ইসরায়েলের উগ্রবাদী লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদি বাংলাদেশ দখল করতে মিটিং করছে, এটা সবাই জানে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ঘুরেফিরে এই মিটিংয়ের যেই মূল বিষয়টি বারবার উঠে এসেছে, তা হলো বাংলাদেশের কথিত ‘হিন্দু নির্যাতন’। বলা চলে, এই ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’কে ইস্যু করেই আওয়ামী লীগের পতন এবং বাংলাদেশ দখলের প্ল্যান করছে মোসাদ। উদাহরণস্বরূপ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত মিটিংয়ের কিছু এজেন্ডা নিন্মরূপ-
১) বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে ও কথিত সংখ্যালঘুদের অধিকার আদায়ে ‘সরকার পরিবর্তন এজেন্ডা’ হাতে নিয়েছে বিশ্বের প্রথমশ্রেণীর এই গোয়েন্দা চক্র। (যুগান্তর)
২) প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ‘মুসলিম ব্রাদারহুডের সরকার’। তারা সংখ্যালঘু হিন্দু ও খ্রিস্টানদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। (যুগান্তর)
৩) বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে সংখ্যালঘুদের ওপর ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ (এথনিক ক্লিনজিং) চলছে। এটা অত্যন্ত বাস্তব ঘটনা, ফিলিস্তিনের মতো বানানো বিষয় না। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যার পাসপোর্টে লেখা থাকে- ‘ইসরাইল ছাড়া বিশ্বের যে কোনো দেশ ভ্রমণে অনুমোদিত’। মেন্দি সাফাদি বলে, ‘আমি এ অবস্থার পরিবর্তন করতে চাই।’ (যুগান্তর)
৪) প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের দিকে আঙুল তুলে বলা হয়, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে ‘ইসলামপন্থীরা’ ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। তারপর থেকেই সংখ্যালঘু হিন্দু ও খ্রিস্টানদের হত্যা করা হচ্ছে। (যুগান্তর)
৫) বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য কাজ করছে সাফাদি। এরপর নতুন একটি সরকার আসবে যারা ইসরাইলের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলবে। সংখ্যালঘুদের নির্যাতনকারীদের বিচারের আওতায় আনতে এবং বঞ্চিত হাজার হাজার নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর বিলীন হওয়া ঠেকাতেও কাজ করছে সাফাদি। (ইত্তেফাক)
অর্থাৎ পাঠকেরা দেখছেন যে, ঘুরেফিরে কুমিরের বাচ্চার মতো সেই একই ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ এর কথাই বারবার বলা হয়েছে, আর এই কথিত ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’কে পুঁজি করেই বাংলাদেশ থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের ঘোষণা দিয়েছে মোসাদ। আওয়ামী লীগকে উৎখাতের পর এমন এক সরকার বসানোর পরিকল্পনা তাদের রয়েছে, যারা ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিবে। এই মিটিংয়ে বাংলাদেশের তরফ থেকে মোসাদের যে প্রতিনিধি যোগদান করেছে, তার নাম হলো শিপন কুমার বসু। তার বাড়ি খুলনা ও শ্বশুড়বাড়ি গোপালগঞ্জ। (লিঙ্ক: http://goo.gl/mTBqhX)
সচেতন পাঠকমাত্রই জানেন, গোপালী এবং হিন্দু, এই দুই বৈশিষ্ট্য এক হলে তাকে ঠেকানোর ক্ষমতা এদেশে কারোরই নেই। গোপালগঞ্জের হিন্দুমাত্রই অত্যধিক বিশ্বস্ত বলে ধরে নেয় এদেশের ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী। অথচ তাদেরই ‘জামাই’ কিনা ইহুদীদের সাথে প্ল্যান করে তাদেরকে উৎখাতের চেষ্টা চালাচ্ছে। হিন্দু মহাজোটের অনলাইন ওয়েবসাইট এইবেলা.কম থেকে বলা হয়েছে, মোসাদের এজেন্ট শিপন কুমার হলো হিন্দু স্ট্রাগল কমিটি (এইচএসসি) নামক একটি সংগঠনের নেতা। এই সংগঠনের নেতা হিসেবে সে নরেন্দ্র মোদির ধর্মীয় গুরুর কাছে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে নালিশ করে এসেছে যে, ‘বাংলাদেশে বসবাসরত হিন্দুদের মানবিক ও সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় বর্তমান সরকার কার্যত কোন দৃশ্যমান ভূমিকা পালন করছে না।” (লিঙ্ক: http://goo.gl/EPmGBv)
আওয়ামী লীগ সরকারের অনুভূতি বলে কিছু থাকলে এখনই তার গা থেকে হিন্দুপ্রীতি ঝেড়ে ফেলার কথা ছিলো, কিন্তু তার কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। উদাহরণস্বরূপ পোস্টে দেয়া ছবিতে মাত্র কয়েকদিন আগে অনুমোদনপ্রাপ্ত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা বুয়েট ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির অবস্থা দেখুন। বোল্ড অক্ষরের নামগুলো দেখলে বুঝবেন, ১টি বাদে বুয়েট ছাত্রলীগ কমিটির প্রত্যেকটি বিভাগীয় সম্পাদকের পদে হিন্দু বসানো হয়েছে। মুসলমান নামধারী লীগারদেরকে বানানো হয়েছে তাদের ডেপুটি। সম্পাদক ও উপ সম্পাদক মিলে মোট ১২ জনের মধ্যে হিন্দু হলো ৬ জন, অর্থাৎ ফিফটি পার্সেন্ট।
ছাত্রলীগের অফিসিয়াল প্যাডে স্বাক্ষর করে এই কমিটির অনুমোদন দিয়েছে এস আর সোহাগ ও জাকির হোসাইন, যারা কিনা বর্তমান ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তাদের পূর্বে ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলো মোটা কালো করে এক প্রাণী, যে কিনা ‘আফ্রিকান মাগুর’ হিসেবেই সমধিক পরিচিত। স্বাক্ষরের তারিখের দিকে লক্ষ্য করে দেখুন, এই কমিটি অনুমোদিত হয়েছে চলতি ২০১৬ সালের মে মাসেরই ৬ তারিখে, অর্থাৎ আজ থেকে মাত্র ৪ দিন আগে। অর্থাৎ যেই মুহূর্তে মিডিয়া-পত্রপত্রিকায় ব্রেকিং নিউজে প্রচারিত হচ্ছে আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে হিন্দু-ইহুদী যৌথ ষড়যন্ত্রের খবর, ঠিক তখনই ক্ষমতাসীন দল হিন্দু নিয়োগের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করল। বুয়েটের মতো একটি প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগ কমিটিকে করা হলো নজিরবিহীন হিন্দুকরণ!
এমতাবস্থায় ক্ষমতাসীন দলকে আমি বোকা বলবো না, তবে আত্মঘাতী বলবো। এই আত্মঘাত কেবল আওয়ামী লীগের একার নয়, বরং বাঙালি মুসলমানদের সবার। ব্রিটিশ আমলে মুসলমান জমিদারদের জমিদারীগুলো হাতছাড়া হওয়ার পেছনে ব্রিটিশদের যতোটা না দায় ছিলো, তার চেয়ে বেশি দায় ছিলো মুসলমান জমিদারদের হিন্দুপ্রীতির। অতিমাত্রায় হিন্দুপ্রীতি দেখাতে গিয়ে মুসলমান জমিদারেরা স্পর্শকাতর পদে হিন্দু নিয়োগ দিতো, আর সেই হিন্দুটিই তার পিঠে ছুরি মেরে নিজেই হয়ে যেতো জমিদার।
কিন্তু তারপরও ঘুরেফিরে সেই হিন্দুদেরকেই ‘ভালো’ বলতো মুসলমানরা, এখনও বলে। যে প্রসঙ্গে সেই ১৮৯৭ সালে মীর মশাররফ হোসেন তার রচিত ‘বাংলার মুসলমান সমাজের একখানি চিত্র’ কবিতায় উল্লেখ করেছিলো-
প্রথমেতে ছুঁচ হয়ে পশে হিন্দু রয়ে রয়ে
মুসলমান জমিদার ঘরে
ক্রমে চেপে বসে ঘাড়ে সাধ্য নাই মাথা নাড়ে
ফাল হয়ে ফাড়ে চেরে পরে।
বঙ্গের বুনেদী দল গেছে সব রসাতল
কেহ মরা কেহ আধমরা
গেছে সব হিন্দু ঘরে কেহ না তা দৃষ্টি করে
আরও মুখে বলে ভাল তারা
‘আরও মুখে বলে ভালো তারা’ অর্থাৎ হিন্দুদের এই ‘ভালো’ বলাটাই যুগে যুগে বাঙালি মুসলমানদের ‘কালো’তে পরিণত হয়েছে। তৎকালীন সময়ে জমিদারদের কালো হয়েছিলো, বর্তমান সময়ের জমিদার তথা আওয়ামী লীগেরও হচ্ছে। কিন্তু তারপরও মুসলমানদের বোধোদয় হচ্ছে না।

Post a Comment

 
Top