বইমেলা শুরুর প্রারম্ভেই সরকারকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল, তার পরও উগ্র হিন্দু শিতাংশুর বইগুলো এবারের একুশে বইমেলার ‘মুক্তধারা নিউইয়র্ক’ স্টলে (নম্বর ১১১) পাওয়া যাচ্ছে। বইটির নাম ‘জীবনী নয় একটি বই প্রকাশের লক্ষ্য’। বইটির ১ম ও ২য় খণ্ড একইসাথে প্রকাশ করেছে ‘মুক্তধারা নিউইয়র্ক’, যার সত্ত্বাধিকারী জনৈক ‘বিশ্বজিৎ সাহা’।

বইটির দুটি খণ্ড শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুসলিম বিরোধী সাম্প্রদায়িক ঘৃণাসূচক বক্তব্যে ভরপুর। যেমন বইটির ১ম খন্ডে রয়েছে -

১) “দাউদ হায়দার একই সাথে গালি দিয়েছিল কৃষ্ণ ও মুহম্মদকে। মুহম্মদের দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে প্রথমে সে আশ্রয় নেয় কৃষ্ণের দেশে। সেখান থেকে স্থায়ী আস্তানা গড়ে খৃস্টের দেশে।” (পৃষ্ঠা ১৫৩)

২)“বারবার বলেছি, কোনো মুসলিম দেশ বসবাসের যোগ্য নয়। বাংলাদেশে যেহেতু ‘ইসলাম’ জোরদার হচ্ছে, তাই দেশটি প্রতিদিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে।” (পৃষ্ঠা ১৬০)

৩)“এই মানুষগুলোই আবার বাংলাদেশকে দেখতে চান একটি মুসলিম সমাজ হিসেবে, যেখানে তাদের ষোলআনা অধিকার থাকবে, কিন্তু অন্যদের জন্য থাকবে ‘পোষা মুরগির’ অধিকার। ‘আমানত’ শব্দটির সাথে আমরা বেশ পরিচিত। ইসলামী মোল্লারা বলে থাকেন ‘হিন্দুরা হচ্ছে তাদের আমানত’। পোষা মুরগি বলার কারণ হচ্ছে, মুরগিকে সবাই ভালবাসে যতক্ষণ না বাড়িতে অতিথি আসে।” (পৃষ্ঠা ১৪৯)

৪)“মোল্লারা অবশ্য বলেন, ইসলাম কায়েম হলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। জেনে শুনেই তারা মিথ্যা বলেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় কমিউনিজম ব্যর্থ, ইসলামও ব্যর্থ। পৃথিবীতে এখন অর্ধ-শতাধিকেরও বেশি মুসলিম রাষ্ট্র আছে, এর একটিও বসবাসের যোগ্য নয়। (পৃষ্ঠা ১৪৮)

৫) “সত্তরের দশকে জগন্নাথ হলে প্রায় হাজার দুই হিন্দু ছেলে থাকতো, এদের অনেকেই একটি করে মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করতে পারত, কারণ স্বামী হিসেবে হিন্দু ছেলেরা মেয়েদের পছন্দ।” (পৃষ্ঠা ১৩৯)

বলা বাহুল্য, ৯৮ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত দেশে এধরণের তীব্র ইসলাম বিরোধী ঘৃণাসূচক বক্তব্যে পরিপূর্ণ বই অতীতের কোনো বইমেলায় বের করার ধৃষ্টতা কোনো প্রকাশক দেখায়নি। ভারতের হিন্দুরা বেঁচে আছে মুসলিম দেশগুলোতে গিয়ে কাজ করে, মুসলমানদের অর্থে। অথচ শিতাংশু গং বলেছে একটি মুসলিম দেশও নাকি বসবাসযোগ্য নয়!

শেখ সাহেব কর্তৃক বিতাড়িত নাস্তিক দাউদ হায়দারের প্রসঙ্গ টেনে এনে যা বলা হয়েছে, তা সরাসরি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক উনার অবমাননা। ঢাকা ভার্সিটির জগন্নাথ হলের প্রতিটি হিন্দু ছাত্রকে মুসলিম মেয়ে বিয়ে করার জন্য যেভাবে আহবান জানানো হয়েছে, তা কোনো মুসলমানের পক্ষে বরদাশত করা সম্ভব নয়।

অথচ এই শিতাংশু গুহ তার বইতে সরকার বিরোধী চাড়াল সিনহাকে সমর্থন করে বারংবার সরকার দলীয় মন্ত্রীদের কটাক্ষ করেছে,। উদাহরণস্বরূপ বইটির ২য় খণ্ডে রয়েছে-

“বাংলাদেশের মন্ত্রীরা প্রধান বিচারককে অযাচিত পরামর্শ দিচ্ছেন। প্রধান বিচারকের ওপর ওনাদের এত রাগ কেন? কারণ সে হিন্দু? সে আপোষ করছে না? ২০১৬ সালের মার্চে আদালত অবমানননার দায়ে সে দুজন মন্ত্রীকে দণ্ডিত করেছে? (পৃষ্ঠা ১৪০)

এর পরও সরকার এই শিতাংশু গংদের বই তার অধীনে পরিচালিত বইমেলায় বিক্রি হতে দিচ্ছে কেন? সরকার কি হিন্দুদের এতোই দুর্বল যে, হিন্দুরা একগালে জুতার বাড়ি দিলে আরেক গাল পেতে দিতে হবে?

নাকি সরকারের বইমেলায় ইসলামবিদ্বেষী বই ঠেকানোর ঘোষণা পুরোই আইওয়াশ? তার মূল লক্ষ্যই হলো ইসলামবিদ্বেষ ও নাস্তিক্যবাদের প্রচার, যে কারণে নাস্তিকবিরোধী বই মেলায় নিষিদ্ধ করা হয়, ইসলামী প্রকাশনা সংস্থাগুলোকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয় না। ওদিকে সরকারবিরোধী বইও ঠিকই চলতে পারে ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য থাকার কারণে। 

Feibcruariyfo 82inu5,h 2o4et0019

Post a Comment

 
Top