যখন থাবা রাজীব হত্যা হওয়ার পর মানুষের সামনে নাস্তিক ব্লগারদের কর্মকাণ্ড উন্মোচিত হয়েছে এবং হেফাজতে ইসলাম দলটি সৃষ্টি হয়েছে, তখনকার ঘটনা। একাত্তর টিভি, সময় টিভিতে নিয়মিত দলটির নেতাদের বক্তব্য প্রকাশিত হচ্ছে। একদিন দেখলাম, একাত্তর টিভির স্ক্রীনে একদিকে ইমরান এইচ সরকার, অন্যদিকে হেফাজতের কোন এক নেতা। হেফাজতের নেতা উত্তেজিতভাবে ইমরান এইচ সরকারকে বলছে, আপনি নাস্তিক! আপনি নাস্তিক!
উত্তরে ইমরান এইচ সরকার রীতিমতো ভিজা বিড়াল সেজে কাঁচুমাচু হয়ে বলছে, “আপনারা একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তানকে এভাবে নাস্তিক বলছেন!”
বলুন তো পাঠকেরা, এই দৃশ্য দেখে টিভি দর্শকদের মনে কী প্রতিক্রিয়া হবে? তাদের মনে হবে যে, ঐ হেফাজত নেতাটাই বোধহয় উল্টাপাল্টা বকছে, আর ইমরান সরকার বোধহয় ভালো। তখন হেফাজতে ইসলাম নাস্তিকদের বিরুদ্ধে মাঠে নামলেও তাদের হাতে ছিলো না নাস্তিকদের সম্পর্কে কোন তথ্যপ্রমাণ, এমনকি নাস্তিক কারা সেটাও তারা জানতো না। ভীষণ অপরিপক্কতার পরিচয় দিয়ে, উল্টাপাল্টা কাজ ও কথার কারণে সাধারণ মানুষের কাছে তারা ভিলেন হয়ে গিয়েছিল তখন।
সেই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গিয়েছে বর্তমানে। এখন হেফাজতের দায়িত্বশীল মুফতি সাখাওয়াত ধীরে-সুস্থে প্রত্যেকটি যুক্তি খণ্ডন করেন, উইকিপিডিয়া থেকে রেফারেন্স দেন, আর ফারজানা রূপা ও তার নাস্তিক্যবাদী সাঙ্গপাঙ্গরা অন্ধ আক্রোশে ক্যামেরার সামনেই হাত-পা ছুঁড়তে থাকে। আমরাও তা দেখে পুলকিত হই।
এখন ইসলামী দলগুলোই সবচেয়ে বেশি ম্যাচিউরিটি ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিচ্ছে, যার পরিচয় প্রতিবন্ধী মন্ত্রী মাল মুহিতের বাজেট বক্তৃতার জবাবে ওলামালীগের প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি। ‘এবারের বাজেটে নগ্নভাবে হিন্দুদেরকে বিশেষ তোষণ করা হয়েছে’ দাবি করে ওলামী লীগের বিবৃতিতে বলা হয়, এটি বাহাত্তরের সংবিধানের মূল চেতনা ধর্মনিরপেক্ষতার খেলাপ। যার দ্বারা মুসলমানদের ধর্মীয়ভাবে বিশেষ বৈষম্য করা হলো। (http://goo.gl/urdkZt)
‘কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা’ কিংবা ‘মাছের তেলে মাছ ভাজা’ যা-ই বলেন না কেন, ওলামা লীগ সেরকমই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে তাদের বক্তব্যে। বাজেট বাহাত্তরের সংবিধান বিরোধী, এই বক্তব্য দিয়ে নাস্তিক ও হিন্দুদেরকে তাদের জালেই আটকে ফেলা হলো। সত্যিই তাদের বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করতে হয়। আপনারা যে যা-ই বলুন না কেন, ওলামা লীগই বাংলাদেশের রাজনীতিতে হিন্দুদের সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম বলতে পেরেছে। হিন্দুয়ানী শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে বলতে পেরেছে। অন্যান্য দলগুলো কিন্তু এসব ইস্যুতে মাঠে নেমেছে ওলামা লীগের পরে।
এখানে কাউকে ছোট করা হচ্ছে না। কারণ আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত, নেক কাজে প্রতিযোগিতা করা, যা কিনা ছাহাবায়ে কিরামগণ পরস্পর করতেন। ওলামা লীগ যদি একটি বলে, হেফাজতের প্রতিযোগিতা করে আরো দশটি বলা উচিত। আচ্ছা আপনার কি খেয়াল করছেন, সরকার এখন দিশেহারা হয়ে আমাদের ইসলামিস্টদের হাতে কতগুলো মোক্ষম অস্ত্র তুলে দিচ্ছে? বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের যে বক্তব্য, সেটা কিন্তু হিন্দুতোষণের সরকারি স্বীকৃতি স্বরূপ। সে বলেছে-
“ দলীয়ভাবে আমরা ধর্মনিরপেক্ষ যেমন, কিংবা সরকারের দিকে যদি তাকান দেখবেন সেখানে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। চাকরী বলুন কিংবা অন্যান্য জায়গাতেই বলুন, সব জায়গাতেই।” (http://goo.gl/npcCiP)
এখন আওয়ামী লীগ হিন্দুতোষণ করে আমরা জানি, কিন্তু সরাসরি স্বীকারোক্তি কখনোই তাদের থেকে পাওয়া যায়নি। সরকার যতোটুকু থাকা দরকার তারচেয়ে শুধু বেশি নয়, অনেক বেশি হিন্দু নিয়োগ দেয়, এইচ টি ইমামের এই স্বীকারোক্তি হতে পারে ইসলামপন্থীদের নিকট সবচেয়ে বড় অস্ত্র। দেখা যাক, এই ইস্যুটি নিয়ে মাঠে নামার প্রতিযোগিতায় কারা ফার্স্ট হতে পারে? হেফাজত, নাকি ওলামা লীগ?

Post a Comment

 
Top