১) রাষ্ট্রের আবার ধর্ম কী? রাষ্ট্র কী ধর্ম পালন করে? নামায পড়ে, রোযা রাখে?

উত্তর: রাষ্ট্র হয়তো নামায পড়ে না, রোযা রাখে না। কিন্তু রাষ্ট্র নামাযের ব্যবস্থা করে দিবে, অর্থাৎ জুম্মাবারে ছুটি দিবে এবং মসজিদের কারেন্ট বিল মওকুফ করবে। রাষ্ট্র রোযা রাখার ব্যবস্থা করে দিবে, রমযান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাষ্ট্র নিবে। রাষ্ট্র রমযান মাসে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সুবিধার্থে অফিস আওয়ারও কমিয়ে দিতে বাধ্য। আর এটা তখনই সম্ভব, যখন রাষ্ট্র দ্বীন ইসলামকে স্বীকৃতি দিবে। কারণ অমুসলিম রাষ্ট্রে মুসলমানদের এসব সুবিধা নেই।

২) ১৯৮৮ সালে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ সংবিধানে সংযুক্ত করার আগে কী মুসলমানরা ‘মুসলমান’ ছিলো না? তাহলে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ না থাকলেই বা কী হবে?

উত্তর: আসলে এর উদাহরণ এভাবে দেয়া যায়। ধরা যাক, কোন গ্রামে একজন ব্যক্তি রয়েছে। সেই গ্রামে তার পিতার নামে একটি স্কুল কিংবা রাস্তার নামকরণ করা হলো। পরবর্তীতে তার পিতার সেই নামটি কেটে অন্য নাম বসিয়ে দেয়া হলো।

এখন এই ঘটনাটি সম্পূর্ণই উক্ত ব্যক্তি ও তার পিতাকে অপমান করার সমতুল্য। এখন যদি ঐ ব্যক্তি তার পিতার নাম কেটে দেয়ার প্রতিবাদ না করে, সেক্ষেত্রে সে হবে কুলাঙ্গার সন্তান। অর্থাৎ উদাহরণে উল্লিখিত ব্যক্তিটি তার পিতার নামে স্কুলের নামকরণ করার আগে সন্তান ছিলো এটা ঠিক, কিন্তু যদি তার পিতার নামে স্কুলের নামকরণ করে সেটা কেটে দেয়ার পর উক্ত ব্যক্তিটি প্রতিবাদ না করে, সেক্ষেত্রে সে সন্তান হিসেবে কলঙ্কিত হবে।

ঠিক সেভাবেই ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ থাকার আগে এদেশের মানুষ মুসলমান ছিলো। কিন্তু ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ যোগ করে তা কেটে দেয়ার পায়ঁতারা হলে যদি তারা এর প্রতিবাদ না করে, সেক্ষেত্রে বিষয়টা এমন দাঁড়ায় যে এদেশের মানুষ ইসলামের অবমাননা মেনে নিয়েছে। সেক্ষেত্রে এদেশের মানুষ অবশ্যই মুসলমান থাকতে পারবে না, যা একটা শিশুও বুঝবে।

৩) ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ তো সংযুক্ত করেছিলো এরশাদ। এরশাদ একটা লম্পট ছিলো, তাই তার সংযুক্ত করা রাষ্ট্রধর্মের পক্ষে মুসলমান হয়ে কথা বলছেন কেন?

উ্ত্তর: এই যুক্তি দিলে আইয়ুব খানের আমলে প্রতিষ্ঠিত করা বুয়েট কিংবা ক্যাডেট কলেজগুলো ভেঙে ফেলতে হবে, কারণ সে পাকিস্তানী স্বৈরশাসক। ‘ইসলাম’ এরশাদের বাপের সম্পত্তি নয়। এদেশের মুসলমানরা এরশাদের দিকে তাকিয়ে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ ফেরত চায়নি।

বরং এদেশের মুসলমান আলিম-ওলামারা এই চিন্তা করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখতে চেয়েছেন যে, এই ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ এর বিরোধিতা করছে নাস্তিক ও হিন্দুরা। অর্থাৎ ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বাতিল হলে এদেশের নাস্তিক ও হিন্দুদের নিশ্চয়ই কোন লাভ রয়েছে, আর নাস্তিক ও হিন্দুদের লাভ মানেই মুসলমানদের ক্ষতি।

টকশোতে এসব ছেলেমানুষি যুক্তি দিয়ে বাঙালি ‍মুসলমানকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। তারা হাঁড়ির একটি ভাত টিপেই বুঝতে পারে ভাত হয়েছে কিনা। গোটা ভারতের মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করতে পারলেও সাতচল্লিশে আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে ‘হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই’ স্লোগান দিয়ে ভোলানো যায়নি, আর যায়নি বলেই আমরা আজ স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি।

Post a Comment

 
Top