মুহম্মদ আলীকে কেন মুসলমানরা ভালোবাসে? সে সর্বশ্রেষ্ঠ বক্সার এ কারণে? মোটেই নয়। মুহম্মদ আলীকে মুসলমানরা ভালোবেসেছিলো তিনি বক্সিংয়ের উর্ধে উঠতে পেরেছিলেন বলে। ইসলাম ও মানবতার পক্ষ নেয়ার জন্য বক্সিং রিং ও পুরষ্কার ত্যাগ করতে হয়েছে তাকে বহুবার।
কয়েকদিন আগে প্রথম আলোতে মুহম্মদ আলীর নিজের লেখা একটি কলাম প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম ‘আমি আমার ধর্মকে অস্বীকার করি না’। সেই লেখায় তিনি উল্লেখ করেছেন যে, তাকে ইসলাম ত্যাগ করার জন্য কতো চাপ সৃষ্টি করেছিল সাদা চামড়ার খ্রিস্টানরা। একপর্যায়ে দরজা বন্ধ করে ইসলাম ত্যাগ করার জন্য চাপ দিতে থাকে তারা। মুহম্মদ আলীর ভাষায়- “ম্যাকডোনাল্ড একজন দীর্ঘদেহী মানুষ। তার চুল বাদামি রঙের আর মুখ বড় ও লালচে আকৃতির। সে ক্রিসকে বললো দরজা বন্ধ করে দিতে। তারপর আমার দিকে দৃষ্টি মেলে ক্রিসের দেওয়া একটা মোটা সিগার ধরাতে ধরাতে আমাকে বললো, ‘কেসিয়াস, সপ্তাহ খানেক আগে কি তুমি সত্যিই নিউইয়র্কে গিয়ে নিউইয়র্ক ইসলাম জাতির মসজিদে উঠেছিলে? তোমাকে কি প্রকাশ্যে কৃষ্ণাঙ্গ মুসলমানদের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল? তুমি কি সারা দিন সেখানে কাটিয়েছিলে এবং সাংবাদিকদের, যাঁরা তাদের সম্পর্কে তোমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, তখন তুমি কি তাদের পক্ষে (কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম) কথা বলেছিলে?’
‘সবকিছুই সত্যি।’ আমি জবাব দিই।
ম্যাকডোনাল্ড জেরা অব্যাহত রেখে বললো, ‘আমি এ কথাও জানতে পেরেছি, তোমার ক্যাম্পে তোমার উদ্যোক্তার পয়সায় ক্যাপ্টেন স্যামুয়েল ও একজন নিরাপত্তা প্রহরী এবং একজন মুসলমান নারী রাঁধুনি নিয়োগ করেছ, এ সবই কি সত্যি?’
‘হ্যাঁ, সত্যি।’ আমার জবাব।
ম্যাকডোনাল্ডের জেরা—‘প্রথমেই তোমার মুসলিম রাঁধুনিকে বাদ দিতে হবে, বাদ দিতে হবে নিরাপত্তা প্রহরীদের, ক্যাপ্টেন স্যামুয়েল এবং অন্যদের। তারপর আজ রাতেই বেতার ও টেলিভিশনে ঘোষণা করতে হবে যে তোমার সঙ্গে কৃষ্ণাঙ্গ মুসলমানদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমি তোমাকে গণসংযোগের কাজের জন্য লোক দেব। তোমার জীবনটাই মাটি হয়ে যাবে। কিন্তু আমি জানি তুমি কাণ্ডজ্ঞানহীন নও। তুমি সারাটা জীবন ধরে যা চেয়েছ, তা মাটি করে দিতে পার না। এখনো শেষরক্ষার সময় আছে। আমি তোমাকে বলেছি, আমার গণসংযোগ বিভাগের লোক তোমাকে সাহায্য করবে। আজ সন্ধ্যায় তুমি টিভিতে যাও, তুমি বিশ্বকে জানিয়ে দাও যে তুমি কৃষ্ণাঙ্গ মুসলমানদের কেউ নও। কোনো কিছুর সঙ্গে জড়িত না।” (http://goo.gl/eRkNLo)
নাস্তিকেরা দাবি করে থাকে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিধর্মীদের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারটি নাকি বানিয়ে বলা হয়। কিন্তু মুহম্মদ আলীর লেখাই প্রমাণ করে যে, বিধর্মীরা সব সময়েই মুসলমানদের বিরুদ্ধে এলার্ট ও মুসলমানদের ধর্ম নষ্ট করতে উদ্যত। উপরের লেখায় অনেক পাঠকের চোখের সামনে হয়তো সিনেমার ভিলেনের আস্তানায় নির্যাতনের দৃশ্য ফুটে উঠেছে। এতো চাপ সৃষ্টির পরও কিন্তু মুহম্মদ আলী খ্রিস্টানদের কথামতো গণমাধ্যমে ইসলাম ধর্মকে ত্যাগ করার ঘোষণা দেননি, তার সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ বক্সার হওয়ার পরও তিনি ক্যারিয়ার নষ্টের হুমকির পরোয়া করেন নি।
হয়তো অনেকেই বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারবেন না, তাদেরকে বলবো আমাদের দেশের থার্ডক্লাস মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের দিকে তাকাতে, হাভাতে হিন্দু ও নাস্তিকদের দিকে তাকাতে। মুহম্মদ আলীর মতো নিজ ফিল্ডে বিশ্বসেরা হওয়ার যোগ্যতা এদের কারোরই নেই, তার পরও এরা নিজ দেশকে অগ্রাহ্য করে ভারতের পা চাটে। ইসলাম ধর্মকে কটূক্তি করে জার্মানির সাদা চামড়ার প্রভুদের মন পেতে চায়। এ কারণেই ফেসবুকে উগ্র হিন্দু ও নাস্তিকদের আমি বলতে দেখছি, মুসলমানরা কেন মুহম্মদ আলীকে নিয়ে বেশি মাতামাতি করছে? বাঙালি মুসলমান বক্সিংয়ের কি বোঝে?
জার্মানির পাকা পায়খানার লোভে ধর্ম ও দেশকে গালি দেয়া এই শ্রেণীটি আসলে মুহম্মদ আলীর ত্যাগকে উপলব্ধি করার যোগ্যতা রাখে না। তারা বোঝে না যে, মুহম্মদ আলী বক্সিং দিয়ে নয়, বরং বক্সিং ও তার পুরষ্কারের লোভকে ত্যাগ করেই শ্রেষ্ঠত্বের আসন পেয়েছেন। যখন ভিয়েতনাম যুদ্ধ শুরু হলো, তখন আমেরিকা মুহম্মদ আলীকে নির্দেশ দেয় যুদ্ধে যোগ দিতে। কিন্তু মুহম্মদ আলী তাতে রাজি হলেন না ইসলামের শিক্ষার কারণে। আমেরিকা সরকার তখন মুহম্মদ আলীর ক্যারিয়ারের চারটি বছর তাকে নিষিদ্ধ করে রাখে, যখন তার বয়স ২৮ থেকে ৩২ বছর। এই সময়টি যে কোন খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য সময়।
বিপরীতে আমাদের দেশের পাকা পায়খানাবাদীরা আমেরিকা ত্যাগ করার চিন্তাও করতে পারে না। বাংলাদেশের মানুষ তাকে ভালোবেসেছিলো, তিনিও বলেছিলেন, “আমাকে আমেরিকা ত্যাগ করলেও আমার জন্য বাংলাদেশ আছে।” তিনি আরো বলেছিলেন- ‘স্বর্গ দেখতে চাইলে বাংলাদেশে যাও।’ ইসলামের প্রতি ভালোবাসার বদলে মুহম্মদ আলী মুসলমানদের ভালোবাসা পেয়েছেন, বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসার বিনিময়ে মুহম্মদ আলী পেয়েছেন বাংলার মুসলমানদের ভালোবাসা। (http://goo.gl/FH4boF)
হিন্দু ও নাস্তিকদের ভালোবাসা পাওয়ার সিস্টেম অবশ্য ভিন্ন। তাদের ভালোবাসা পেতে হলে চাই মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা। হিন্দুরা তসলিমা নাসরিনকে ভালোবাসে, কারণ সে মুসলমানদের ঘৃণা করে। হিন্দুরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মূর্তি বানিয়ে পূজা দেয়, কারণ সে মুসলমানদের ঘৃণা করে। হিন্দুরা ইসরায়েলকে ভালোবাসে, কারণ সে মুসলমানদের হত্যা করে।
ঘৃণাবাদী ও স্বার্থপর এই হিন্দু ও নাস্তিক শ্রেণী জানে না ভালোবাসা কাকে বলে, আর বুঝবেও না কেন মুসলমানরা মুহম্মদ আলীকে ভালোবাসে। তাদেরকে দুনিয়াতে সবাই ঘৃণা করে, পরকালেও তারা হবে ঘৃণিত। এমনি এমনি তাদেরকে ‘মালউন’ বা ‘অভিশপ্ত’ বলে ডাকা হয় না।

Post a Comment

 
Top