একটি বিষয়ে সবাই একমত হবেন, তা হলো বর্তমান যুগে নাস্তিকদের মূল সাধনা হচ্ছে কিভাবে হিন্দুয়ানী রিচুয়াল পালনের মাধ্যমে নিজেকে ‘পোগোতিশীল’ ‘অছাম্প্রদায়িক’ প্রমাণ করা যায়। শুধু বাংলাদেশ নয়, পাক-ভারত উপমহাদেশের সামগ্রিক চিত্রপট একই। তবুও প্রায়ই দেখা যায়, নাস্তিকদের সাথে হিন্দুদের কোন বিষয়ে সামান্য বনিবনা না হলেই হিন্দুদের চোখে তারা আর নাস্তিক থাকে না। তখন ঐসব নাস্তিকগুলোকেই ‘মুসলমান’ ‘‘মৌলবাদী’ ইত্যাদি বলে দুর দুর করে তাড়িয়ে দেয় তাদেরই সহযোগী হিন্দু সম্প্রদায়!

যে কারণে আমরা দেখতে পাই, পাশ্ববর্তী ভারতের বলিউডের মুসলমান নামধারী অভিনেতারা যতোই হিন্দুপ্রীতি দেখাক না কেন, যখনই তারা বাড়িভাড়া নিতে যায়, তখনই তাদের মুখের ওপর না করে দেয়া হয় এই বলে যে, তারা মুসলমান। আমির খানের মতো অভিনেতাকেও পান থেকে চুন খসালেই বলা হয়, তুমি পাকিস্তানে চলে যাও! তারা যতোই মন্দিরে যাক, যতোই প্রসাদ খাক, যতোই হিন্দু হওয়ার কসরত করুক, কিছুই কিন্তু শেষমেষ কাজে আসে না।

বাংলাদেশে ওমেনচ্যাপ্টার নামক ওয়েবসাইটটি নিজেকে দাবি করে থাকে নারীবাদী পোর্টাল হিসেবে, কিন্তু তাদের অধিকাংশ পোস্টই হয় হিন্দুধর্মের পক্ষ নিয়ে ইসলাম অবমাননাকারী পোস্ট। গত দুর্গাপূজার সময়ে ওমেনচ্যাপ্টার সাইটটিতে ‘যে উৎসব সর্বজনীন’ নামে একটি আর্টিকেল ছাপা হয়, যেখানে খুব চাচাছোলা ভাবে বলা হয়েছে যে,  মুসলমানদের ঈদ খারাপ আর হিন্দুদের পূজা ভালো! কারণ নিচের ছবিতে দেয়া ওয়েবসাইটটির পরিচালিকা সুপ্রীতি ধর নামক হিন্দু মহিলাটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই এটি, কিভাবে ইসলাম অবমাননা করে তার নিজের হিন্দুধর্মকে তুলে ধরা যায়।

সম্প্রতি সুপ্রীতি ধরের একটি পোস্টে নারীবাদের আড়ালে তার এই চেহারাটি খুব নগ্নভাবেই ফুটে উঠেছে। ওমেনচ্যাপ্টারে তার সহযোগী কিছু ধুমসি মাসী আছে, তাদের কারো একজনের বাসায় গিয়ে সে দেখেছে, বাসার টয়লেটে বুদ্ধ আর রাধাকৃষ্ণের মূর্তি সাজানো। এ দেখে তার হিন্দুধর্মীয় চেতনা চাগা দিয়ে উঠল। স্ট্যাটাস দিয়ে বসল, টয়লেটে হিন্দুর মূর্তি থাকলে মুসলমানদের কুরআন শরীফ থাকবে না কেন? (নাউযুবিল্লাহ)

স্বাভাবিকভাবেই সুপ্রীতি ধরের সহযোগী মাসিগুলো তার যুক্তি খণ্ডন করে নানা কমেন্ট করতে থাকে। একপর্যায়ে সুপ্রীতি ধর বলেই বসে, তোমরা মুসলমান তাই তোমরা খারাপ! সুপ্রীতি ধরের দীর্ঘদিনের সহযোগী Moonmoon Sharmin Shams এ প্রসঙ্গে লিখেছে-

//তখন আমার কোনদিন মনে পড়েনি তিনি হিন্দু ঘরের সন্তান এবং তারও মাথায় আসেনি আমি মুসলিম। ঠিক যেরকম নাহিদ সুলতানা, সাদিয়া নাসরীন, লীনা হাসিনা হককেও তার এতদিন মুসলিম মনে হয়নি। বিপদে আপদে তিনি এই “মুসলিমদের” কাছেই ছুটে গেছেন এবঙ এই ”মুসলিমরাই’ তাকে উদ্ধার করেছে।//

হায়রে কপাল! এতোদিন কসরত করে, গালে মাথায় সিঁদুর লাগিয়ে পূজার প্রসাদ গিলে শেষমেষ কিনা ‘মুসলমান’ই থেকে গেল এসব নাস্তিকগুলো। নাস্তিকেরা হয়তো মুসলিমবিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে হিন্দুদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে, কিন্তু এটি আসলে পরের জন্য গর্ত খুঁড়ে নিজেই সেই গর্তে পড়ার মতো।

কারণ বিরোধ উপস্থিত হলে হিন্দুটি দেখবে না, সে ‘নাস্তিক মুসলিম’ নাকি ‘ধার্মিক মুসলিম’। নীরদ সি চৌধুরী তার আত্মজীবনীতে লিখেছিল- Nothing was more natural for us than to feel about the Muslims in the way we did. অর্থাৎ মুসলমানদের প্রতি হিন্দুদের যে বিদ্বেষ, তা তাদের প্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত। হরিণ দেখলেই বাঘ তার থাবা বসিয়ে দেয়, কারণ সেটি তার প্রকৃতি। ঠিক সেভাবেই কোন আত্মস্বীকৃত নাস্তিকের সাথে ঝগড়া হলেও হিন্দুটি কিন্তু তাকে তার মুসলমান পরিচয় তুলে কটাক্ষ করতে ছাড়বে না। পাশ্ববর্তী ভারতে একটি ঘটনা বেশ আলোড়নের সৃষ্টি করেছে, তা হলো সেদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিএমের ঋতব্রত বন্দোপাধ্যায় নামক এক নেতা দলের আরেক নেতা মুহম্মদ সেলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, সে নাকি ধর্মীয় কোটায় দলে জায়গা পেয়েছে!

অর্থাৎ এক হিন্দু কমিউনিস্ট, আরেক কমিউনিস্টকে তার ‘মুসলমান’ পরিচয় তুলে কটাক্ষ করেছে। হিন্দুদের ক্ষেত্রে এটি খুবই স্বাভাবিক বিষয়। সুতরাং নাস্তিকেরা নিজেরাই চিন্তা করুক, যদি তারা হিন্দুদের সাথে গাঁটছড়া বেঁধে অখণ্ড ভারত কায়েম করেও, সেখানে কি তারা শান্তিতে থাকতে পারবে? একসাথে থাকতে গেলে তো ঝগড়া হয়ই, আর ঝগড়া হলেই সুপ্রীতি ধরের মতো হিন্দুরা তাদের দিকে আঙ্গুল তুলে বলবে, তুই শালা মোছলমান! মোছলমান মাত্রই খারাপ।

Post a Comment

 
Top