পশ্চিমবঙ্গের মূর্খমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে হিন্দুত্ববাদীরা ডেকে থাকে ‘মমতাজ বেগম’। এমনভাবে প্রচার চালায়, যেন মমতা মানেই কট্টর ইসলামপন্থা বা এধরণের কিছু। এবছরের দুইটি ঘটনা এ প্রসঙ্গে তুলে ধরা যায়। সম্প্রতি যে দুর্গাপূজা গেল, সেখানে মমতা বন্দোপাধ্যায় নিজের থেকে পূজার ছুটি বৃদ্ধি করে টানা ১৫ দিন ছুটি দিয়েছে পূজা উদযাপনের জন্য।

বিপরীতে পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানদের ঈদের ছুটি মাত্র ১ দিন। বারবার দাবি জানানোর পরও যখন ঈদের ছুটি আরো ১ দিন বাড়িয়ে ২ দিন করা হলো না, তখন ফুরফুরা শরীফের ত্বহা সিদ্দিকী কালো ব্যাজ ধারণ করে ঈদের নামায পড়ার ঘোষণা দিল।

এর পরও বলা হচ্ছে মমতা ‘ইসলামপন্থী’। কারণ সেক্ষেত্রে মুসলমানদের চাহিদাও মমতা পর্যন্তই আটকে থাকবে, ইসলামপন্থার নামে সফট হিন্দুত্বে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে তারা। পশ্চিমবঙ্গের এক ফেসবুকার তার স্ট্যাটাসে লিখেছিল-

"জীবনে কখনই টিএমসিকে (তৃণমূল বা মমতাকে) ভোট দিইনি। কিন্তু এবার দেবো। আমি টিএমসিকে একদমই পছন্দ করিনা। তবুও টিএমসিকেই ভোট দেবো। আমার কাছে তথ্য রয়েছে, টিএমসি সরকার সরাসরি ওবিসি নিয়ম অমান্য করে প্রাপ্য শিক্ষা, চাকুরী থেকে মুসলিমদের বঞ্চিত করছে। তবুও ভোটটা টিএমসিকেই দেবো। কারণ... কারণ, আমার কাছে অল্টারনেটিভ যে কিছু নেই। টিএমসিকে ভোট না দিলে তো বিজেপির লাভ।”

এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের নিজেদের রাজনৈতিক দল গঠন করে ক্ষমতায় আসা। কিন্তু সেই পথে মুসলমানরা এগোতেই পারবে না, কারণ হিন্দুত্ববাদীদের প্রচারণায় ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে ‘ইসলামী আগ্রাসন’ বলতে পূজায় ১৫ দিন ছুটি দেয়া মমতার সরকারকে বোঝাচ্ছে। এ অবস্থায় যদি ‍মুসলিম দলকে মঞ্চে আনা হয়, তাহলে মুসলমানদের কি হবে তা ভাবতেই তারা শিউরে উঠে! এমনিতেই তারা ‘সাম্প্রদায়িক’ হতে ভয় পায়।

কিন্তু এই ‘সাম্প্রদায়িক’ হতে ভয় পাওয়ার কারণেই ভারতের মুসলমানরা কখনোই তাদের অধিকার নিশ্চিত করা পর্যন্ত এগোতে পারেনি। ব্রিটিশ আমলে সফট হিন্দুত্বের ধারকবাহক কংগ্রেসকে ‘মুসলিম তোষণকারী’ বলে ব্যাপক প্রচার চালানো হতো। এর ফলে মুসলমানদের বড় অংশই কংগ্রেস পর্যন্ত এসে ঠেকে গেল, এর চেয়ে বেশি তারা এগোতে পারেনি। কারণ এমনিতেই সফট হিন্দুত্ববাদী কংগ্রেসকে ‘মুসলিম তোষণকারী’ বলা হচ্ছে, এর চেয়ে বেশি এগোলে তো ‘সাম্প্রদায়িক’ হয়ে যেতে হবে! আর মুসলমানরা এই ‘সাম্প্রদায়িক’ তকমাকে খুব ভয় পায়, তাই ভারতের মুসলমানরা কংগ্রেসকে অতিক্রম করে ‘মুসলিম লীগ’কে সমর্থন করতে পারেনি। যার ফলে তাদের অধিকারও আজপর্যন্ত নিশ্চিত হয়নি।

এভাবে সফট হিন্দুত্বকে ‘সাম্প্রদায়িক’ আখ্যা দিয়ে মুসলমানদের সেখানে আটকে রাখার প্রবণতা বাংলাদেশেও লক্ষণীয়। বাংলাদেশে কিছু হলেই টকশোতে বলা হয়, হেফাজতে ইসলাম ‘সাম্প্রদায়িক’। অথচ এই হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্র হাটহাজারী মাদ্রাসার ঠিক গা ঘেঁষেই হিন্দুদের মন্দির রয়েছে। সেই মন্দির নিয়ে মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টদের সে কি আবেগ! বাংলাদেশ প্রতিদিনে ছাপা হয়েছে-

//হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব ও হাটহাজারী মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী বলেন, ‘কওমি আলেমরা অন্য ধর্মের প্রতি সহানুভূতিশীল— তার জ্বলন্ত উদাহরণ হাটহাজারী মাদ্রাসা ও মন্দিরের পাশাপাশি অবস্থান। ’ দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার মুখপত্র মাসিক মঈনুল ইসলাম পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা মুনির আহমদ বলেন, ‘এশিয়ার সর্ববৃহৎ ও প্রাচীন ইসলাম শিক্ষাকেন্দ্র হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রধান জামে মসজিদের মাত্র ৫ গজের মধ্যেই হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্রী শ্রী সীতাকালী মায়ের মন্দির।//

উল্লেখ্য, বর্তমানে গোটা উপমহাদেশে ইসলামবিরোধী হিন্দু-বৌদ্ধ উগ্রবাদ দিনদিন বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের মুসলমানরা যদি ধর্মনিরপেক্ষতার গণ্ডিতে আটকে থাকে, আজ হোক কাল হোক তাদেরকেও রোহিঙ্গা হতেই হবে। আর বাংলাদেশের মুসলমানদের এই ধর্মনিরপেক্ষতার গণ্ডিতে আবদ্ধ রাখার উপায় হলো, হেফাজতে ইসলামের মতো সেক্যুলার সংগঠনকে ‘সাম্প্রদায়িক’ বলে চালিয়ে দেয়া। তাহলেই মুসলমানরা আর সত্যিকার অর্থে সাম্প্রদায়িক হতে পারবে না, বরং সেক্যুলারিজমের গণ্ডিতে থেকেই তারা নিজেদেরকে ‘ইসলামপন্থী’ মনে করে বিভ্রান্তিতে ভুগতে থাকবে।

এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় হলো, মুসলমানদেরকে নিজেদের সাম্প্রদায়িক চাহিদা বৃদ্ধি করতে হবে। ইউরোপের খ্রিস্টান দেশগুলোতে মসজিদের মিনার বানানোর অনুমতি নেই, কারণ সেখানকার খ্রিস্টানদের সাম্প্রদায়িক চাহিদা থাকায় তারা ইউরোপের মাটিতে সুউচ্চ কোন মুসলিম স্থাপনা দেখতে চায় না। বিপরীতে বাংলাদেশের মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক চাহিদা না থাকায় হিন্দুরা ফার্মগেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রাজপথ দখল করে পূজা করতে পারে। বাংলাদেশের মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক চাহিদা না থাকাতেই এদেশে রাস্তা বানানোর নামে মসজিদ ভেঙে দেয়া হয়, বিপরীতে হিন্দুদের সাম্প্রদায়িক চাহিদা আছে বলেই মন্দির টিকিয়ে রাখতে রাস্তাকে আঁকাবাকা করে দেয়া হয়।

পরিশেষে বলব, না কাঁদলে কিন্তু মা-ও দুধ দেয় না। সাতচল্লিশে ভারতের মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক চাহিদা ছিল না বিধায় তারা আজ পরাধীন জাতি, বিপরীতে বাংলাদেশের মুসলমানদের তখন সাম্প্রদায়িক চাহিদা ছিল বিধায় তারা আজ স্বাধীন দেশের নাগরিক। তাই কোন মুসলমান যদি বলে, হিন্দুদেরকে এদেশ থেকে বের করে দিতে হবে, তাকে নিরুৎসাহিত করবেন না। বরং নিজের মনেও ঐ মুসলমান ভাইটির মতো সাম্প্রদায়িক চাহিদা গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। সে যে সঠিক কথা বলছে, সেটা অদূর ভবিষ্যতে যখন নিজের চোখের সামনে হিন্দুদের দ্বারা মা-বোনদের ধর্ষিত হতে দেখবেন, তখন ঠিকই হাড়ে হাড়ে টের পাবেন।

Post a Comment

 
Top