সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের ‘সানাউল্লাহ খান’ নামক একজনের পোস্টে আমার চোখ আটকে গেল। সেখানে লেখা ছিলো-

“ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ ! ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত ! খুলে গেল নতুন দিগন্ত !সর্বাধিক অত্যাচারীতরা এক মঞ্চে । ভারতীয় রাজনীতির দুর্বীপাকে পড়ে মুসলমান ও দলিতরা দিশেহারা । সময়ের দাবীকে মান্যতা দিয়ে এগিয়ে এসে হাত মেলালেন বহুজন সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো মায়াবতী ও বিতর্কিত MIM নেতা ব্যারিস্টার আসাউদ্দিন ওয়েসি ।” (https://goo.gl/0aRi6f

আমি পোস্টটি পড়লাম আর চিন্তা করতে লাগলাম, হায়রে! এখন শুকর আর দেশী মদ খাওয়া দলিত হিন্দুগুলোর সাথে জোট করলো মুসলিম নেতারা। এরা এখন স্লোগান দিচ্ছে, জয় মীম, জয় ভীম। মীম হলো আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দল, আর ‘ভীম’ এসেছে দলিতদের নেতা ভীমরাও আম্বেদকরের নাম থেকে।

অথচ এই দলিত হিন্দুরাই ভারতে দাঙ্গার সময়ে মুসলিম নিধনে মূল ভূমিকা পালন করে থাকে। ভারতে বিহার, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরাঞ্চলেই মূলত দলিতদের বাস, এবং সেসব জায়গাতেই সর্বাধিক মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা হয়ে থাকে। দলিত নেত্রী মায়াবতী হলো উত্তরপ্রদেশের নেত্রী, আর উত্তরপ্রদেশে দলিতরা কিভাবে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা লাগিয়ে থাকে, তার একটি উদাহরণ হলো ১৯৮০ সালের মোরাদাবাদ দাঙ্গা। ঐ বছরের ১৩ই আগস্ট ছিল ঈদুল ফিতরের দিন। ঈদগাহে নামায চলাকালীন সময়ে দলিত হিন্দুরা তাদের বস্তি থেকে একটি গৃহপালিত শূকর এনে ছেড়ে দেয় নামাযরত মুছল্লীদের মাঝে, যার ফলে লেগে যায় ভয়াবহ দাঙ্গা।

আমি আমার পূর্বের পোস্টে লিখেছিলাম যে, আমাদের পূর্বপুরুষদের ইতিহাস হলো বোধোদয়ের ইতিহাস। কংগ্রেস করা বাঙালি মুসলমানরা হিন্দুদের থেকে বারবার প্রতারিত হয়েছিলো, যার ফলশ্রুতিতে তারা কংগ্রেস থেকে বের হয়ে মুসলিম লীগে যোগদান করেছিলেন। এর ফলশ্রুতিতেই জন্ম নিয়েছিলো পাকিস্তান। (https://goo.gl/Y8DXA7)

এ বাদেও ভারতবর্ষের মুসলমানদের আরেকটি বিরাট অংশ রয়েছে, যাদের বোধোদয় হয়নি। যারা হিন্দুদের এতো এতো প্রতারণার পরও বুঝতে সক্ষম হয়নি যে, স্বজাতির মুক্তি অর্জনে হিন্দুদের থেকে আলাদা হওয়ার কোন বিকল্প নেই। এই বোধোদয় না হওয়া অংশটিই হলো বর্তমান ভারতীয় মুসলমানরা। সাতচল্লিশে তারা হিন্দুদের ভাই ডেকে ভারতের অন্তর্ভূক্ত হয়েছিলো, আর আমাদের পূর্বপুরুষেরা চেয়েছিলেন পাকিস্তান। সেই সাতচল্লিশের পর পদ্মা-মেঘনায় বহু পানি গড়িয়েছে, কিন্তু হিন্দুদের সাথে ট্যাগ লাগানোর মানসিকতা থেকে ভারতীয় মুসলমানদের উত্তরণ ঘটেনি। ভারতের মুসলমানরা পারে নিজেরা নিজেরা আলাদা দল গঠন করতে, সেই সংখ্যাগরিষ্ঠতাও তাদের রয়েছে। কিন্তু তারা তা না করে আজও সর্বক্ষেত্রে হিন্দুদের সাথে কোয়ালিশন করতে যায়।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থী হিন্দুদের উপর ভরসা করে তাদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে রেখেছিলো সেখানকার মুসলমানরা। একপর্যায়ে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা দেখলো যে, বামপন্থীদের রাজত্বে তাদের কোন উন্নতিই হয়নি, তারা প্রতারণার শিকার। এরপর তারা চয়েস করলো তৃণমূলীদের, মমতাকে বসালো কলকাতার মসনদে। বলা বাহুল্য, তৃণমূলীদের রাজত্বেও মুসলমানদের কোন উন্নতি হয়নি।

এভাবেই চলছে ভারতীয় মুসলমানদের জীবন। বারবার তারা হিন্দুদের সাথে কোয়ালিশন করতে গিয়ে প্রতারিত হচ্ছে। সম্প্রতি ‘মীম-ভীমের’ কোয়ালিশন নিয়ে ভারতীয় মুসলমানরা যদি মনে করে যে, বর্ণহিন্দুদের দ্বারা নির্যাতিত বলে দলিত হিন্দুরা তাদের সাথে এক হবে, সেটা হবে তাদের ভুল ধারণা। 

বরং বাস্তবতা হলো, এই নির্যাতিত দলিতদের যতোটা হিন্দুধর্মপ্রীতি রয়েছে, সেটা ব্রাহ্মণদেরও নেই। উদাহরণস্বরূপ বলতে হয়, হিন্দু সম্প্রদায়ে তাদের মহিলারা বেশি নির্যাতিত হয়, কিন্তু তা বলে কী তাদের হিন্দুধর্মপ্রীতি কম? বরং বাস্তবতা হলো, হিন্দুধর্ম পালনের দিক দিয়ে, কিংবা মুসলিমবিদ্বেষের দিক দিয়ে এই শাখা-সিঁদুরওয়ালা হিন্দু মাসীগুলো পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি অগ্রগামী। 

ভারতীয় মুসলমানরা মুক্তি লাভ করতে পারবে, যদি তারা হিন্দুদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হলে নিজেরা আলাদা একটি প্ল্যাটফর্মে একত্রিত হয়। ব্রিটিশ আমলে কংগ্রেস থেকে মুসলমানরা পদত্যাগ করে মুসলিম লীগে একত্রিত হয়ে ঠিক সেই কাজটিই করেছিলো। পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা ইতিহাস পড়ে দেখুক, মুসলিম লীগ গঠন করে বাঙালি মুসলমানরা ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কলকাতার ক্ষমতায় ছিলো। পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরাও পারে সেরকম কিছু করতে, সেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা তাদের রয়েছে। কিন্তু আফসোস, হিন্দুদের সাথে কোয়ালিশন করার বোকামি থেকে তারা আজও মুক্ত হতে পারলো না।

Post a Comment

 
Top