‘বাঙালি’ হলেই রবীন্দ্রকে অনুসরণ করতে হবে? যারা বলে, তারা আসলে ইতিহাস সম্পর্কে কোন ধারণা রাখে না। ইতিহাসে মুসলমানদের যেখানে পতন, রবীন্দ্রদের সেখানে উত্থান।

এ বিষয়ে আলোচনা করতে হলে শুরুতে আমাদেরকে ব্রিটিশ আমলের ইতিহাস জানতে হবে। ব্রিটিশ আমলের শুরুরদিকে মুসলমানরা ছিলো অগ্রগামী, কারণ তখনও ফারসী ভাষা ও ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার দ্বারা প্রশাসন, বিচারকাজ, রাজস্ব আদায় সবই পরিচালিত হতো। কিন্তু হিন্দু ও খ্রিস্টানরা এই ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট ছিলো না। কারণ ইসলামী শিক্ষাপ্রাপ্ত মুসলমান কর্মকর্তাদের ঈমান ও হালাল-হারাম বোধের কারণে খ্রিস্টানরা ঠিক মানিয়ে নিতে পারছিলো না। কারণ মুসলমান কর্মকর্তারা তো তাদের ওয়াইফদের নিয়ে বলড্যান্সে যাবে না, একসাথে মদ খাবে না। মোটকথা খ্রিস্টানদের সাথে ‍মুসলমানদের কোনপ্রকার সামাজিক সম্পর্ক গড়ে উঠবে না। অন্যদিকে হিন্দুরা ছিলো মদ-মহিলা থেকে শুরু করে সমস্ত শয়তানিতে অভ্যস্ত, যে কারণে হিন্দুদের সাথে খ্রিস্টানদের বনে যায়। তারা মিলে প্রথমে যোগসাজশ করে বাংলা অঞ্চল থেকে ফারসী ভাষা তুলে দেয়। এর ফলশ্রুতিতে বাংলায় অাঞ্চলিকভাবে মুসলমানদের আধিপত্য খর্ব হয়, কিন্তু তারপরও রাজধানী দিল্লীর কারণে ভারতবর্ষে মুসলমানদের আধিপত্য থেকে যায়। অর্থাৎ দিল্লী ছিলো ভারতবর্ষের হিন্দুদের আধিপত্য বিস্তারের পথে প্রধান অন্তরায়।

দিল্লী ছিলো স্পেনের কর্দোবা কিংবা বাগদাদের মতো, মুসলিম জ্ঞানবিজ্ঞান ও সভ্যতার কেন্দ্র। সিপাহী বিদ্রোহের সময়ে এই সভ্যতাকে ধ্বংস করে ব্রিটিশরা হিন্দুদের সহায়তা নিয়ে। ১৮৫৭ সালে দিল্লীর পতন ও তার সভ্যতার ধ্বংস সম্পর্কে ব্রিটিশ লেখক উইলিয়াম ড্যালরিম্পেল লিখেছিলো- “মোগল দরবারের অস্তিত্ব না থাকায় সংস্কৃতি ও শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে নগরীর খ্যাতিও বিদায় নিয়েছিল। গ্রন্থাগারগুলো লুণ্ঠিত হয়েছিল, মূল্যবান পাণ্ডুলিপিগুলো আর ছিলো না। প্রায় সবগুলো মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং মাদ্রাসার ভবনগুলোও বিক্রি হয়ে গিয়েছিলো। সেগুলো ধ্বংস করে ফেলে হিন্দু ব্যবসায়ীরা। সবচেয়ে বিখ্যাত মাদ্রাসা ছিলো ‘মাদ্রাসা-ই-রহিমিয়া’, যা নগরীর নেতৃস্থানীয় বানিয়া রামজি দাস নিলামে কিনে নিয়েছিল, যে এটি ব্যবহার করে গুদাম হিসেবে।

১৮৫৯ সালের মধ্যে গালিব (মির্জা গালিব) অভিযোগ করতে থাকে যে, নগরীতে সে একজন গ্রন্থ বিক্রেতা, গ্রন্থ বাঁধাইকারী অথবা একজন লিপিকার পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছে না, যে নগরীতে একসময় গ্রন্থ চর্চা ছিলো সবচেয়ে বেশি। (সূত্র: দ্য লাস্ট মোগল, উইলিয়াম ড্যালরিম্পেল, ঐতিহ্য প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৪৩৫)

এই যে দিল্লীর পতন হলো, এর ঠিক পরপরই বাংলাভাষী হিন্দুদের উত্থান ঘটে। কারণ ব্রিটিশরা রাজধানী দিল্লীকে ধ্বংস করে কলকাতাকে গোটা ভারতের রাজধানী বানিয়ে দেয়। কলকাতার হিন্দুরা তখন এতো খুশি হয়েছিলো, যে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত তার কবিতায় লিখেছিলো-

“ভারতের প্রিয়পুত্র হিন্দু সমুদয়
মুক্তমুখে সবে বল ব্রিটিশের জয়”

আমরা জানি যে, বঙ্কিম-রবীন্দ্র-রঙ্গলাল এরা মুসলমানদের বিরোধিতা করে লিখেছিলো। কখন লিখেছিলো জানেন? যখন দিল্লীর মুসলিম সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছিলো। উইলিয়াম ড্যালরিম্পেল তার বইতে এটি লিখেছে যে, দিল্লীর পতনের পর ব্রিটিশরা মুসলমানদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বইপত্র প্রকাশ করতে শুরু করে। বঙ্কিমচন্দ্র তার প্রথম উপন্যাস ‘দুর্গেশনন্দিনী’ লিখেছিলো ১৮৬৫ সালে, দিল্লীর পতনের পর। মুসলমানদের রাজত্বকালে হিন্দুরা যেহেতু গোলাম ছিলো, সেহেতু দিল্লীর পতনের পর ‘হাতি পাঁকে পড়লে ব্যাঙে লাথি মারে’ এই তত্ত্ব অনুযায়ী হিন্দুরা মুসলমান রাজা-বাদশাহদের নিয়ে বিকৃত ইতিহাস ও অবমাননাকর লেখালেখি আরম্ভ করে।

এই রবীন্দ্রনাথও এই ধারারই অনুগামী। দিল্লীর পতনের পর কলকাতার রাজধানী হওয়া ও কলকাতাকেন্দ্রিক হিন্দুদের একের পর এক মুসলিমবিরোধী লেখালেখির নামই ইতিহাসের পাতায় দেয়া হয়েছে ‘বাংলার রেনেসাঁ’। আসল বিষয়টি হলো, দিল্লীর পতনের ফলে ভারতবর্ষে বুদ্ধিবৃত্তিক শূন্যতা দেখা দেয়। এই সুযোগে বাংলাভাষী হিন্দুরা নিজেদেরকে লেখক-কবি হিসেবে জাহির করার সুযোগ পায়। কারণ যে বনে বাঘ নেই, সেই বনে বিড়ালই বাঘ।

কলকাতায় এই রবীন্দ্রনাথের পরিবারের ৪৩টি পতিতালয় ছিলো। উল্লেখ্য, মুঘল সাম্রাজ্যের পতন আর হিন্দুদের উত্থানের পরপর এই পতিতাবৃত্তিকে কেন্দ্র করেই কথিত বাঙালি হিন্দু সংস্কৃতির ‍উত্থান হয়। কলকাতায় যারা গান গাইতো, তারা ছিলো পতিতা। যারা থিয়েটারে অভিনয় করতো, তারা ছিলো পতিতা। যারা সিনেমায় পারফর্ম করতো, তারাও ছিলো পতিতা। সুতরাং হিন্দু সংস্কৃতির ধারকবাহক হিসেবে রবীন্দ্রনাথ প্রস্টিটিউট র‌্যাকেটের কর্নধার হবে, এটাই স্বাভাবিক। (http://goo.gl/JjuclQ)

আসলে জিন্নাহ যে ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব’ দিয়েছিলো, এর তাৎপর্য হিন্দুরা বুঝতে পারলেও মুসলমানরা বুঝেনি। শরৎচন্দ্রের উপন্যাসে যে লেখা রয়েছে “আজ বাঙালি ও মুসলমানদের মধ্যে ফুটবল খেলা হবে” এর দ্বারা স্পষ্টই বোঝা যায় যে, হিন্দুরা নিজেরা ঠিকই মুসলমানদের আলাদা জাতি হিসেবে কাউন্ট করে। আর করাটাই স্বাভাবিক, কারণ হিন্দুরা দিল্লীর পতন চেয়েছিলো, যা মুসলমানরা চায়নি। হিন্দুরা ব্রিটিশদের সহায়তা করেছিলো, যা মুসলমানরা করেনি। পতিতাবৃত্তি হলো হিন্দু সংস্কৃতির প্রধান অঙ্গ, যা মুসলমানদের ক্ষেত্রে কল্পনাও করা যায় না।

এই বিষয়টি বর্তমান সময়ের মুসলমানরা না অনুধাবন করলেও পূর্ববর্তী মুসলমানরা ঠিকই করেছিলো। কারণ ব্রিটিশ আমলে এই অঞ্চলের মুসলমানদের মধ্যে রবীন্দ্র-শরৎ এসবের চর্চা ছিলো না। না থাকাটাই স্বাভাবিক, কারণ তারা পৃথক গোষ্ঠীর সদস্য। যদি ব্রিটিশ আমলের আগে রবীন্দ্র-শরতের বিষ বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে প্রবেশ করতো, তাহলে পাকিস্তান কখনোই সৃষ্টি হতো না। সেক্ষেত্রে বাঙালি মুসলমানরা কখনোই তাদের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের মানচিত্র পেতো না।

Post a Comment

 
Top