==
বিনয়ের বদলে বিনয়, বিষয়টি সভ্য-ভদ্র জাতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেসব জনগোষ্ঠী গোলাম শ্রেণীর, উদাহরণস্বরূপ ভারতের হিন্দু কিংবা ইউরোপের বলকান অঞ্চলে বসবাসরত একদা উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীন অর্থোডক্স খ্রিস্টান সম্প্রদায়, তারা মুসলমানদের বিনয় প্রকাশ কিংবা বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবকে দেখে দুর্বলতা হিসেবে, যেই দুর্বলতাকে পুঁজি করে তারা মুসলিম হত্যা-ধর্ষণে লিপ্ত হয়।

উদাহরণস্বরূপ বসনিয় গণহত্যা, কিংবা সিপাহী বিদ্রোহে হিন্দুদের খুশি করতে গরু জবাই নিষিদ্ধের পর উল্টো দিল্লীর মুসলমানদের উপর হিন্দুদের চড়াও হওয়াটা উদাহরণ উল্লেখ করা যায়। খিলাফত আন্দোলনে গান্ধীর কথায় গরু জবাই নিষিদ্ধ ও অন্যান্য আরো হিন্দুতোষণে লিপ্ত হওয়ার কিছুকাল পরেই গোটা ভারতে ব্যাপক দাঙ্গা হয়, যাকে কেন্দ্র করে আরএসএসের মতো দলের সৃষ্টি হয়। দেশবিভাগের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ও নেহরুর মধ্যে একটি চুক্তি হয়, সেই চুক্তিকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয় উগ্র হিন্দুত্ববাদী ‘জনসঙ্ঘ’ নামক দলটির, যে ‘জনসঙ্ঘ’ দলটি থেকে পরবর্তীতে বিজেপির উদ্ভব হয়। 

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে যে বিজেপির উত্থান, তার পেছনে এই প্রচারণা সবচেয়ে বেশি কাজে দিয়েছে যে, মমতা মুসলমানদের এই এই সুবিধা দিচ্ছে। অর্থাৎ মুসলমানদের সুবিধা দেয়া হচ্ছে, মুসলমানদের সাথে বন্ধুত্ব করা হচ্ছে, কিংবা মুসলমান ফ্রেন্ডলি জেসচার দেখিয়েছে, এরকম ইঙ্গিত পেলেই হিন্দুর মাথায় মাল উঠে সে বেপরোয়া হয়ে যায়। যেহেতু হিন্দুর শরীরে গোলামের রক্ত প্রবাহিত, সেহেতু তার স্বাভাবিক আচরণ পরিচালিত হয় আদেশ আর লাঠির বাড়িতে। বিনয়ী আচরণে সে উল্টো আগ্রাসী হয়, তার জন্য গরু জবাই ত্যাগ করলে সে উল্টো পিটিয়ে মারে, উচ্চপদ দিলে সে প্রিয়া সাহার মতো বিদেশে গিয়ে নালিশ দেয়, দেশদ্রোহী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়।

এককথায়, কুত্তার পেটে ঘি সয় না। সামান্য থেকে সামান্যতম উৎসাহ ও প্ররোচনা হিন্দুদের মাথায় বিষমাল উঠিয়ে দেয়। আশির দশকের শেষের দিকে ভারতের দুরদর্শনে ‘রামায়ণ’ সিরিয়াল দেখানোর পর সেটাকে কেন্দ্র করে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তাকে কেন্দ্র করেই হিন্দুরা বাবরি মসজিদ ভেঙে দেয়। আবার বাবরি মসজিদ ভাঙাটা টিভিতে প্রচারিত হওয়ায় সেটা দেখে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দুরা উৎসাহ পেয়ে তাদের মাথায় মাল উঠে যায়, যে মাল নামাতে তারা লিপ্ত হয় বেপরোয়া গণহত্যায়।

জ্বি হ্যাঁ, বাবরি মসজিদ ভাঙার সময়ে মুসলমানরা কোন প্রতিবাদ করেনি ভারতে, বরং হিন্দুরা বাবরি মসজিদ ভাঙা দেখে উত্তেজিত হওয়ায় সেই উত্তেজনা প্রশমনে মুসলমানদের তরফ থেকে কোনোপ্রকার বিনা উস্কানীতেই তখন দাঙ্গা হয়। ‘দাঙ্গার প্রতিবেদন’ বইতে বিভিন্ন দৃশ্যপটের বর্ণনার মাধ্যমে তা তুলে ধরা হয়েছে। টিভিতে মসজিদ ভাঙা দেখানো হচ্ছে, সেটা দেখে সুরাটের শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে টিভিটাই ভাঙতে দৌড়ে আসে! কিন্তু টিভি ভাঙলে মালিক তাদেরকে বের করে দেবে কাজ থেকে, সেটা মনে আসতেই তারা সংযত হয়।

কিন্তু তাদেরকে ২৪ ঘণ্টাও অপেক্ষা করতে হয় না। পরদিন সকালেই সুরাটে মাইকিং করে ঘোষণা করা হতে থাকে “কাল অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়েছে। আমরা অযোধ্যায় যেতে পারিনি, তাই সেই পুণ্যকাজে হাত লাগাতে পারিনি। এখন সেখানে রামমন্দিরের ভিত গাড়া হয়েছে, সেখানে রামলালার (রামের কল্পিত শিশুমূর্তি) পূজা হচ্ছে। সুরাটে আমরা কি চুপচাপ থাকব, মুসলমানদের ওপর আমাদের বদলা নেব না? আপনাদের পাড়ায়, আপনাদের বাড়ির পাশে যদি কোনো মুসলমান বাড়ি থাকে তাহলে সেই বাড়ির দরজা ভেঙে ঢুকুন। তাদের খুন করুন। কোনো মুসলমান মেয়েকে ছেড়ে দেবেন না-সে ছোটই হোক, আর বুড়িই হোক। ”

উল্লেখ্য, কালকে যে রামমন্দিরের উদ্বোধনী পূজা হবে, তাতে ভারত তো বটেই, বাংলাদেশের হিন্দুদের মাথায়ও মাল উঠে গিয়েছে। এমতাবস্থায় কালকে দাঙ্গা হবে, মুসলমানরা চুপ করে থাকলেও হিন্দুরা তাদের মাথার মাল নামাতে দাঙ্গা করবেই করবে। ভারতে তো বটেই, দু একটা ইনসিডেন্ট ঘটিয়ে এই দাঙ্গা বাংলাদেশেও তারা লাগাতে কসুর করবে না। 

এখন মুসলমানদের বুঝতে হবে যে, যেই ভেড়া ঝর্ণার নীচে দাঁড়িয়ে আছে, সেই ভেড়াকে পানি ঘোলা করার দায় দিয়ে হলেও নেকড়ে কিন্তু তাকে খাবেই। সুতরাং মুসলমানদের ভেড়া হলে চলবে না, মুসলমানদেরকে শেয়াল-কুকুর প্রকাশ্যে পিটিয়ে সোজা করার মানসিকতা রাখতে হবে। মুসলমানদের বুঝতে হবে যে, তাদের প্রতিবেশী হিন্দুদের চেহারাসুরত মানুষের মতো হলেও তাদের শরীরে রয়েছে কুকুরের রক্ত, আর কুকুর কেবল লাঠির ভাষাই বোঝে।

Post a Comment

 
Top