বাংলাদেশ সিরিয়া হয়ে যাবে, ইরাক হয়ে যাবে, এরকম হাহাকার আজকাল অনলাইনে কান পাতলেই শোনা যায়। কিন্তু কেউই এ বিষয়ে সত্যটি উচ্চারণ করে না যে, সিরিয়া কেন সিরিয়া হয়েছিলো, আফগানিস্তান কেন আফগানিস্তান হয়েছিলো, ইরাক কেন ইরাক হয়েছিলো?
আফগানিস্তানের কথাই ধরা যাক। সেদেশে কমিউনিস্টরা রাশিয়ার সহযোগিতায় দেশের ক্ষমতা দখল করেছিলো। অর্থাৎ আফগানিস্তানে দুটি গোষ্ঠী ছিলো, একদিকে মুসলমান জনগোষ্ঠী, অপরদিকে কমিউনিস্ট। ফলে শুরু হয় যুদ্ধ। যুদ্ধে মাঝখান দিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধারে আমেরিকাও জড়িয়ে যায়।
অর্থাৎ একই দেশে দুটি বিবাদমান গোষ্ঠী থাকলে সেখানে আমেরিকা নাক গলানোর সুযোগ পায়। সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতির পেছনে দায়ী বাশার আল আসাদ ও তার গোত্রভুক্ত শিয়াদের অত্যাচার। এর সুযোগে আমেরিকা ও ইসরাইল সিরিয়ায় আইএস গঠনের সুযোগ পায়। ইরাকের ঘটনাও অনেকটা একইরকম। সাদ্দামকে উৎখাতের পর ইরাকের প্রশাসনিক পদগুলোতে বসানো হয় শিয়াদেরকে। অর্থাৎ ইরাকে আমেরিকা সুযোগ নিতে পেরেছে শিয়াদের সাথে সুন্নীদের জাতিগত দ্বন্দ্বের কারণে।
যেভাবে সিরিয়া ও আফগানিস্তানে জাতিগত বিভেদকে পুঁজি করে আমেরিকা প্রবেশ করেছিলো, ঠিক সেভাবেই বাংলাদেশেও আমেরিকা সুযোগ নিতে পারে এদেশের হিন্দু, নাস্তিক, উপজাতি, বৌদ্ধ তথা ইসলামবিরোধী গোষ্ঠীটির কারণে। কারণ এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সাথে এই হিন্দু ও তাদের দোসরেরা জাতিগত বিভেদে লিপ্ত। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, বিভিন্ন স্থানে হিন্দু পুরোহিত হত্যা, খ্রিস্টান হত্যা, উপজাতি হত্যা এগুলোকে কেন্দ্র করে আইএস আছে বলে অপপ্রচার চালিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে আমেরিকা।
অর্থাৎ ইসলাম ধর্মের কারণে এদেশ সিরিয়া-আফগানিস্তান হবে বলে হিন্দু আর নাস্তিকেরা যে অপপ্রচার চালাচ্ছে, তা সম্পূর্ণই অযৌক্তিক। মধ্যপ্রাচ্যে শরীয়া আইনধারী বহু দেশ রয়েছে, কই সেখানে তো কোন অশান্তি নেই। কিন্তু বাশার আল আসাদ, যার ওয়াইফ পশ্চিমাদের মতো পোশাক পরে, সেদেশে অশান্তি রয়েছে। বরং বাস্তবতা হলো, এদেশে যদি এক ধর্ম ও এক জাতি, তথা ইসলাম ও মুসলমান বাঙালি এর চূড়ান্ত প্রাধান্য নিশ্চিত করা যায়, তবেই এদেশকে ইরাক-আফগানিস্তান হওয়ার হাত থেকে ঠেকানো যাবে।
এক ধর্ম ও এক জাতির প্রাধান্য থাকলে সেদেশে অশান্তি থাকলেও সেটা অশান্তি বলে বোধ হয় না। যেমন আমেরিকায় প্রতিবছর ১২০০০ এর বেশি লোক নিজেরা নিজেরা বন্দুক দিয়ে গোলাগুলি করে মারা যায়, তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। কারণ এক খ্রিস্টান আরেক খ্রিস্টানকে মেরেছে, এটা দিয়ে মিডিয়ার কোন উদ্দেশ্য সাধন হবে না। কিন্তু পাকিস্তানে বোমা হামলায় গুটিকয়েক শিয়া মারা গেলে তা লিড নিউজ হয়, কারণ তা সুন্নী আর শিয়াদের দ্বন্দ্বের সাথে জড়িত।
ঠিক সেভাবেই একজন হিন্দু যদি কোনক্রমে বাংলাদেশে মারা যায়, তবে সেটা হবে ‘আইএস’ এর হত্যাকাণ্ড। জাতিগত বিভেদ থাকলেই পান থেকে চুন খসলেও সেটা বিরাট কিছু হয়। ফুটপাতের হিন্দু মুচিটা মরলেও তাতে সরকারের মসনদ নড়ে উঠে। অপরদিকে জাতিগত বিভেদ না থাকলে সেটা নিয়ে পত্রিকাওয়ালারা ব্যবসা করতে পারে না, আমেরিকা তা দ্বারা কোন ফায়দা লাভ করতে পারে না। অর্থাৎ তা গুরুত্বহীন বস্তুতে পরিণত হয়।
আমরা পাশ্ববর্তী দেশ শ্রীলঙ্কার দিকে তাকালে দেখবো, সেদেশে বৌদ্ধ সিংহলী ও হিন্দু তামিলদের জাতিগত বিরোধের কারণে সেদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তারা কেউই কিন্তু মুসলমান নয়। অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশ শরীয়া আইন বলবৎ রেখেও শান্তিতে রয়েছে। কারণ সেসব দেশে জাতিগত বিভেদ নেই, যার ফলে আমেরিকার নাক গলানোর সুযোগও নেই।
সুতরাং বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এদেশে জাতিগত বিভেদ সৃষ্টিকারী হিন্দু ও নাস্তিকদেরকে অবশ্যই বিতাড়িত করতে হবে। এই বিষফোঁড়া যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্মূল করাই উত্তম, কারণ বেশি দেরী করলে তা ক্যান্সারে পরিণত হয়ে যাবে।

Post a Comment

 
Top