হিন্দুরা এমন একটি সম্প্রদায়, ইতিহাসের পাতায় যারা অন্য জাতির দ্বারাই চিরকাল শাসিত হয়েছে। কারণ শাসক হওয়ার যোগ্যতা তাদের কখনোই ছিলো না। শাসকের একটি বড় যোগ্যতা হলো, সে ক্ষমতা পাওয়ার পরও অসংযত হয় না। একজন যোগ্য শাসক ক্ষমতা প্র্যাকটিস করতে গিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দেয় না।
বিপরীতে হিন্দুরা যেহেতু কখনোই ক্ষমতার স্বাদ পায়নি, সেহেতু তারা ক্ষমতা তো দূরে, এমনকি ক্ষমতাশালীর সাহচর্য পেলেও বেসামাল হয়ে যায়। উদ্ভট ও অবাস্তব মুসলিমবিরোধী ফ্যান্টাসি তাদেরকে পেয়ে বসে। বঙ্কিমচন্দ্র সাহিত্যিক হতে পেরেছে হিন্দুদের এসব ফ্যান্টাসিকে অবলম্বন করেই। সিপাহী বিদ্রোহে দিল্লীর পতনের পর ভারতবর্ষে মুসলিম প্রাধান্যের অবসান ঘটে এবং হিন্দুরা ব্রিটিশদের মদদে অল্পদিনের মধ্যেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়। যার ফলে মুসলমানদের গোলামির গন্ধ গায়ে থাকা অবস্থাতেই তারা মুসলিমমুক্ত ভারতের এক উদ্ভট কল্পনা মনে মনে লালন করতে থাকে। বঙ্কিমচন্দ্র তার ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসে হিন্দুদের মুসলিমবিরোধী কল্পনাকে ফুটিয়ে তুলেছিলো এভাবে
“ভাই এমনও দিন কী আসিবে! মসজিদ ভাঙিয়া রাধামাধবের মন্দির গড়িব!”
কিরূপ উদ্ভট কল্পনা হিন্দুদেরকে তখন পেয়ে বসেছিলো, তা উপরের বক্তব্যেই স্পষ্ট। “ইংরেজ মিত্ররাজা, দেশে কোন মুসলমান নাই” এটাই ছিলো আনন্দমঠে বঙ্কিমচন্দ্রের পরিতৃপ্তিমূলক বক্তব্য। কিন্তু তারপরও ব্রিটিশদের সাথে হিন্দুদের একটি পার্থক্য ছিলো, তা হলো ব্রিটিশরা উদ্ভট ফ্যান্টাসিতে ভুগতো না। কারণ দেশশাসন তো আর কল্পনা নয়, সেটা কঠিন বাস্তব। বাস্তবতার খাতিরে মুসলমানদের একেবারে অগ্রাহ্য করা তো ব্রিটিশদের পক্ষে সম্ভব ছিলো না। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের যে কল্পজগৎ, সেখানে কোন মুসলিম চরিত্র না থাকতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তো মুসলমানদের অস্তিত্ব ভারতবর্ষে ছিলো।
পরবর্তীতে যখন ব্রিটিশরা বঙ্গভঙ্গ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে যায়, তখন হিন্দুদের এই ফ্যান্টাসির জগতে আঘাত লাগে। যার ফলে তারা বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ উপন্যাসকে পুঁজি করে স্বদেশী আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে, যেই আনন্দমঠে মুসলিমবিহীন ভারতের ফ্যান্টাসি বারবার দেখানো হয়েছে। কাজী নজরুল ইসলাম তার ‘কুহেলিকা’ উপন্যাসে সে সময়ের স্বদেশী আন্দোলন করা উগ্র হিন্দুদের ফ্যান্টাসির জগতকে তুলে ধরেছেন এভাবে-
“ডান হাত দিয়ে খেদাব ফিরিঙ্গি এবং বাম হাত দিয়ে খেদাব নেড়ে। সন্ধি করব মক্কা এবং লন্ডন অধিকার করে”
সামান্য ক্ষমতা পেলেই পুটকি দিয়ে পাহাড় ঠেলার এধরণের আকাঙ্খা ব্রিটিশ আমলে যেভাবে হিন্দুরা পোষণ করতো, ঠিক সেভাবেই বর্তমান আওয়ামী লীগ আমলেও হিন্দুরা একই মনোবাসনা পোষণ করছে। এই যে বর্তমানে হিন্দুরা বিভিন্ন জায়গায় মুসলমানদের ধর্ম নিয়ে যা খুশি তাই বলছে, মুসলমান ছাত্রীদের রেপ করছে, এর কারণ হিন্দুদের এখন নিজেদের উপর কোন কন্ট্রোল নেই। বিশেষ করে মোদি আসার পর তারা তীব্র স্বপ্নদোষে ভুগছে। মোদি আর আওয়ামী লীগের কম্বিনেশনকে তারা ধরে নিয়েছে রামরাজত্ব হিসেবে।
আওয়ামী লীগও হিন্দুদেরকে প্রাধান্য দিতে বদ্ধপরিকর, কিন্তু শাসক হিসেবে তো তাকে সিস্টেমের মধ্য দিয়ে চলতে হবে। আওয়ামী লীগ সিস্টেম করেই কিন্তু চাকরিগুলো সব হিন্দুদেরকে দিচ্ছে, দেবোত্তর সম্পত্তির নামে সিলেটের চা বাগানের ১২০০ বিঘা জমি হিন্দুদের মন্দিরের জন্য দিয়ে দেয়া হয়েছে সিস্টেম করে। সম্প্রতি যে হিন্দুকে কান ধরে উঠাবসা করানোর কারণে হিন্দুরা সেলিম ওসমানের চৌদ্দগুষ্ঠী উদ্ধার করছে, সেই সেলিম ওসমান কিন্তু কাজটা করেছিলো হিন্দুদের ভালোর কথা চিন্তা করেই। এনটিভিতে সেলিম ওসমান বলেছে, “অলটারনেট কিছু ছিল না”। সেই মুহূর্তে যদি সেলিম ওসমান কানে ধরা নাটকটা মঞ্চস্থ না করতো, তাহলে তখনই শ্যামল কান্তিকে গণধোলাই খেয়ে স্বর্গে চলে যেতে হতো। যার ফলে ঐ কানে ধরা হিন্দুটাই সেলিম ওসমানকে তার কাজের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে। (এনটিভির লিঙ্ক- http://goo.gl/2MusRz)
কিন্তু তারপরও সেলিম ওসমানের উপর হিন্দুরা নাখুশি তাদের ফ্যান্টাসি অনুযায়ী কাজ না করার জন্য। হিন্দুরা চেয়েছিলো, সেলিম ওসমান পুলিশ নিয়ে এসে শ্যামল কান্তিকে ঘেরাওকারী এলাকার সমস্ত মুসলমানদেরকে ‘ইয়া ঢিসুমাইক’ দিয়ে সিনেম্যাটিক কায়দায় শায়েস্তা করবে, শ্যামল কান্তিকে উদ্ধার করে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিবে। আমি ফেসবুকে প্রচুর উগ্র হিন্দু আর নাস্তিকদেরকে দেখেছি, যারা হাসিনা কেন মিশরের সিসির মতো হতে পারে না তা নিয়ে হা-হুতাশ করে। (http://archive.is/551ka) সোনার ডিমপাড়া হাঁসটার পেট কেটে একবারে সব ডিম বের করার মতোই হাসিনা কেন সব মসজিদ-মাদ্রাসা গুড়ো করে দিয়ে বাংলাদেশে রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠা করছে না, সেটাই এখন হিন্দুদের অসন্তুষ্টির কারণ। কিন্তু যতোই কট্টর ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ আওয়ামী লীগার হোক, রাজনীতি করা লোকজন তো তা করতে পারে না। তাদেরকে তো ফ্যান্টাসির পালে হাওয়া দিলে চলবে না, তাদেরকে বাস্তবতা অনুযায়ী চলতে হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান জনগোষ্ঠীকে তারা কোনভাবেই অগ্রাহ্য করতে পারে না।
ব্রিটিশরা খ্রিস্টান হওয়ার পরও যেখানে হিন্দুদের সর্বগ্রাসী মুসলিমবিরোধী ফ্যান্টাসি পূরণ করতে পারেনি, সেখানে আওয়ামী লীগের নেত্রী তাহাজ্জুদ পড়ে তা করবে কী করে! শেখ হাসিনার লম্বা হাতা ব্লাউজটাও তো হিন্দুদের পছন্দ হচ্ছে না। উল্টো হিন্দুদেরকে নৌকায় তোলার প্রতিদান এখন হিন্দুরা দিচ্ছে মোসাদের সাথে নৌকা ফুটা করার ষড়যন্ত্র করার মাধ্যমে। আওয়ামী লীগ বাস্তব অবস্থার নিরিখে হিন্দুদের জন্য যথেষ্ট করছে। শুধু শ্যামল কান্তি নয়, বরং যে কোন অখ্যাত রাম-সাম-যদু ইসলাম অবমাননা করলেই পুলিশ তাকে প্রটেকশন দিতে মুহূর্তের মধ্যে ছুটে যায়। শ্যামল কান্তিকে বাঁচাতে সেলিম ওসমান তো পুলিশকে তৎক্ষণাৎ ফোন দিয়েছিলই, সাথে সাথে সে নিজেও তার মিটিং ত্যাগ করে শ্যামল কান্তিকে বাঁচাতে ছুটে গিয়েছে। বিপরীতে ঐ জায়গায় যদি ঢাকা ভার্সিটির কোন মুসলমান প্রফেসরও থাকতো. তাহলে হয়তো সেলিম ওসমানের পিএসও তাকে বাঁচাতে যেতো না।
কিন্তু তারপরও তো হিন্দুদের মন পাওয়া গেলো না। এতোকিছুর পরও কী আওয়ামী লীগের মোহভঙ্গ হবে না? বঙ্গবন্ধু শেখ সাহেব তো বাঙালি মুসলমানদের নেতা হয়েই জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন, সেখানে আওয়ামী লীগ তার পথ অনুসরণ করছে না কেন?

Post a Comment

 
Top