গতকাল থেকে বিদ্যানন্দ নিয়ে লেখাগুলোতে একটি কথা সবাই বারবার বলছে, আর তা হলো বিদ্যানন্দ ‘ভালো কাজ’ করেছে। সবাই নাকি তাদের ‘ভালো কাজ’কে এপ্রিশিয়েট করেছে, তাই দুই-একটি পেজের পোস্ট মোতাবেক কিশোর দাস কেন সরে যাবে? মেইনস্ট্রীম কোনো আলেম, বুদ্ধিজীবী কি তাদের বিরুদ্ধে বলেছে?

অথচ মূল সমস্যা কিন্তু রয়ে গিয়েছে মুসলমানদের দরাজ হস্তে বিলানো এই ভালোত্বের সার্টিফিকেটেই, যা কেউ লক্ষ্য করছে না। এবার অনেকেই তেড়ে আসবে এই বলে যে, কোন অমুসলিম ‘ভালো কাজ’ করলে কি তাকে ভালো বলা যাবে না? ছি ছি আপনি এতো সাম্প্রদায়িক ব্লা ব্লা ব্লা।

কিন্তু আপনিই নিজেকে প্রশ্ন করুন, কেন আওয়ামী লীগ কখনো জিয়াকে, কিংবা বিএনপি কেন কখনোই শেখ মুজিবকে ভালো বলে না? আওয়ামী লীগের কেন কেউ প্রশ্ন তোলে না যে, জিয়া বিএনপি হলেও তার ‘ভালো কাজের’ জন্য তাকে ভালো বলা যেতে পারে না কেন? বলা বাহুল্য, আওয়ামী লীগের মধ্যে কেউ এই প্রশ্ন তুললে তাকে এক ঘণ্টার মধ্যে দল থেকে বহিষ্কারের চিঠি ধরিয়ে দেয়া হবে এবং আপনারা অছাম্প্রদায়িক মুসলিম সমাজও তা স্বাভাবিক বলেই মেনে নেবেন।

উল্লেখ্য, কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে কিংবা কোনো জাতির উপর গণহত্যা চালানোর বৈধতা দেয়ার পূর্বে যা করা হয়, তা হলো সেই জাতির বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো হয়। ইরাক যুদ্ধের আগে সাদ্দামের নিকট ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে, এই প্রোপাগাণ্ডার মাধ্যমে আক্রমণের বৈধতা দেয়া হয়েছিল। প্রোপাগাণ্ডার মাধ্যমে নিজেকে মহৎ এবং প্রতিপক্ষকে ভিলেন হিসেবে তুলে ধরতে হয় আক্রমণের মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশ সৃষ্টির স্বার্থেই।

এখন যুদ্ধাবস্থায় যদি প্রতিপক্ষের কারো ভালো কাজের উদাহরণ দিয়ে তাকে ভালো বলে তুলে ধরা হয়, সেটা কিন্তু প্রতিপক্ষের জন্য আরো সোনায় সোহাগা হবে। তারা তখন মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে আরো এগিয়ে যাবে, নিজেকে অধিকতর মহৎ এবং প্রতিপক্ষকে অধিকতর নিকৃষ্ট হিসেবে তুলে ধরে প্রতিপক্ষের ওপর দমন-পীড়ন চালাতে আরো সুবিধা পাবে। অর্থাৎ বিএনপির কেউ যদি শেখ মুজিবকে ভালো বলে তুলে ধরে, তা মূলত আওয়ামী লীগকেই সুবিধা করে দেবে বিএনপিকে নিকৃষ্ট ঠাউড়ে তার নেতাকর্মীদের জেলে ভরার কাজে।

বিশ্ব ইতিহাসে ভুড়ি ভুড়ি উদাহরণ রয়েছে, যেখানে অমুসলিম রাজনৈতিক নেতা কিংবা লেখক-বুদ্ধিজীবী, মুসলমানদের দেয়া ভালোত্বের সার্টিফিকেট নিয়ে তা মুসলিম ধ্বংসে ব্যবহার করেছে। উপমহাদেশে তার প্রধান উদাহরণ হলো কংগ্রেসের পাপাত্মা গান্ধী। খিলাফত আন্দোলন কালে মুসলমানদের দেয়া এই ‘মহাত্মা’ সার্টিফিকেটকে পুঁজি করে যেভাবে সে পরবর্তীতে মুসলমানদের ক্ষতি করেছে, তা এককথায় অকল্পনীয়। এতো পূর্বে যাওয়ার দরকার নেই, কিছুদিন আগে কেজরিওয়ালকে ভালোত্বের সার্টিফিকেট দিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে জিতিয়ে দেয়ার পরই কিন্তু হলো দিল্লী দাঙ্গা।

এখন বিদ্যানন্দ ও কিশোর দাস বাংলাদেশের মুসলমান ও তাদের ধর্মীয় অনুভূতিকে যে কটাক্ষ-অবমাননার শিকারে পরিণত করেছে, তা কিন্তু সে পেরেছে এদেশের মুসলমানদের দরাজ হস্তে দেয়া এই ভালোত্বের সার্টিফিকেটের কল্যাণেই! সুতরাং সংগঠনটির হিন্দুয়ানী নাম, তার হিন্দু চেয়ারম্যান থাকার পরও তার বিরুদ্ধে যে কোনো আলেম যে কোনো প্রশ্ন তোলেনি, তাদের যাকাত আদায় নিয়ে কিছু বলেনি, এই না বলাটাই সবচেয়ে বড় ব্লান্ডার।

মুসলমানদের এসব অছাম্প্রদায়িক আলেম-ওলামা দিয়ে কোনো দরকার নেই, কারণ তারা একটি যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে। একদা বাংলাদেশের ইসলাম শিক্ষার পাঠ্যপুস্তকে জিহাদ অধ্যায়টি ছিল, তখন আমরা ‘বড় জিহাদ’ ‘ছোট জিহাদ’ পড়ে এসেছি। অমুসলিমদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ হচ্ছে ছোট জিহাদ, আর নিজের নফসের বিরোধিতা করা হচ্ছে ‘বড় জিহাদ’। বলা বাহুল্য, বর্তমান পরিবেশে অমুসলিমদের শত্রু গণ্য করাটা হচ্ছে নফসের সবচেয়ে বড় বিরোধিতা, কারণ তাদের শত্রু বললেই পরিবেশ-সমাজ ‘সাম্প্রদায়িক’ ট্যাগ দিয়ে একঘরে করে দিতে চায়।

কিন্তু এই বড় জিহাদ তথা প্রতিপক্ষকে শত্রু গণ্য করে তাকে ঘৃণা করা, এটাতেই মুসলমানদের জয়ী হতে হবে। যুদ্ধাবস্থায় প্রতিপক্ষকে মহত্বের সার্টিফিকেট দেয়ার অর্থই হলো, প্রতিপক্ষকে নিজের উপর গণহত্যা ও আগ্রাসন চালানোর সার্টিফিকেটও প্রদান করা। কিন্তু অথর্ব অছাম্প্রদায়িক মুসলমান তার কিছুই অনুধাবন করতে পারছে না। 

Post a Comment

 
Top