হিন্দুদের দ্বারা ভারতীয় মুসলমানদের দাবিয়ে রাখার একটি মূল কারণ হলো, ভারতীয় মুসলমানরা তাদের অতীত ইতিহাস জানে না। একদা এই ভারতবর্ষ জঙ্গল ছিলো, জঙ্গলে ছিলো কিছু বানর। মনীষী আল বিরুনীর মতে, “হিন্দুরা শরীরের কোনো অংশের কেশ মুণ্ডন করত না। মূল রুপে তো গরমকালে তারা উদোম হয়ে চলাফেরা করত আর মাথার চুল না কাটার এটাই ছিল মূল কারণ যে, তারা সূর্যালোক থেকে বাঁচতে চাইত। তারা গোঁফদাড়িও কামাত না। আর তো গুপ্তাঙ্গের কেশ মুণ্ডনের প্রশ্নই ওঠে না।” সেই জঙ্গল থেকে মুসলমানরা ভারতবর্ষকে গড়ে তোলে গোটা বিশ্বের সর্বাপেক্ষা ধনী ও সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে।
এই ভারতবর্ষের মুসলিম সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র ছিলো দিল্লী। কেমন ছিলো সেই দিল্লী? মুসলমানরা তা জানে না, কিন্তু খ্রিস্টানরা জানে। কারণ খ্রিস্টানরা এই সভ্যতা ধ্বংস না করলে পৃথিবীতে আজ সুপারপাওয়ার হতে পারতো না। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের কথা সবাই শুনেছেন। সেই বছর খ্রিস্টান ও হিন্দুদের চক্রান্তে দিল্লীকে ধ্বংস করা হয়, ভারতবর্ষে চূড়ান্তরূপে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রিটিশ কলোনী। এ নিয়ে স্কটিশ লেখক উইলিয়াম ড্যালরিম্পেল লিখেছে- “মোগল দরবারের অস্তিত্ব না থাকায় সংস্কৃতি ও শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে নগরীর খ্যাতিও বিদায় নিয়েছিল। গ্রন্থাগারগুলো লুণ্ঠিত হয়েছিল, মূল্যবান পাণ্ডুলিপিগুলো আর ছিলো না। প্রায় সবগুলো মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং মাদ্রাসার ভবনগুলোও বিক্রি হয়ে গিয়েছিলো। সেগুলো ধ্বংস করে ফেলে হিন্দু ব্যবসায়ীরা। সবচেয়ে বিখ্যাত মাদ্রাসা ছিলো ‘মাদ্রাসা-ই-রহিমিয়া’, যা নগরীর নেতৃস্থানীয় বানিয়া রামজি দাস নিলামে কিনে নিয়েছিল, যে এটি ব্যবহার করে গুদাম হিসেবে।
১৮৫৯ সালের মধ্যে গালিব (মির্জা গালিব) অভিযোগ করতে থাকে যে, নগরীতে সে একজন গ্রন্থ বিক্রেতা, গ্রন্থ বাঁধাইকারী অথবা একজন লিপিকার পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছে না, যে নগরীতে একসময় গ্রন্থ চর্চা ছিলো সবচেয়ে বেশি। (সূত্র: দ্য লাস্ট মোগল, উইলিয়াম ড্যালরিম্পেল, ঐতিহ্য প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৪৩৫)
ড্যালরিম্পেলের বইটি আকারে বড়, যা থেকে ক্ষুদ্র পরিসরে দিল্লীর মুসলিম সভ্যতা নিয়ে আলোচনা করা সম্ভবপর নয়। এই যে ‘মাদ্রাসা-ই-রহিমিয়া’ এর উল্লেখ সে করেছিলো, তারই একজন ছাত্র ছিলেন হযরত ফযলে হক খায়রাবাদী। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে আটক করে হযরত ফযলে হক খায়রাবাদীর থেকে ব্রিটিশরা ভারতীয় মুসলিম জ্যোতির্বিদ্যার একটি পাণ্ডুলিপির ব্যাখা লিখিয়ে নিয়েছিলো।
অর্থাৎ এই ভারতবর্ষে একদিন স্পেন তো বটেই, তার চাইতেও ধনী ও সমৃদ্ধ মুসলিম সভ্যতা বিরাজ করতো। বিজ্ঞান-ইতিহাস ও কাব্যচর্চার প্রাণকেন্দ্র ছিলো দিল্লী, মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানিত সদস্য ছিলো ভারতবর্ষের মুসলমানরা। তার কিছুই এখন আর অবশিষ্ট নেই, যার মূল কারণ হলো হিন্দুদের চক্রান্ত। আমরা স্পেনের ইতিহাস পড়ে খ্রিস্টানদের প্রতি ক্ষুব্ধ হই, শপথ নেই প্রতিশোধ নেয়ার। কিন্তু দিল্লীর ইতিহাস আমরা জানি না, নিজেদের পূর্বপুরুষদের যে একটি বিরাট সভ্যতা ছিলো সেটাই এ অঞ্চলের মুসলমানরা জানে না। যার ফলে এই সভ্যতা ধ্বংসকারী হিন্দুদের প্রতি আমাদের কোন ক্ষোভ নেই, আর ক্ষোভ না থাকার ফলে আজও আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের অস্তিত্বের শত্রু এসব হিন্দুদের সাথে মিশতে গিয়ে পদে পদে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।
Post a Comment