১) বদর জিহাদে মুসলমানদের সংখ্যা ছিলো ৩১৩ জন, আর কাফিরদের সংখ্যা ছিলো ১০০০।
২) উহুদ জিহাদে মুসলমানদের সংখ্যা ছিলো ৭০০ জন, আর কাফিরদের সংখ্যা ছিলো ৩০০০।
৩) বায়তুল মুকাদ্দাস শরীফ দখলের সময় (ক্রুসেড যুদ্ধে) হযরত সালাউদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি’র সৈন্য সংখ্যা ছিলে ৪০,০০০ এবং কাফিরদের সৈন্য সংখ্যা ছিলো ৫ লক্ষ।
৪) পানিপথের জিহাদে মুসলমানদের সংখ্যা ছিলো ৫৩,০০০ এবং কাফির হিন্দুদের সংখ্যা ৩ লক্ষ।
উপরোক্ত ইতিহাসগুলো আমরা সকলেই জানি, মুসলমানরা খুব অল্পসংখ্যক হয়েও কাফিরদের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছেন। বিপরীতে মুসলমানরা যতোবার হেরেছে, ততোবার তাদের কাফিরদের তুলনায় শক্তি-সামর্থ্য অনেক বেশি থাকার পরও হেরেছে। কিন্তু ইতিহাসের সেই দিকটি আমরা আলোচনা করি না, তাই আমাদের ভুলও আমাদের চোখে ধরা পড়ে না।
১) স্পেনের মুসলমানরা জ্ঞানবিজ্ঞানের দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে ছিল, বিপরীতে স্পেনের খ্রিস্টানরা ছিল অশিক্ষিত সম্প্রদায়। স্পেনের মুসলমানরা বিভিন্ন মহাকাশবিজ্ঞান ও সৌরজগত বিষয়ক যন্ত্রপাতি তৈরী করতেন। সেরকম একটি যন্ত্রের ব্যবহার না জানায় স্পেনের খ্রিস্টানরা সেই যন্ত্রটি নিয়ে তাদের গির্জার সিলিংয়ে শোপিস হিসেবে ঝুলিয়ে রাখে!
এরকম মূর্খ ও পশ্চাৎপদ একটি সম্প্রদায়ের হাতে মুসলিমরা তখন পরাজয় বরণ করেছিল, কারণ তাদের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল খ্রিস্টানপ্রীতি। তারা খ্রিস্টান মেয়ে বিয়ে করত, বিশ্বাস করত খ্রিস্টানরা তাদের শত্রু নয়।
২) স্পেনের মুসলমানরা যেভাবে এগিয়ে ছিল, ঠিক সেভাবেই ভারতবর্ষের মুসলমানরাও খ্রিস্টান ও হিন্দুদের তুলনায় অনেক এগিয়ে ছিল। ১৮৫৭’র সিপাহী বিদ্রোহের সময় খ্রিস্টানরাও বিশ্বাস করত না যে, তারা মুঘলদের বিপক্ষে জিততে পারবে। প্রাবন্ধিক নীরদ সি চৌধুরী তার ‘আমার দেশ আমার শতক’ বইতে একটি ঘটনা উল্লেখ করেছে। সেটা হল, বঙ্কিমচন্দ্র যখন সিপাহী বিদ্রোহ চলাকালীন সময়ে ব্রিটিশদের কাছে চাকরি নিতে যায়, তখন ব্রিটিশরা তাকে বলল যে, “আমরা তো আর বেশিদিন ভারতে থাকতে পারব না, তুমি আমাদের অধীনে চাকরি নিচ্ছ কেন?”
উত্তরে বঙ্কিমচন্দ্র বলেছিল, “ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ দখল করবে এটা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। এটা বিশ্বাস না করলে আমি কিছুতেই চাকরি নিতে আসতাম না।”
বঙ্কিমচন্দ্র এই কথাটি বলতে পেরেছিল, কারণ সে হিন্দু হিসেবে বুঝত হিন্দুপ্রীতি মুসলমানদের মনমগজকে কতোটা গ্রাস করেছিল সেই সময়টিতে। বাহাদুর শাহ জাফরের ইতিহাস তো আমরা সকলেই জানি।  আর এই হিন্দুপ্রীতির কারণে হিন্দুরা মুসলমানদের এতোটা গোপনীয় খবরও জানত, যেটা ব্রিটিশরাও জানত না। সেইসব খবর সিপাহী বিদ্রোহের সময় ব্রিটিশদের নিকট পাচার করত হিন্দুরা। ফলশ্রুতিতে ঘটে মুসলমানদের পতন আর ইংরেজদের উত্থান।
৩) বর্তমান যুগেও একই অবস্থা বিরাজমান। আপনি ওয়াল্র্ডম্যাপে স্বাভাবিক সাইজে ‘ইসরায়েল’ নামক দেশটি দেখতেই পাবেন না, পাশ্ববর্তী মিসর ও জর্ডানের তুলনায় তার সাইজ এতোটাই ছোট। কিন্তু তারপরও সে মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাব বিস্তার করে আছে, কারণ মিসর-জর্ডান ও ফিলিস্তিনবাসীর মনে রয়েছে ইহুদীপ্রীতি, অনেকটা আমাদের দেশের হিন্দুপ্রীতির ন্যায়। মিসরে রমজান মাসে এমন টিভি সিরিয়াল প্রচার করা হয়, যেখানে ইহুদীদের ‘ভালো মানুষ’ হিসেবে চিত্রিত করা হয়। 
এই ইহুদীপ্রীতি যদি পাশ্ববর্তী বড় বড় মুসলিম দেশগুলোর না থাকত, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ইসরায়েলকে অনেক আগেই পিঁপড়ের মতো টিপে মেরে ফেলা যেত। বিশ্বের ইতিহাস অতীত থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সবসময় এরকম ঘটনাই ঘটেছে, বদর-ওহুদ থেকে শুরু করে পানিপথ পর্যন্ত মুসলমানরা যতোবার জিতেছে, ততোবার তারা সংখ্যায় খুব কম হয়েও কাফিরদের উপর বিজয়ী হয়েছে। কারণ তখন তাদের কাফিরদের প্রতি বিদ্বেষ ছিল।
ঠিক উল্টোভাবে মুসলমানরা যতোবার হেরেছে, ততোবার সংখ্যা-শিক্ষা সবদিক দিয়ে এগিয়ে থেকেও তারা কাফিরদের নিকট পরাজয় বরণ করেছে, কারণ তাদের মনে জন্ম নিয়েছিল কাফিরদের প্রতি মুহব্বত। শত্রুর প্রতি এই ভালোবাসা জন্ম দেয়ার প্রক্রিয়াকেই কেজিবির গোয়েন্দা আলেক্সান্ডার ব্রেজনেমভ নাম দিয়েছিল ‘ডিমরালাইজেশন’। যখন মুসলমানরা ‘ডিমরালাইজড’ হয়, তখন তারা সংখ্যা-শক্তির বিচারে হাজার এগিয়ে থাকলেও কাফিরদের দ্বারা পর্যুদস্ত হয়।
Next
This is the most recent post.
Previous
Older Post

Post a Comment

 
Top