আর মাত্র কয়েকদিন পরই বুধবার দিবাগত রাতটি হলো ২৭শে রজব পবিত্র শবে মিরাজ। রসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই রাক্রি মুবারকে পবিত্র মিরাজ শরীফে গমন করেন এবং উম্মতের জন্য ৫ ওয়াক্ত নামায হাদিয়াস্বরূপ নিয়ে আসেন। মিরাজ শরীফের ঘটনাবলী শেষে যখন নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়টি মক্কাবাসীর নিকট ঘোষণা করলেন, তখন মুশরিকরা স্বভাবতই তা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু হযরত আবু বকর সিদ্দীক রদ্বিআল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বিষয়টি অকপটে স্বীকৃতি দেন, যার কারণে তিনি ‘সিদ্দীক’ লক্বব মুবারক লাভ করেন।

অর্থাৎ ঈমানদার হতে হলে পবিত্র মিরাজ শরীফের স্বীকৃতি দেয়াটা ‘ঐচ্ছিক’ নয়, বরং বাধ্যতামূলক। উক্ত রাত্রিতে রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করা এবং পরের দিন রোযা রাখার ফযীলত প্রসঙ্গে সাইয়্যিদুল আউলিয়া বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব “গুন্ইয়াতুত তালিবীন” নামক কিতাবে বর্ণনা করেছেন-

“হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাসের ২৭ তারিখে তথা পবিত্র মি’রাজ শরীফের দিনের বেলায় রোযা রাখবে তার আমলনামায় ৬০ মাসের রোযা রাখার ছওয়াব লেখা হবে।” সুবহানাল্লাহ! (আল ইতহাফ ৫ম খ- পৃষ্ঠা ২০৮, আল মা’য়ানী আনিল হামলিল ইসফার প্রথম খ- ৩৬৭ পৃষ্ঠা, গুনিয়াতুত তালিবীন, ক্বিসমুস ছায়ালিস ৩৩২ পৃষ্ঠা)

এ প্রসঙ্গে উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত আছে, “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত সালমান ফারিসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বর্ণনা করেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাসের মধ্যে এমন একটি দিন ও রাত আছে; ওই রাত্রে যে ব্যক্তি ইবাদত-বন্দেগী করবে এবং দিনের বেলায় রোযা রাখবে তার আমলনামায় ওই পরিমাণ ছওয়াব লেখা হবে- যে পরিমাণ ছওয়াব কোনো ব্যক্তি একশত বছর রাতে ইবাদত- বন্দেগী করলে এবং একশত বছর দিনের বেলায় রোযা রাখলে তার আমলনামায় যেরূপ ছওয়াব লেখা হয়। আর সেই মুবারক রাত ও দিনটিই হচ্ছে পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাসের ২৭ তারিখ তথা পবিত্র মি’রাজ শরীফের রাত ও দিনটি।” সুবহানাল্লাহ!

এ অনুযায়ী ইবাদত করতে হলে মুসলমানদের অবশ্যই ২৭শে রজব শরীফ দিনটি ছুটি দরকার। বিশেষ করে রাত জেগে ইবাদতের পর দিনে রোযা রাখার জন্য তো অবশ্যই ছুটি দরকার, যে রোযা কিনা ৬০ মাসের রোযা রাখার সমতুল্য। কিন্তু আফসোসের বিষয়, ৯৫ শতাংশেরও বেশি মুসলমান থাকার পরও এই বিশেষ দিনটির ছুটি এদেশে হলো ‘ঐচ্ছিক’। অথচ মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে ৬টি দেশ, ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়া, জর্দান, কুয়েত, ওমান ও আরব আমিরাতে এটি বাধ্যতামূলক ছুটির দিন। শুধু তাই নয়, মালয়শিয়ার কেদাহ, নেগেরি সেমবিলান ও পেরলিসে শবে মিরাজের ছুটি বাধ্যতামূলক। (সূত্র-http://goo.gl/x8cRxJ)

সুতরাং ইসলামী যারা নেতাকর্মী রয়েছেন, তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য হলো মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার আদায়ে শবে মিরাজের ছুটি বাধ্যতামূলক করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানানো। একটি বিষয় আমাদেরকে লক্ষ্য করতে হবে, তা হলো বাংলাদেশের আগ্রাসী ইসলামবিরোধী গোষ্ঠীটি শক্তিশালী হয়েছে বিভিন্ন অনৈসলামিক দিবস ও উৎসবকে কেন্দ্র করে। তারা পহেলা বৈশাখ, চৈত্র সংক্রান্তি, দুর্গাপূজা, রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী এসব উৎসব পালনে জোর দিয়েই কিন্তু এদেশের মুসলমানদের কোনঠাসা করছে। তাদের বক্তব্যতেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন কয়েকদিন আগে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বাতিল করতে আইনী প্রক্রিয়ায় গিয়ে ইসলামবিরোধীরা ব্যর্থ হয়। তখন মুনতাসীর মামুন একাত্তর টিভিতে বলে- ‘সংস্কৃতি’ তথা হিন্দুয়ানীর প্রচারপ্রসার বাড়াতে না পারলে আইনি পন্থায় ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বাতিল করা যাবে না। (সূত্র: http://goo.gl/ZwkUWl)

সম্প্রতি আমীর হোসেন আমু’র মুখেও শোনা গিয়েছে একই বক্তব্য। আমেরিকার এক অনুষ্ঠানে সে সরাসরিই বলেছে- “পহেলা বৈশাখ পালনের মাধ্যমে ‘সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী’, অর্থাৎ তার দৃষ্টিতে ইসলামপন্থীদের দমন করতে হবে।” (http://goo.gl/1dYZUq)

সুতরাং কুফরী দিবসের বিপরীতে ইসলামী দিবসগুলোকে আঁকড়ে না ধরলে এই ইসলামবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে পেরে উঠা যাবে না। পহেলা বৈশাখের ছুটির দ্বারা যদি ইসলামবিরোধী গোষ্ঠীর অবস্থান শক্তিশালী হয়, সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই শবে মিরাজের ন্যায় অন্যান্য ইসলামী দিবসসমূহ পালনের দ্বারা মুসলমানদের অবস্থান শক্তিশালী হবে। বর্তমানে বিভিন্ন গতানুগতিক রাজনৈতিক দলগুলোকে ছাপিয়ে ইসলামী দলগুলো সামনে উঠে আসছে, কারণ তারা জনগণের পালস বুঝতে সক্ষম হচ্ছে। ওলামা লীগ, হেফাজতে ইসলাম ও সমমনা দলগুলো ইসলামবিরোধী শিক্ষানীতি, পহেলা বৈশাখ, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম প্রভৃতি ইস্যুতে মাঠে নেমে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে।

ইসলামী দলগুলো আরো জনপ্রিয়তা অর্জন করবে, যদি ইসলামী নেতৃবৃন্দগণ এদেশের মুসলমানদের ধর্মীয় ছুটিসমূহ বৃদ্ধির জন্য তৎপরতা চালান। আপনারা খ্রিস্টানদের দেশে দেখুন, ক্রিসমাসে ডিসেম্বর ২৩ থেকে নিউ ইয়ার পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত ছুটি থাকে! অথচ বাংলাদেশে মুসলমানদের ঈদের ছুটির দৈর্ঘ্য হলো মাত্র ৩ দিন! এদেশে মুসলমানদের ছুটি নেই, অর্থাৎ মুসলমানদের দিবসের স্বীকৃতি নেই। আফসোসের বিষয়, মুসলমানদের গাফলতিতেই মুসলমানদের দিবসগুলো এদেশে উল্লেখযোগ্যভাবে পালন করা হয় না, সবার চোখের অগোচরে তা চলে যায়। বিপরীতে পহেলা বৈশাখের ন্যায় ইসলামবিরোধী দিবসগুলো পালন করা হয় অনেক ঘটা করে। যার কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হয়েও এদেশে মুসলমানদের কোন প্রভাব-প্রতিপত্তি কিছুই নেই, যা রয়েছে ইসলামবিরোধী গোষ্ঠীটির।

সুতরাং সম্মানিত ইসলামী নেতৃবৃন্দগণ, আপনারা অনতিবিলম্বে আগামী পবিত্র ২৭শে রজব শরীফ পবিত্র শবে মিরাজের ছুটি বাধ্যতামূলক করার জোর দাবি জানান। কারণ জাতিকে ইসলামী চেতনামণ্ডিত করা এবং ইসলামবিরোধী অপশক্তির কালো হাতকে ভেঙে গুড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে ইসলামী দিবসসমূহ পালনের আর কোনই বিকল্প নেই।

Post a Comment

 
Top