংপুর হোক, সব সংকটের সমাধান মুসলমানরা আজ ছেলেভোলানো কায়দায় সমাধান করতে চায়।

Post a Comment

 
Top