আমাদের দেশে বর্তমানে যে মোদিবিরোধী আন্দোলন চলছে, তার মূল দাবি আওয়ামী লীগ সরকারকে মোদির আমন্ত্রণ বাতিল করতে হবে। বলা বাহুল্য, আওয়ামী লীগ এই কাজটি করবে না। বরং সবাইকে এই বিষয়টি উপলব্ধির চেষ্টা করতে হবে যে, মোদি কেন এদেশে আসতে চায়? সেটা উপলব্ধিতে এনে তার বিপরীত পদক্ষেপ জনগণকে নিতে হবে।

মোদির যেসব বিষয় কাম্য, বলা বাহুল্য সেগুলো এদেশের মুসলমানরা প্রতিনিয়তই বুঝে-না বুঝে আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে। হোটেলে হোটেলে নো বিফ সাইন ঝুলিয়ে গরুর গোশত বিক্রি বন্ধ করা, কোনো ব্যবসায়ী খাবারে গরুর গোশত দিলে তাকে হিন্দুর পা ধরিয়ে ক্ষমা চাওয়ানো, সরস্বতী পূজার মতো একটি অগুরুত্বপূর্ণ সংখ্যালঘু উৎসবের জন্য নির্বাচন-এসএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া, এদেশের মুসলমানদের মৌন সমর্থনেই হয়েছে। 

এছাড়াও এই মার্চ মাসেই হিন্দুরা আরেকটি বড় পদক্ষেপের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে, তা হলো আগামী ১৫ই মার্চ চট্টগ্রামে দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মন্দির তারা উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়েছে, যেই মন্দির নির্মাণ করছে আর কেউ নয়, চট্টগ্রামের বাচ্চাদেরহরে কৃষ্ণবলিয়ে প্রসাদ খাওয়ানো সেইইসকন মিডিয়াতে এসেছে, রাজস্থানের মাকরানা মার্বেল দিয়ে নির্মিত হয়েছে পুরো মন্দির। দরজা-জানালার কাঠ সংগ্রহ করা হয়েছে আফ্রিকা মায়ানমার থেকে। মন্দিরের দৈর্ঘ্য ১শ ফুট, প্রস্থ ৫০ ফুট এবং উচ্চতা ৬৫ ফুট। ১৮ গণ্ডা জায়গায় ৯টি গম্বুজবিশিষ্ট এই মন্দির স্থাপিত হয়েছে। বিশ্বের ৩৬টি দেশের ১৩০ জনের কৃষ্ণভক্ত দল, ২০-২৫ জন সন্ন্যাসী এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ, কৃষ্ণভক্ত সেবকরা আসছে মন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে।

যদি বাংলাদেশ স্বাভাবিক কোনো দেশ হতো, তাহলে চট্টগ্রাম তো বটেই, গোটা দেশেই ইসকনের কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষিত হতো। কিন্তু তা তো হয়ই নি, উল্টো চট্টগ্রামেই ইসকন কর্তৃক দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মন্দিরটি নির্মিত হচ্ছে, যা ব্যবহৃত হবে তাদের প্রধান কার্যালয় হিসেবেও। দেখা যাবে, চট্টগ্রাম এলাকাটি উল্টো ইসকনের এই মন্দিরটির নামেই পরিচিত হচ্ছে, সবাই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসছে মন্দির দেখতে। যে চপেটাঘাত বোঝার সামর্থ্য চট্টগ্রামবাসীর নেই।

আমাদের এগুলো দেখতে হচ্ছে কারণ এটা বাংলাদেশ, অথর্ব অছাম্প্রদায়িক মুসলমানদের দেশ। সরকারের কারণে আমরা পারি না, এই ন্যাকামি এখানে চলবে না, কারণ ইসকনের প্রসাদ খাওয়ানোর পরও চট্টগ্রামে অভিভাবকেরা নূন্যতম প্রতিবাদ জানায়নি। ঢাকায় আইডিয়াল স্কুলে ওড়না বাতিলের কারণে স্কুলের সামনে অভিভাবকেরা দিনের পর দিন বিক্ষোভ করেছে, কিন্তু হাজারো স্কুলশিক্ষার্থীকে হরেকৃষ্ণ বলিয়ে প্রসাদ খাওয়ানোর প্রতিবাদে চট্টগ্রামের অভিভাবকেরা একটি মানববন্ধনও করেছিল কী?

সম্পর্কে একটি পোস্ট তখন লিখেছিল জনৈক আদিল উমর। তাতে শুরুতেই লেখা হয়েছিল- “হিন্দুদের সংগঠন 'ইসকন' চট্টগ্রামে যা করেছে তার বিপরীতে প্রথম রিএকশানটা দেখানো উচিত ছিল অভিভাবকদের। যেসব স্কুলে তারা পূজার প্রসাদ খাইয়েছে এবং ছোট ছোট বাচ্চাদের হিন্দুদের ধর্মীয় স্লোগান দেওয়ানো হয়েছে এসব স্কুলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত ছিল অভিভাবকদের। এরকম কিছু চোখে পড়েনি। কারণ আমাদের অভিভাবকরা এসব নিয়ে আসলে মাথা ঘামায় না, তার উপর অনেকের কাছেই ইসকনের এই কাজটা নিতান্ত 'ভালো কাজ' বলে মনে হবে। আর এই সচেতনতার অভাবটা তৈরি করেছে আমাদের আলেমরা। আচ্ছা আজকে চট্টগ্রামের কয়টা মসজিদে এই ইশ্যুতে খুতবা দেওয়া হয়েছে? মানুষকে সচেতন করা হয়েছে? হেজাফত ইসলাম বিক্ষোভ মিছিল করেছে, কিন্তু এতে কি আসলে মানুষের মাঝে সচেতনতা এসেছে? মানুষ বিক্ষোভ মিছিলকে "হেফাজতের মিছিল" হিসেবে নিয়েছে, নিজেদের হিসেবে নেয়নি।

ধরে নিতে পারেন, আগামী ১৭-১৮ই মার্চ যে মোদি আসবে, তার সফরসূচির একটি অন্যতম বিষয় হবে এই মন্দিরটি। হতেই হবে, কারণ এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মন্দির। সুতরাং এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে যদি বাবরি মসজিদের ন্যায় কিছু একটা করা যায়, তবে মোদির আগমন কিছুটা হলেও অনিশ্চয়তার মুখে ফেলা সম্ভব।

কারণ শুরুতে বলেছি যে, মোদি আসার মনস্তত্ত্ব বুঝে কাজ করতে হবে। মুজিববর্ষে আমন্ত্রণ জানানোর প্রেক্ষিতে মোদি হলো মনিব, আর আওয়ামী লীগ হলো গোলাম। মনিব হিসেবে মোদি চিন্তা করবে যে, আওয়ামী লীগ যেহেতু আমার চাহিদা অনুসারে কাজ করেছে, সেহেতু তাদের পদধূলি দিয়ে আসি। 

সুতরাং মোদির চাহিদার বিপরীতে এদেশের জনগণ পদক্ষেপ নিলে, তখনই মোদি আওয়ামী লীগের মনিব হিসেবে গোস্বা করে বলবে, যা তোদের দেশে আসব না। তা ব্যতীত কখনোই আওয়ামী লীগ নিজে থেকে আমন্ত্রণ বাতিল করবে না।

Post a Comment

 
Top