মোদিকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার পক্ষে অনলাইনের ধুতি-নেংটিবাহিনী যেসব কুযুক্তি উপস্থাপন করছে, শিরোনামেরটি তার অন্যতম। জিওপলিটিক্সের বিচারে উপরের প্রশ্নটি হাস্যকর মূর্খতার পরিচায়ক, তারপরও ধুতিবাহিনী এটা দিয়ে মার্কেট দখল করতে পারছে কারণ এর সহজ জবাবটি দেয়ার মতো কোন কথিত সেলিব্রিটি অনলাইনে নেই।

এখানে আমাদেরকে বুঝতে হবে যে ভুট্টো কে, আর মোদি কে? ভুট্টো ছিল রুশ-চীন ব্লকের সদস্য, শেখ মুজিবও ছিল রুশ ব্লকের সদস্য। তারা উভয়ে একই গোত্রের সদস্য হিসেবে পরস্পরের বন্ধু, যেটা কিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাজ মার্কা ইতিহাস প্রচারের কারণে এদেশের অধিকাংশ লোকই জানে না। উনসত্তরের গণঅভ্যূত্থানের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন। এই অভ্যুত্থানে আইয়ুব খান পদত্যাগ করে, এরপর সত্তরের নির্বাচন হয় এবং সত্তরের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট গণ্ডগোল থেকেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ হয়।

উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল শেখ মুজিব, এটা সবাই জানে। আর পশ্চিম পাকিস্তান অংশে নেতৃত্ব দিয়েছিল ভুট্টো। রুশ গোয়েন্দা ভাসিলি মিত্রোখিনেরমিত্রোখিন আর্কাইভবইটির নাম সবাই শুনেছেন। বইটিতে উল্লেখ রয়েছে যে তৎকালীন কেজিবি মাস্টারমাইন্ডরা ঠিক করেছিল যে সত্তরের নির্বাচনে পাকিস্তানের পশ্চিম অংশে ভুট্টো, আর পূর্ব অংশে মুজিবকে নিরঙ্কুশ বিজয়ী করতে হবে। কারণ এরা দুজনই তাদের লোক।
গতানুগতিক চেতনাসর্বস্ব ইতিহাস পড়ে এসব জানা যাবে না। এদেশে প্রচার করা হয় যে, পাকিস্তানী হানাদারদের অত্যাচারের সহযোগী ছিল ভুট্টো, সম্পূর্ণ ভুয়া কথা। ভুট্টোকে নিয়ে উইকিপিডিয়ায় লেখা আছে, তাকে শেখ মুজিবের সাথে একই জেলে ভরেছিল ইয়াহিয়া খান। শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে যেমনদেশদ্রোহিতারঅভিযোগ এনেছিল সামরিক আদালত, ভুট্টোর বিরুদ্ধেও ঠিক একই অভিযোগ আনা হয়েছিল।

এটাই কিন্তু স্বাভাবিক, কারণ পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সবসময়ই আমেরিকান রিপাবলিকান ব্লকের অনুগামী। ইয়াহিয়া খান সামরিক শাসক হিসেবে রিপাবলিকান ব্লক, ভুট্টো রুশ-চীন ব্লক। সে হিসেবে এরা একে অপরের শত্রু, ঠিক বিপরীতভাবে একই ব্লকের সদস্য হওয়ার কারণে ভুট্টো-মুজিব ছিল পরস্পর বন্ধু।

১৬ই ডিসেম্বর হেরে যাওয়ার পর ইয়াহিয়া খান ভগ্নহৃদয়ে ভুট্টোকে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। রুশ ব্লকের ভুট্টো জেল থেকে বের হয়ে ক্ষমতা নিয়ে শুরুতেই মার্কিন ব্লকের ইয়াহিয়াকে হাউজ এরেস্ট করে। সাথে সাথে সামরিক আদালতের রায়েমৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ মুজিবের উপরে প্রদত্ত রায়কে বাতিল করে, তাকে মুক্তি দিয়ে সসম্মানে ঢাকা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করে।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন, ভুট্টোকে শেখ মুজিব বাংলাদেশে লালগালিচা সম্বর্ধনা দেবে এটাই স্বাভাবিক, না দেয়াটাই বরং অকৃতজ্ঞতা হতো।

এখন প্রশ্ন হতে পারে মোদি কে? মোদি হচ্ছে মার্কিন রিপাবলিকান ব্লকের সদস্য, যেই রিপাবলিকান ব্লকের চক্রান্তে শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। শুধু শেখ মুজিব নয়, ভুট্টোকেও এই রিপাবলিকান ব্লকের ইশারায় ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল একদা তারই অনুগত জিয়া-উল-হক। ভুট্টোকে সরিয়ে ক্ষমতা দখলের পরপরই জিয়া-উল-হক ইয়াহিয়া খানকে হাউজ এরেস্ট থেকে মুক্তি দিয়েছিল, যেভাবে একই ব্লকের সদস্য হওয়ার কারণে মুজিবকেও সামরিক আদালত থেকে মুক্তি দিয়েছিল জুলফিকার আলী ভুট্টো।

যদি ভু্ট্টোর সাথে মোদির তুলনা করা হয়, সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হবে যে মোদি হাসিনাকে কখন, কোথায় রক্ষা করেছে? হাসিনাকে রক্ষা করেছিল রুশ ব্লকের কংগ্রেস, তার পিতার হত্যাকাণ্ডের পর হাসিনার গোটা পরিবারকে তারা রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছিল। সে হিসেবে যদি কংগ্রেসের কাউকে দাওয়াত দেয়া হতো মুজিববর্ষে, সেটা অধিকতর গ্রহণযোগ্য হতো। কিন্তু তা না করে মার্কিন ব্লকের মোদিকে আমন্ত্রণ দেয়াটা খুব ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়। হাসিনা তার নিজ ব্লকের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে কোন সর্বনাশা খেলায় মেতে উঠেছে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। 


Post a Comment

 
Top