আমার লেখালেখির শুরু ফেসবুকে নয়, ব্লগে। কারণ যখন আমি লেখালেখি শুরু করি, তখনও ফেসবুক ছিলো শিশুপর্যায়ে। তখনকার ব্লগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিলো সামহোয়্যার ইন ব্লগ, সংক্ষেপে সামুব্লগ। সেই সামুব্লগে কেউ রেজিস্ট্রেশন করলে তাকে সাথে সাথে লেখার সুযোগ দেয়া হতো না, অনেকদিন ঝুলিয়ে রাখতো এডমিনরা। রেজিস্ট্রেশনের অনেকদিন পর একপর্যায়ে আমি সেই ব্লগে লেখার সুযোগ পাই।
সেই ব্লগটি ছিলো নাস্তিকতায় ভর্তি। কুখ্যাত নাস্তিক আসিফ মহিউদ্দীনের শুরু হয়েছিলো সেই ব্লগ দিয়ে। এই ব্লগটি তৈরী করেছিলো জার্মানির ডয়েচে ভেল, যাদের মাধ্যমে নাস্তিকেরা জার্মানিতে এসাইলাম পেয়ে থাকে। অর্থাৎ সামুব্লগটি তৈরীই হয়েছিলো নাস্তিকদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে।
আমি সামুব্লগের পরিবেশ দেখে প্রথমেই একটি জিনিস বুঝতে পেরেছিলাম। তা হলো, ব্লগসাইটকে যদি খেলার মাঠের সাথে তুলনা করা যায়, তবে নাস্তিকেরা হলো খেলোয়াড় আর সেই খেলোয়াড়দের সমর্থক শ্রেণী হলো হিন্দু সম্প্রদায়। কারণ নাস্তিকদের পোস্টগুলোতে প্রয়োজনীয় সমর্থন দেয়া ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে কমেন্ট করার কাজগুলো হিন্দুরাই করতো। এই হিন্দু সমর্থকগোষ্ঠীর সমর্থন পেয়েই নাস্তিকেরা সামুব্লগে তাদের ইসলামবিরোধী লেখালেখি চালিয়ে যেতো। কারণ ফাঁকা মাঠে কেউ খেলে না, যেহেতু তাতে বাহবা কিংবা টাকা কিছুই পাওয়া যাবে না। তখন আমি মনস্থির করলাম সামুব্লগে হিন্দুবিরোধী লেখালেখি শুরু করার। কারণ যদি সমর্থকশ্রেণীকে সরিয়ে দেয়া যায়, তাহলে সামুব্লগে নাস্তিকেরা ফাঁকা মাঠে খেলতে আগ্রহী হবে না।
বলা বাহুল্য, আমার এই পদক্ষেপ অতি অল্পসময়েই কার্যকরী ফলাফল বয়ে আনলো। অনেকের হয়তো এরকম ধারণা রয়েছে যে, হিন্দুদের বিরুদ্ধে বললে তারা আবার মুসলমানদের বিরুদ্ধে বেশি করে বলে কিনা। কিন্তু আমার সামুব্লগের অভিজ্ঞতা সেটা বলে না। বরং বাস্তবতা হলো, মুসলমানরা ঢিলা দিলেই হিন্দুরা আরো সুযোগ পায়। উদাহরণস্বরূপ, সামুব্লগে সবচেয়ে জঘন্য ইসলামবিরোধী কমেন্টগুলো করতো যশোরের আশীষ চ্যাটার্জী নামক এক ব্যক্তি। নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানের বিরুদ্ধে ধর্ষক, ডাকাত সহ যা খুশি তাই লিখতো সে।
একদিন দেখলাম, সে আমার একাউন্টে ঢুকে আমার লেখাগুলো পড়েছে। এরপর আমি দেখলাম, সেই আশীষ চ্যাটার্জি আর লজ্জায় সামুব্লগে আর কোন কমেন্ট করছে না। দু একটি কমেন্ট যাও করছে, তাতেও সেই আগের ইসলামবিরোধী জোশ তার নেই।
সামুব্লগের আরেকজন ইসলামবিরোধী ব্লগার ছিলো বিপ্লব কান্তি দে। মগাচীপ, পারভেজ আলমের মতো নাস্তিকদের ব্লগে বিপ্লব কান্তি অহরহ ইসলামবিরোধী কমেন্ট করতো। তার আরেকটি পরিচয় হলো, সে ইসকনের সক্রিয় সদস্য। সেই বিপ্লব কান্তি আমার পোস্টে কোন জবাব দিতে না পেরে কাঁদো কাঁদো স্বরে একটি পোস্ট লিখেছিলো-
“হিঁদু ধর্ম খুব খারাপ! তাদের মেয়েরা খারাপ! সবাই খারাপ!”
একটি চরম ইসলামবিরোধী হিন্দুর এরকম নতজানু হওয়ার দৃশ্য ছিলো সত্যিই অভাবনীয়। এতো বছর পর আজও বিপ্লব কান্তির ঐ নতজানু পোস্টের শিরোনাম আমার চোখে ভাসে। যাই হোক, এরপর বিপ্লব কান্তিও তার মনোবল হারিয়ে ফেললো, ইসলামবিরোধী কোন কমেন্ট তাকে করতে দেখা যেতো না। উল্লেখ্য, বিপ্লব কান্তি আর আশীষ চ্যাটার্জি, এ দুজনেরই নাম নাস্তিকদের তালিকায় রয়েছে। (তালিকা সম্পর্কে জানতে- http://goo.gl/hixCc1)
ওদিকে সামুব্লগে পসার হারিয়ে নাস্তিকেরা একে একে ভিড় জমাতে লাগলো ফেসবুকে। হিন্দুরা তো আগেই সামুব্লগ ছেড়ে ভেগেছিলো। তারা সামু থেকে বিতাড়িত হয়ে ‘আমি হিন্দু’ ‘বাঙালি হিন্দু পোস্ট’ এসব ফেসবুক পেজ খুলে ইসলামবিরোধী লেখালেখি করতে লাগলো। আমিও ফেসবুকে একাউন্ট খুলে লেখালেখি শুরু করলাম। কিন্তু ফেসবুকটা ছিলো অন্যরকম। তা হলো, ফেসবুকে সত্যিকারের পাঠকের খুব অভাব। সবাই এখানে আসতো ছবি কিংবা অন্যান্য জিনিস দেখতে, স্রেফ ফাজলামো করাই অধিকাংশের উদ্দেশ্য এখানে। ব্লগের অনেক ভালো ইসলামপন্থী লেখক ফেসবুকে এসে এ কারণে সুবিধা করতে পারেনি, কারণ বুদ্ধিবৃত্তিক পোস্ট হজম করার মতো পাবলিক খুবই কম ফেসবুকে।
অনেকের হয়তো শুনতে খারাপ লাগবে, কিন্তু ফেসবুকে জামাতিদের প্রভাবও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছিলো। তারা ফেসবুকে বাঁশেরকেল্লা’র মতো পেজ থাকা সত্ত্বেও তা থেকে নাস্তিকতা কিংবা হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে কোন পোস্টই দিতো না। উল্টো তাদের অনেকেই হিন্দুদের বিরুদ্ধে লিখতে নিরুৎসাহিত করতো, আমাকেও বহুবার তাদের দ্বারা বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে পরিস্থিতি পাল্টেছে, বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদি নির্বাচিত হওয়ার পর। ভারতে ক্রমবর্ধমান হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার কারণে এখন আর কেউ হিন্দুদের বিরুদ্ধে বলতে পিছপা হয় না।
এমতাবস্থায় ফেসবুক থেকে নাস্তিকতা দূরীকরণে আমার পরামর্শ হলো-
১) হিন্দুদের বিরুদ্ধে বেশি বেশি তথ্যমূলক পোস্ট দেয়া। পোস্টগুলো হিন্দুদের দেবদেবী নিয়ে কটূক্তি করে নয়, বরং তাদের সম্প্রদায়কে আঘাত করে হতে হবে। সম্প্রদায়কে কিভাবে আঘাত করা যায়? উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আজকে খবরে পড়লাম ভারতে নাকি গর্ভ ভাড়া দেয়ার ব্যবসা চলে। সেদেশের হিন্দু মহিলারা টাকার বিনিময়ে পশ্চিমা সাদা চামড়াদের ভ্রুণ নিজের শরীরে বহন করে বাচ্চা ফোটায়। (http://goo.gl/fiIXs1)
এ বিষয়টি নিয়ে হিন্দুদের রুচিকে কটাক্ষ করবেন, ছি ছি করবেন। সাথে সাথে অন্যান্যরা সেটা শেয়ার ও লাইক-কমেন্ট করে লেখককে উৎসাহ দিবেন। সাথে সাথে হিন্দুদের যেসব কোর ব্যক্তি, যেমন রবীন্দ্রনাথ, শিবাজি, সূর্যসেন এদের দোষত্রুটিগুলো প্রকাশ করে বেশি বেশি পোস্ট দেয়া দরকার। সমসাময়িককালে হিন্দুদের বিভিন্ন প্রতারণা, বাটপাড়ির বিষয়গুলো তুলে আনা দরকার। মোটকথা, হিন্দুদেরকে অনলাইনে জাতিগতভাবে একঘরে করতে হবে। তাহলেই দেখবেন তারা ফেসবুক থেকে আপসেআপ সরে যেতে বাধ্য হবে আর নাস্তিকেরাও তাদের পসার জমাতে পারবে না।
২) কমেন্ট করাটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ব্লগে থাকার সময়ে আমি নাস্তিক ও হিন্দুদের পোস্টগুলোতে এমনসব কমেন্ট করতাম, যেগুলোর ফলে তারা কিছুতেই কমেন্ট সেকশনে মুসলিমবিরোধী আলোচনা চালিয়ে যেতে পারতো না।
উদাহরণস্বরূপ, ব্লগসাইট 'আমারব্লগ'-এ একটি পোস্ট করা হয়েছিলো ‘আন্তঃধর্মীয় বিবাহ’ নিয়ে। হিন্দু ও নাস্তিকেরা ঐ পোস্টে সমর্থন জানাচ্ছিল। ঐ পোস্টে গিয়ে আমি কমেন্ট করলাম- “হিন্দু মেয়েদের পরকীয়ার প্রবণতা বেশি। তাদের বিয়ে করলে সন্তান বৈধ না অবৈধ সে প্রশ্ন থেকে যায়।”
এই কমেন্টে দারুণভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হলো ‘প্রীতম’ ওরফে প্রীতম দাস, আমারব্লগের একজন গৃহপালিত ইসলামবিরোধী ব্লগার। সে আরেকটি ব্লগ লিখে ঘোষণা দিলো, যদি আমার ‘দস্তার’ একাউন্ট আমারব্লগ থেকে ডিলিট না করা হয়, তবে সে আমারব্লগে লেখালেখি বন্ধ করে দেবে। (লিঙ্ক-https://goo.gl/dlQ2Vb)
এর জের ধরে আমারব্লগ এডমিন আমার একাউন্টটি ব্যান করে মন রক্ষা করলো তাদের গৃহপালিত ব্লগার প্রীতম দাসের। কিন্তু সবসময় তো আর এরকম হতো না, বিশেষ করে সামুব্লগে আমি বহুদিন ব্যান না হয়ে হিন্দুদের বিরুদ্ধে লিখে যেতে পেরেছি। যার ফলে ধ্বসে পড়েছিলো সামুর নাস্তিকতার সৌধ। হিন্দুদের নিয়ে জায়গামতো চোখা কমেন্ট যদি করা যায়, সেক্ষেত্রে তা অনেকগুলো একটিভ মুসলিমবিরোধী হিন্দুর মনোবলকে ভেঙে দিতে সক্ষম। হাল্কা কমেন্ট করবেন না, ফটো পোস্ট করবেন না। বুদ্ধিদীপ্ত ধারালো কমেন্ট করার চেষ্টা করবেন, যা হিন্দুদের কলিজায় গিয়ে আঘাত করবে। প্রীতম দাস তো মনের দুঃখে ব্লগ লেখাই ছেড়ে দিতে চেয়েছিল। এভাবেই মুসলমানদেরকে ফেসবুকে নাস্তিক খেদানোর হিকমত অবলম্বন করতে হবে হিন্দুবিরোধিতার জোয়ার আনার মাধ্যমে।
এখানে ‘অসাম্প্রদায়িকতা’ কিংবা ‘সুশীলতা’ দেখার কোন অবকাশ নেই। ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সময়ে গ্রীক দর্শনকে গ্রহণ করাই ছিলো সুশীলতা, যেমনটি বর্তমানে হিন্দুয়ানী কালচারকে গ্রহণ করাটাকে ‘সুশীলতা’ বলা হয়। কিন্তু তিনি এই ‘সুশীলতা’র পরোয়া করেননি, গ্রীক দর্শনের বিরুদ্ধে লিখে গিয়েছেন। আমাদেরকেও নাস্তিক ও হিন্দুদের এই কথিত ‘সুশীলতা’র মাপকাঠিকে অগ্রাহ্য করে, ভেঙে চুরে বেরিয়ে আসতে হবে। হিন্দুদের বিরুদ্ধে কলম ধরতে হবে। তবেই সম্ভব হবে ফেসবুক থেকে নাস্তিকতা ও হিন্দুত্বের অবসান ঘটানো এবং মুসলমানদের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা, যেখানে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মতো কেউ থাকবে না।

Post a Comment

 
Top