‘কুয়োর ব্যাঙের সাগর দর্শন’ প্রবাদটার সার্থকতা প্রমাণিত হয়, যখন এদেশের মানুষ রবীন্দ্রকে দাবি করে ‘বিশ্বকবি’। কুয়োর ব্যাঙ যেমন কুয়োটাকেই মনে করে গোটা পৃথিবী বা মহাসাগর, এদেশের মানুষও তেমনি বাংলাদেশের গণ্ডির ভেতরে রবীন্দ্রকে নিয়ে অতি-উচ্ছাস দেখে মনে করে যে, বাকি বিশ্বেও বোধহয় এই রবীন্দ্রকে বিরাট কবি-সাহিত্যিক হিসেবে গণ্য করা হয়।

এটা নিয়ে প্রথম আলোর আনিসুল হক একটি আর্টিকেল লিখেছিল, যার শিরোনাম ‘আমাদের কোনো বিশ্বকবি নেই’। সেখানে সে দেখিয়েছে যে, রবীন্দ্রর লেখা পশ্চিমা বিশ্বে মোটেই চর্চা করা হয় না, পশ্চিমা বিশ্ব তো দূরে পাশের ভারতেও তাকে নিয়ে সাধারণ হিন্দু জনতা কিছুই জানে না। আনিসুল হক বলেছে যে, রবীন্দ্রকে নিয়ে বাইরের দেশে মোটেই চর্চা হয় না এর কারণ তার বর্তমানে ‘প্রাসঙ্গিকতা’ নেই। ১৯১৩ সালের দিকে তার পশ্চিমা বিশ্বে প্রাসঙ্গিকতা বা আগ্রহ ছিল, তাই তাকে নোবেল প্রাইজ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সেই আগ্রহ মিইয়ে যায়, তখন রবীন্দ্রের ‘গীতাঞ্জলি’র ভূমিকা লিখে দেয়া কবি ইয়েটস বিরক্ত প্রকাশ করে বলে- "Damn Tagore," wrote Yeats in 1935

পাশ্ববর্তী ভারতেও রবীন্দ্রকে নিয়ে উচ্ছাস নেই, কারণ রবীন্দ্রের লেখার ধাঁচ ছিল ‘নরম হিন্দুত্ব’। বিপরীতে ভারতের বর্তমান ট্রেন্ড হচ্ছে কট্টর হিন্দুত্ব। কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা কংগ্রেস কিংবা মমতার মতো নরম হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে প্রচার চালায়, যে তারা নাকি ‘মুসলিম তোষণ’ করছে। অর্থাৎ ভারতে কিংবা পশ্চিমা বিশ্বে রবীন্দ্রের মোটেই প্রাসঙ্গিকতা না থাকলেও বাংলাদেশে তাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হয়, রীতিমতো ঈশ্বর বলে সম্বোধন করা হয়। কারণ ভারতে ‘নরম হিন্দুত্ব’ বাতিল ঘোষিত হলেও, বাংলাদেশের মুসলমানদের হিন্দু বানানোর কাজে এখনও রবীন্দ্রের নরম হিন্দুত্বের টোটকার প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে।

এখন এর থেকে নিস্তার পাওয়ার একটিই উপায়, তা হলো রবীন্দ্রকে তার হিন্দু পরিচয়ের কারণেই ঘৃণা করতে হবে, ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে। সম্প্রতি করোনাভাইরাসের শিকার ব্রিটিশ পিএম বরিস জনসনের একটি উক্তি এ বিষয়ে উল্লেখ্য। সে বলেছে, “রোমের ভ্যাটিকানে সিসটাইন চ্যাপলের সিলিংয়ে মাইকেলাঞ্জেলোর ষোড়শ শতকের শিল্পকর্মের সঙ্গে তুলনা করলে মুসলমানরা কিছুই দিতে পারেনি। এগুলো ইসলামি শিল্পকর্মের উৎকর্ষতাকে ছাড়িয়ে গেছে।”

উল্লেখ্য, এই ব্রিটিশরা যখন ভারত দখল করল, তখন তারা তাজমহলের সৌন্দর্য দেখে চিন্তা করল যে, এর সমতুল্য কোনো একটি স্থাপনা তাদের বানিয়ে দেখাতে হবে। মুসলিম নির্মিত একটি স্থাপনা যদি ব্রিটিশদের তুলনায় শ্রেষ্ঠ হয়, তাহলে উপনিবেশ স্থাপনকারী হিসেবে তারা স্থানীয়দের উপর গর্ব করতে পারবে না। তাই তারা তাজমহলকে নকল করে নির্মাণ করে কলকাতার ‘ভিক্টরিয়া মেমোরিয়াল’।

এখানে আমরা দেখতে পাই যে, মুসলমানের শিল্প কীর্তি যতোই বড়ো হোক, অমুসলিমরা কখনোই তার সামনে মাথা নত করে না। লেখক উইলিয়াম ড্যালরিম্পেলের ‘সিটি অফ জ্বিনস’ বইতে রয়েছে, দেশবিভাগের আগে দিল্লীর মুসলমানরা গালিব-আমীর খসরুর কবিতা, অত্যন্ত উচ্চমানের মোগল সংস্কৃতির ধারকবাহক ছিল। সাতচল্লিশে দিল্লির সেই সম্ভ্রান্ত-অভিজাত মুসলমানদের উপর গণহত্যা চালানো হয়, শহরটি দখল করে নেয় হিন্দুরা। সেই সংস্কৃতিও চিরতরে বিদায় নেয়।

অমুসলিমরা তাজমহলকে অস্বীকার করতে পারে, গালিবকে অস্বীকার করতে পারে, মোগল উৎকর্ষতাকে অস্বীকার করতে পারে, আর বাঙালি মুসলমানরা ৪৩টি পতিতালয়ের ব্যবসায়ী রবীন্দ্রকে অস্বীকার করতে পারে না! যেই রবীন্দ্র গোটা বিশ্বে তো বটেই, তার নিজ দেশেও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে, তাকে বাঙালি মুসলমান ছুঁড়ে ফেলতে পারছে না!

এই বাঙালি মুসলমান উন্নতি করবে কিভাবে, যদি এতটুকু সাম্প্রদায়িক পরিপক্কতা তাদের মধ্যে অর্জিত না হয়? আফসোস, কেবলি আফসোস। অথর্ব অছাম্প্রদায়িক বাঙালি মুসলমানদের জন্য কেবলই আফসোস


https://www.prothomalo.com/opinion/editorial/%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A7%8B-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%95%E0%A6%AC%E0%A6%BF-%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%87#bypass-sw

Post a Comment

 
Top