“এখানে দেখছি প্রায় সব মুহাম্মদের অনুসারী, মানুষ কেউ নেই!!”
এরকম একটি কমেন্ট আমি দেখেছিলাম নাস্তিক আসিফ মহিউদ্দীনের পোস্টে, কমেন্টটি
করেছিলো ‘রাজন সরকার’ নামক এক হিন্দু। নাস্তিকদের পোস্টগুলোর একটি বিষয়
লক্ষণীয়। তা হলো তাদের পোস্টগুলো যতোই অযৌক্তিক হোক না কেন, পোস্টের
কমেন্টগুলো উপেক্ষা করার মতো হয় না। নাস্তিকদের পোস্টে মুসলমানদের বিরুদ্ধে
হিন্দুদের কমেন্টগুলো যেন বুকে ছুরির মতো আঘাত করে।
হিন্দুদের
কমেন্টগুলো যে কতোটা বিদ্বেষমূলক হয়, তার প্রমাণ হলো কয়েকদিন আগে
রাঙ্গুনিয়ায় গ্রেফতার হওয়া যীশু চৌধুরীর ঘটনাটি। সে কিন্তু কোন স্ট্যাটাস
দেয়নি, বরং ‘সুষুপ্ত পাঠক’ নামক এক নাস্তিকের পোস্টে কমেন্ট করে যীশু
চৌধুরী জেলে গিয়েছিলো। তার কমেন্টটা ছিলো নিন্মরূপ-
“বসবাসযোগ্য
পৃথিবী গড়ে তুলতে সকল মুসলিমকে হত্যা করা আবশ্যক। সব মুসলিমকে বললাম কেন
জানেন? কারণ একটা পঁচা আমের পাশে আর ১০টা ভাল আম রাখলে ওই আমও পঁচে যায়।
সুসুপ্তদা এগিয়ে যাও।” (http://goo.gl/J1pl7g)
কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, নাস্তিক ও হিন্দুদের বিরুদ্ধে যখন লেখা হয়, তখন
মুসলমানরা অনুরূপ শক্ত কমেন্ট করে না। অথচ মুসলমান ফেসবুকারদের লেখায় দলিল
থাকে, তথ্যপ্রমাণ থাকে। যেমন নাস্তিকদের মনগড়া ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র জবাব
দিতে ‘ক্র্যাক প্ল্যাটুন’ গঠনের ইতিহাস বর্ণনা করেছিলেন এক ফেসবুকার। তাতে
উল্লেখ করা ছিলো যে, ক্র্যাক প্ল্যাটুনের প্রথম দিককার সদস্য ছিলো ১৭ জন।
এই ১৭ সংখ্যাটি বেছে নেয়া হয়েছিলো বখতিয়ার খিলজী উনার ১৭ জন অশ্বারোহী
সৈনিকের সাথে মিলিয়ে। ক্র্যাক প্ল্যাটুনের সদস্যদের বলা হয়েছিলো, তোমরা
বখতিয়ার খিলজী উনার ১৭ জন অশ্বারোহীর মতোই বাংলা বিজয় করবে।
খুবই গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট ছিলো সেটি। কিন্তু সেই পোস্টে মুসলমানদের কমেন্টগুলো ছিলো এরকম-
ঠিক
সহমত
Thik bolesen..
Tnx brother
Sheraam information
‘সেরাম ইনফরমেশন’ বলেই মুসলমান তার দায়িত্ব খালাস করে ফেললো! অথচ এটা যে
কতো গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন, তা মুসলমানরা যেন দেখেও এড়িয়ে গিয়েছে। কারণ এটা
কারো অজানা নয় যে, নাস্তিকেরা যাদেরকে নিয়ে বেশি অপপ্রচার চালায়, তাদের
মধ্যে বখতিয়ার খিলজী হলেন অন্যতম। সে হিসেবে ক্র্যাক প্ল্যাটুনের এই ১৭
সংখ্যাটির ইতিহাস তাদের মুখে একটি বিরাট চপেটাঘাত। অথচ এ দিকটি বিশ্লেষণ
করে একটি কমেন্টও আমি সেই পোস্টে পাইনি।
অর্থাৎ দ্বীন ইসলাম কিংবা
মুসলমানদের বিশেষ ব্যক্তিত্বদের নিয়ে মুসলমানদের কোন অনুভূতিই নেই, তাই
তারা কমেন্টও করে দায়সারা গোছের। ওদিকে ক্রিকেট নিয়ে কেউ কিছু বললে আমলোক
রীতিমতো কাছা বেঁধে মাঠে নেমে পড়ে। মাত্র কয়েকদিন আগেই বিশ্বকাপ
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট শেষ হলো। তখন তাসকিন-সানিকে নিষিদ্ধ করার কারণে
ভারতবিদ্বেষের জোয়ার বয়ে গিয়েছিলো সারা দেশে। সেই সময় কোন কোন ভাদা নাস্তিক
ভারতের পক্ষ নিয়ে ফেসবুকে কয়েকটি লেখা দেয়ার দুঃসাহস দেখায়।
যেমন আলোচনার শুরুতে উল্লেখকৃত ইসলামবিদ্বেষী ফেসবুকার ‘সুষুপ্ত পাঠক’ ভারতের পক্ষ নিয়ে এই পোস্টটি দিয়েছিলো-https://goo.gl/3eQ6bA
। লিঙ্কে ঢুকে দেখুন, ভারতের পক্ষ নিয়ে সাফাই গাওয়ায় সাধারণ ফেসবুকাররা
কিভাবে ‘সুষুপ্ত পাঠক’ নামক হিন্দু পাঁঠাটিকে খাসি বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।
২৭৪টি কমেন্ট পড়েছে তার এই পোস্টে, যেখানে এই পাঁঠাটি ছেড়ে দে মা কেঁদে
বাঁচি বলে কোনভাবে পালিয়ে বেঁচেছে।
অথচ এই একই তৎপরতা সুষুপ্ত
পাঁঠার সেইসব পোস্টে দেখা যায় না, যেসব পোস্টে সে হুযূর পাক সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের শানের বিরুদ্ধে কটূক্তি করে লেখে। উম্মুল মু’মিনীন
উনাদের শানের বিরুদ্ধে কটূক্তি করে লেখে। সুষুপ্ত পাঁঠার ইসলামবিরোধী
পোস্টে মুসলমানদের কোন প্রতিবাদ নেই, যা আছে ক্রিকেট নিয়ে লেখা পোস্টে।
অর্থাৎ বাংলাদেশী মুসলমানদের এখন আর ‘ধর্মীয় অনুভূতি’ বলতে কিছু নেই, তাদের
অনুভূতি বলতে রয়েছে কেবল ‘ক্রিকেটানুভূতি’।
এরকম আরেকটি স্যাম্পল
পোস্ট দেখানো যায়। ‘অপ্রস্তুত লেনিন’ নামক আরেক পাতি নাস্তিক তাসকিনের
নিষিদ্ধ হওয়ার দায় পাকিস্তানের উপর চাপিয়ে দিতে আবজাব যুক্তি দিয়ে পোস্ট
লেখে, ভারতকে সেভ করার জন্য। তার পোস্টেও দেখুন, এদেশের সাধারণ মানুষ
কিভাবে একেকজন ক্রিকেটবোদ্ধা হয়ে ‘অপ্রস্তুত লেনিন’কে একদম ধুয়ে দিচ্ছে।
লিঙ্ক- https://goo.gl/QDWWDf
। পোস্টটিতে মোট কমেন্ট পড়েছে ২৬৬টি। বিপরীতে ‘অপ্রস্তুত লেনিন’ যখন
‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বাতিল করার পক্ষে লিখলো, তখন কিন্তু এরকম প্রতিবাদ
হয়নি। এতো কমেন্টও করেনি সাধারণ ফেসবুকাররা।
যারা অনলাইনে
নাস্তিকদের উত্থানের কারণ খুঁজে বেড়াচ্ছেন, তারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝছেন
মূল সমস্যাটা কোথায়। ‘ক্রিকেটানুভূতি’তে আঘাত দেয়ার কারণে যেভাবে সাধারণ
মানুষ যুক্তিতর্কের বস্তা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছে, তার ছিটেফোঁটাও
‘ধর্মানুভূতি’তে আঘাত করার সময়ে দেখা যায় কী? দেখা গেলে আজকে অনলাইনে কোন
নাস্তিকতা থাকতো না। আসিফ মহিউদ্দীন কিংবা সুষুপ্ত পাঁঠারা ইসলামের
বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার করে, তার ৯৯ শতাংশই একটু মাথা খাটালে এবং অনলাইনে
সার্চ করলে খণ্ডন করা সম্ভব। কিন্তু সেই কষ্টটি কেউ করবে না। কারণ সাধারণ
মানুষের ক্রিকেটের প্রতি যে মুহব্বত, তা ইসলামের প্রতি নেই।
শুধু
বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বে মুসলমানদের লাঞ্ছিত হওয়ার কারণ কিন্তু এই একই, তা
হলো তারা তাদের মূল বা শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন। মুসলমানদের মূল হলেন নবীজী
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা।
বাঙালি মুসলমানদের ইতিহাসের সূত্রপাত করেছিলেন ইখতিয়ারউদ্দীন মুহম্মদ
বখতিয়ার খিলজী। এই শেকড়ে যখন নাস্তিকেরা কুঠারাঘাত করে, তখন বাঙালি
মুসলমানদের বিকার হয় না।
হযরত আনাস ইবনে মালেক রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- “নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা ততোক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণভাবে ঈমানদার হতে
পারবে না, যতোক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের নিজের পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি,
ধন-সম্পদ এবং নিজের জান থেকেও আমাকে অধিক মুহব্বত না করবে।” অথচ এদেশের
মুসলমানদের মধ্যে নিজের জানের তো প্রশ্নই উঠে না, এমনকি তাসকিন-সানির
প্রতিও যতোটা মুহব্বত রয়েছে, সেটুকুও নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার প্রতি নেই। নাউযুবিল্লাহ!
শুনতে খারাপ শোনালেও এটাই সত্য এবং
বাস্তব। কারণ পিতার প্রতি মুহব্বত থাকে বলেই পিতাকে কেউ গালি দিলে তাকে
মানুষ লাঠি নিয়ে মারতে যায়। যদি নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
প্রতি মুহব্বত থাকতোই, সেক্ষেত্রে মানুষ নাস্তিক ও হিন্দুদের জবাব না দিয়ে
ছাড়তো না। এই বিষয়টি গাফেল মুসলমানরা টের না পেলেও স্বয়ং আল্লাহ পাক তিনি
ঠিকই দেখেন। আল্লাহ পাক লক্ষ্য করেন যে, তার হাবীব সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামের প্রতি বান্দাদের কোন মুহব্বত নেই। যার ফলে মুসলমানদের উপর থেকে
রহমতের চাদর উঠে যায় এবং মুসলমানরা কাফির-মুশরিকদের দ্বারা সারাবিশ্বে
লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Post a Comment