কয়েকদিন আগে অতিবাহিত হলো পবিত্র শবে মিরাজের রাত্রি। স্বাভাবিকভাবেই এই রাত্রিকে কেন্দ্র করে সক্রিয় ছিলো নাস্তিক ও হিন্দু গোষ্ঠী। নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মিরাজের রাত্রিতে হযরত উম্মু হানী রদ্বিআল্লাহু তায়ালা আনহা উনার গৃহে অবস্থান করছিলেন, এ নিয়ে নাস্তিক ও হিন্দুরা নানারকম অাজগুবি অশ্লীল কল্পকাহিনী প্রচার করে থাকে।

নাস্তিকদের এসব অপপ্রচারের ভীড়ে অধিকাংশ মুসলমান হয়তো খেয়ালই করেনি যে, হযরত উম্মু হানী রদ্বিআল্লাহু তায়ালা আনহা উনার পরিচয় কী? উনার পরিচয় হলো, তিনি নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচা আবু তালিবের কন্যা। রসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শৈশবে দাদার নিকট প্রতিপালিত হন। এরপর ১০ বছর বয়স মুবারক থেকে প্রতিপালিত হন চাচা আবু তালিবের নিকট।

বলা বাহুল্য, নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট চাচা আবু তালিবের পরিবার নিজের পরিবারের মতোই ছিলো। ব্যবসাসূত্রে উনার চাচার সাথে তিনি বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করেছেন। যৌবনে উপনীত হওয়ার পর চাচার তত্ত্বাবধানেই হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সাথে শাদী মুবারক হয়েছিলো। ৪২ বছর ধরে আবু তালিব তিনি নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতের আনজাম দিয়েছেন। কুরাইশদের আক্রমণের মুখ থেকে উনাকে রক্ষা করেছেন।

উনার পুত্র হযরত আলী রদ্বিআল্লাহু তায়ালা আনহু হলেন নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জামাতা ও ৪র্থ খলীফা। এই আবু তালিব উনার পরিবারেরই একজন সদস্য হযরত উম্মু হানী রদ্বিআল্লাহু তায়ালা আনহা, যার গৃহে নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মিরাজের রাত্রিতে অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। এর মধ্যে অস্বাভাবিকতার কী আছে? নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো বাল্যকাল থেকেই উনাদের সাথে একই পরিবারে অবস্থান করেছেন। এসব নিয়ে নোংরামি তারাই করতে পারে, যারা জাতিগতভাবে নোংরা। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই মুশরিকরা নাপাক (সূরা তওবা, আয়াত শরীফ ২৮)




মূল ঘটনাটি হলো, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীবহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত ঘোষণার পর দুনিয়াবী হিসেবে ৫১তম বয়স মুবারকে ২৭শে রজব সোমবার রাত্রে উনার চাচাতো বোন হযরত উম্মু হানী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার বাড়ির এক হুজরা শরীফ-এ অবস্থান করছিলেন। তখন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এক পার্শ্বে শুয়ে ছিলেন প্রাণপ্রিয় চাচাজান হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এবং অন্য পাশে ঘুমিয়ে ছিলেন চাচাতো ভাই হযরত জা’ফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। এমতাবস্থায় হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি ও হযরত মীকাঈল আলাইহিস সালাম উনারা হুজরা শরীফ-এ প্রবেশ করে সালাম পেশ করেন এবং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অত্যন্ত তা’যীম-তাকরীম-এর সাথে মসজিদুল হারাম (কা’বা শরীফ)-এর হাত্বীমের নিকটে নিয়ে আসেন। (ফতহুল বারী)



অবমাননা মুখ বুঁজে সহ্য করলে আখিরাতে নাজাত পাওয়াটা কিছুতেই সম্ভব হবে না। কিন্তু প্রতিরোধের উপায় কী? এর উপায় বর্ণিত রয়েছে পবিত্র কুরআন শরীফে। ওলীদ বিন মুগীরা নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘পাগল’ বলে আখ্যা দিয়েছিলো। তখন আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন- “(হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি তার কথায় কর্ণপাত করবেন না। সে (ওলীদ বিন মুগীরা) মিথ্যে শপথকারী, অপমানিত, নিন্দাকারী, পরের দোষ বর্ণনাকারী, চোগলখোর, সৎকাজে নিষেধকারী, সীমা লংঘনকারী, পাপিষ্ঠ, বদ চরিত্র এবং অধিকন্ত সে অবৈধ সন্তান।” (সূরা ক্বলম : আয়াত শরীফ ১০-১৩)

ওলীদ বিন মুগীরা তার প্রত্যেকটি দোষ সম্পর্কেই জানতো, শেষেরটি তথা ‘অবৈধ সন্তান’ হওয়া ব্যতীত। তখন সে তার মাকে তরবারির ভয় দেখিয়ে সত্য কথা বলতে আদেশ করে। ওলীদের মা তখন বলতে বাধ্য হয় যে, তার মা এক রাখালের সাথে মিলিত হয়েছিলো। সে সেই রাখালেরই অবৈধ সন্তান। (http://goo.gl/iShHFp)

অর্থাৎ হিন্দু ও নাস্তিকেরা যেন নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চরিত্র মুবারক নিয়ে প্রশ্ন না তুলতে পারে, সে জন্য মুসলমানদের ‍কুরআন শরীফের অনুকরণে পাল্টা কাফির-মুশরিকদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে। তাদের পিতৃপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে। যেমন হিন্দুরা যদি নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিবারের সদস্যদের সাথে উনার সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তখন হিন্দুদের পরিবারে যেসব ঘটনা ঘটে সেগুলো উল্লেখ করতে হবে। যেমন নীরদ সি চৌধুরী তার বইতে লিখেছিলো- “সেকালে বাঙালীদের (হিন্দুদের) মধ্যে ‘শাশুড়ে’ এবং ‘বৌও’ বলিয়া দুটি গালি শোনা যাইত, উহার প্রথমটির অর্থ শাশুড়িরত, ও দ্বিতীয়টির অর্থ পুত্রবধূরত। শ্বশুর-পুত্রবধূর ব্যাপার সম্ভবত খুব কমই দেখা যাইত, কিন্তু শাশুড়ি-জামাই ঘটিত ব্যাপার বিরল ছিল না।” (সূত্র: বাঙালি জীবনে রমণী, নীরদ সি চৌধুরী, পৃষ্ঠা ৬৭)

আবুল হোসেন ভট্টাচার্য তার ‘আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম’ বইয়ের ৮৫ পৃষ্ঠায় তুলে ধরেছেন হিন্দু পরিবারের নোংরা জীবনাচারণ। তিনি দেখিয়েছেন যে, হিন্দুসমাজে শ্বাশুড়ি পুত্রবধুর কথপোকথন এরকম-

“বৌমা! যোনি-পীঠটা তো ঠিকমতো তৈরী হয়নি।”

পুত্রবধু -“যোনি-পীঠ কোনটা?”

শ্বাশুড়ি-“যেটার মধ্যে লিঙ্গ বসানো রয়েছে-কেন বিভিন্ন শিবমন্দিরে যেখানে পাথরের তৈরী বড় বড় শিবলিঙ্গ রয়েছে সেখানে তুমি কি দেখোনি কার মধ্যে এবং কী ভাবে লিঙ্গ বসানো থাকে?”

তাছাড়া কয়েকদিন আগে খবরে আসলো যে- ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে ব্রিটেনের ক্যান্টারবেরি আর্চবিশপের পিতার যে পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে তাতে সে বিস্মিত হয়েছে (লিঙ্ক: http://goo.gl/yvQB61) পাঠকেরা কী জানেন ক্যান্টারবেরির আর্চবিশপ কে? সে হলো অ্যাংলিকান প্রটেস্ট্যান্ট ধর্মের প্রধান, অনেকটা পোপের মতো। ব্রিটেনের কথিত রাজপরিবারের সবাইকেই তার নিকট অনুমোদন পেতে হয়, তার নেতৃত্বেই ব্রিটেনের রাজা-রানির অভিষেক হয়। এককথায় ব্রিটেনের প্রধান ধর্মীয় গুরুরই পিতৃপরিচয় হলো অবৈধ।

অনেক পাঠকই হয়তো জানেন, এই ব্রিটেনই কিন্তু সালমান রুশদিকে নিরাপত্তা দিয়ে রেখেছে। ২০০৭ সালে ব্রিটেনের এলিজাবেথ সালমান রুশদিকে ‘স্যার’ উপাধি দেয়। অর্থাৎ ব্রিটেনের খ্রিস্টানরা যে সম্মিলিতভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে, এর প্রতিদান আল্লাহ পাক দিলেন এক জারজ সন্তানকে তাদের ধর্মীয় গুরু বানিয়ে। অনেকটা ওলীদ বিন মুগীরার মতোই। এই খবরটি ভাইরাল হওয়া উচিত ছিলো, মুসলমানদের উচিত ছিলো এই খবরটি ছড়িয়ে দেয়া। কাফির মুশরিকদের যে কোন দোষত্রুটি পেলেই তা বেশি বেশি করে ছড়ানো উচিত মুসলমানদের। চেষ্টা করতে হবে তাদেরকে মানসিকভাবে পর্যুদস্ত করার, যেমনটি ওলীদ বিন মুগীরা হয়েছিলো তার পিতৃপরিচয় প্রকাশের পর। কুকুরকে মুগুর না দিলে তার ঘেউঘেউ থামবে না।

অথচ মুসলমানরা করছে উল্টোটা, তারা কাফির মুশরিকদের মনোবলকে আরো শক্তিশালী করছে ‘দাদা’ ‘দাদা’ সম্বোধন করে মুখে ফেনা তুলে ফেলার মাধ্যমে। অথচ আল্লাহ পাক তিনি নিজে বললেন এই মুশরিকগুলো নাপাক। বিধর্মীদের প্রতি মুসলমানদের কোমল ও লুতুপুতু মনোভাব, আস্কারা ও প্রশ্রয় পেয়ে হিন্দুরা প্রতিনিয়ত তাদের ইসলামবিরোধী কার্যকলাপের গতি বাড়িয়ে চলেছে তো চলেছেই। এর ফলশ্রুতিতে হাশরের ময়দানে শুধু হিন্দুরাই জাহান্নামে যাবে না, তাদের সাথে সাথে সেসব কথিত মুসলমানরাও জাহান্নামে যাবে, যারা দুনিয়ায় থাকতে হিন্দুদের ইসলামবিরোধী কার্যকলাপের প্রতিবাদ করেনি।

Post a Comment

 
Top