(১)
দিল্লীতে মুসলমান হত্যা হয়েছে, এটা নিয়ে ফেসবুকে বাংলাদেশের হিন্দুদের কোনো অনুশোচনা নেই। বরং তারা দিল্লীতে তাদের হিন্দু ভাইদের দাঙ্গার জাস্টিফিকেশনে উল্টো সিরিয়া-ইয়েমেন টেনে আনছে, যে সেখানে মুসলমান মারলে আমরা মারতে দোষ কী?
এর উত্তর সোজাসাপটা, সিরিয়া কিংবা ইয়েমেনে কেউই একে অপরকে মুসলমান হিসেবে মারছে না। বরং সামরিক সংঘাতের অংশ হিসেবে তুর্কীরা সিরীয় হিসেবে, আর সিরীয়রা তুর্কী হিসেবে প্রতিপক্ষকে মারছে। ইয়েমেনের বিষয়টিও তদ্রুপ। কিন্তু ভারতে মুসলমানদের হত্যা করা হচ্ছে মুসলমান এবং স্রেফ মুসলমান হিসেবেই, এবং তা কোনো সামরিক সংঘাতের অংশ হিসেবেও নয়। বিজেপির শো-বয় মার্কা মুসলমান নামধারী নেতাকেও হিন্দুরা পুড়িয়ে মেরেছে ‘মুসলমান’ পরিচয়ের কারণে, বিজেপি করার পরও তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস করছে ‘মুসলমান’ ট্যাগ থাকার কারণে।
সিরিয়া কিংবা ইয়েমেনের সাথে ভারতের ঘটনা কোনোভাবেই খাপ খায় না, বরং এটি জাস্টিফায়েড হতো যদি ভারতের উছিলা দিয়ে বাংলাদেশে হিন্দুদের ক্ষেত্রে কিছু করা হতো। ভারতেরটা নিঃসন্দেহে বেসামরিক সাম্প্রদায়িক গণহত্যা, সেটাকে পুঁজি করে এদেশেও অনুরূপ কিছু করে তা জাস্টিফাই করা যেতে পারে, করা উচিত।
ছি ছি, আপনি জানেন দিল্লীর মসজিদের চূড়া থেকে ‘হিন্দু ভাই’ হনুমানের পতাকা খুলে নিয়েছে? সব ইন্দু তো খারাপ না!
(২)
দিল্লীর ঐ পতাকা খুলে নেয়া নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের জিম নওয়াজ। তাতে রয়েছে, মসজিদে শুধু পতাকা টানানো নয়, বরং মসজিদের গায়ের নকশাখচিত পাথর খুলে নিয়ে সেখানে কালী মূর্তি সেট করে দিয়েছিল দাঙ্গাকারী হিন্দু সম্প্রদায়। তা নিয়ে পুলিশের নিকট অভিযোগ গেলে পুলিশ প্রথমে অস্বীকার করে (তা তো করবেই), কিন্তু পরবর্তীতে সমালোচনার মুখে পুলিশ এক হিন্দু মিস্ত্রিকে নিয়ে মূর্তিটি খুলতে যায়। ঐ হিন্দু মিস্ত্রি মূর্তিটি খুলে নেয়ার সাথে পতাকাটিও নামিয়ে আনে, আর সেটাকেই ভাইরাল করা হয়েছে ‘হিন্দুদের মহানুভবতা’ নামে।
উল্লেখ্য, বাবরি মসজিদের ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৪৯ সালে মসজিদটিতে একটি রামের মূর্তি রাখার মাধ্যমে। স্থানীয় মুসলমানরা নিজেরা মূর্তি সরায়নি, কারণ তাতে দাঙ্গা লেগে যেতে পারত। তারা পুলিশের নিকট অভিযোগ করে এবং পুলিশও অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাবরি মসজিদকে তালাবদ্ধ করে সীলগালা করে দেয়। এরপর বাবরি মসজিদ ভাঙার আগপর্যন্ত সেখানে কোনো নামায অনুষ্ঠিত হয়নি।
দিল্লীর মসজিদের ক্ষেত্রে পুলিশ অনুরূপ ‘মহানুভবতা’ দেখায়নি, কারণ দিল্লীর মসজিদ তাদের নিকট বাবরি মসজিদের অনুরূপ তাৎপর্য বহন করে না। তাই তারা মসজিদগাত্র থেকে মূর্তি খুলে নিয়েছে এবং তা অবশ্যই হিন্দু মিস্ত্রী দিয়ে, মুসলমান দিয়ে খুললে যে ‘ভালো হিন্দু’ ভাইয়েরা ফের দাঙ্গা শুরু করবে। ভারতীয় মুসলমানরাও আনুগত্য প্রমাণে সদা প্রস্তুত, তারাও এই ঘটনা ছড়িয়ে বলেছে দেখ সব হিন্দু খারাপ হয়ে যায় নি!
(৩)
বাংলাদেশের চট্টগ্রামে হিন্দুরা ইসকনের প্রধান মন্দির উদ্বোধন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। খবরে এসেছে, ২০১০ সাল থেকে শুরু হয় কর্মযজ্ঞ। ভারতীয় ৩০ জন ও বাংলাদেশী অর্ধশত শ্রমিক মিলে ৯ বছর ধরে একটানা কাজ করে গড়ে তুলেছে পুরো মন্দিরের কাঠামো। ২০১৩ সাল থেকে রাজস্থানের শ্রমিকরা মার্বেল পাথরে সনাতনী চিত্রকলা খোদাই করে তা প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু করে। ভেতরে প্রতিটি দেওয়ালজুড়ে আছে চোখ জুড়ানো নকশা, বসছে ঝাড়বাতি। মায়ানমার থেকে আনা কাঠ দিয়ে তৈরি দরজা-জানালায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শৈল্পিক কারুকাজ।
এখন বিষয়টি হলো, অতীতে ঢাকার রমনায় একটি ছাপড়া মন্দিরকে নিয়ে গাঁজার আসর জমিয়েছিল মুসলিম নবাবের হিন্দু মালীর বৌ। সেই হিন্দু কাজের বুয়া-বেটির শিষ্যরা সেই ছাপড়ার দোহাই দিয়ে পুরো রমনা পার্কই দখল করে নিয়েছে। সেক্ষেত্রে ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরীকৃত মার্বেল পাথরের ঝাড়বাত্তিওয়ালা মন্দির দিয়ে চট্টগ্রাম দখল করা কি খুব কঠিন, ফ্রান্স?
দিল্লীতে এতগুলো মসজিদ ভাঙা হলো, বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির নির্মাণের রায় হলো, এর প্রতিক্রিয়ায় অন্তত এই মন্দিরটির তো কিছু করা যেতে পারে। কিন্তু চট্টগ্রামের মুসলমানরা কিছু করবে না, এই ইসকন তাদের বাচ্চাদের হরেকৃষ্ণ রাম রাম বলিয়ে প্রসাদ খাওয়ালেও না। এরকম মুসলমান নামধারী জাতির দুনিয়ায় টিকে থাকার কী কারণ থাকতে পারে?
বলতে না চাইলেও ভেতর থেকে বের হয়, এদেরই তো ধ্বংস হওয়া দরকার, হওয়া উচিত।
পুনশ্চঃ নিচের ছবিগুলো ফেসবুক থেকে প্রাপ্ত, মন্দিরটি আগামী ১৫ মার্চ উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়েছে তারা। এই মন্দির নিয়ে চট্টগ্রামের মুসলমানরা গর্ব করে বলবে, দেখ আমাদের শহরে দেখার মতো ইসকন মন্দির আছে, তোদের ভুইঙ্গাদের জেলায় কি আছে?

Post a Comment

 
Top