‘ভেজিটেরিয়ানিজম’ নিয়ে অনেকের মধ্যেই আমি আগ্রহ লক্ষ্য করেছি। হিন্দুধর্মের সাথে সম্পর্কিত এই অভ্যাসটির প্রশংসা করতে গিয়ে অনেকেই না বুঝে হিন্দুদের প্রশংসা করা শুরু করে দেয়। অনেকেই মূর্খতাবশত ধারণা করে থাকে, নিরামিষভোজী হিন্দুরা বোধহয় খুব উদার প্রকৃতির হয়ে থাকে।
তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, ভারতের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাপ্রবণ অঞ্চলগুলোর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, ঐসব এলাকাগুলো হলো নিরামিষাশী হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। যেমন উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, মহারাষ্ট্র ইত্যাদি। গুজরাটের প্রধান খাদ্য হলো রাজমা ও ধোকলা, যেগুলো হলো ভেজিটেরিয়ান খাবার। গুজরাটের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেও একজন ভেজিটেরিয়ান।
শিবসেনার ঘাঁটি যে মহারাষ্ট্র এলাকায়, সেটি একটি ভেজিটেরিয়ান এলাকা। মোদির ডানহাত উত্তরপ্রদেশের অমিত শাহও ভেজিটেরিয়ান। উত্তরপ্রদেশ এলাকার হিন্দুরা কট্টর ভেজিটেরিয়ান হওয়ার কারণে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে থাকে, কারণ পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা মাছ-পাঁঠার গোশত এসব খেয়ে থাকে। দেশবিভাগের পর ভারতবর্ষের সবচেয়ে বেশি দাঙ্গা হয়েছে উত্তরপ্রদেশে, আর সবচেয়ে কম দাঙ্গা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালায়।
মুসলমানরা আসলে বোঝেই না যে, হিন্দুদের মুসলিমবিদ্বেষের মূল উৎসমুখই হলো তাদের ভেজিটেরিয়ানিজম। ব্রিটিশ আমলের বাংলা সাহিত্যে মুসলমানদের বারবার ‘পেঁয়াজখোর’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছে, কারণ নিরামিষাশী হিন্দুরা পেঁয়াজ খায় না। একজন হিন্দু যখন ভেজিটেরিয়ান হয়, তখন তার চিন্তাভাবনার জগতে এই বিষয়টি কাজ করে যে, “আমি গোশত খাই না, কিন্তু মুসলমানরা গোশত খায়। আমি পেঁয়াজ খাই না, কিন্তু মুসলমান তা খায়।”
এই পার্থক্যবোধ থেকেই সৃষ্টি হয় সাম্প্রদায়িক মানসিকতা। যে কারণে নন-ভেজ হিন্দুর তুলনায় ভেজিটেরিয়ান হিন্দুর মুসলিমবিদ্বেষ অনেক অনেক বেশি। ফেসবুকে যে সমস্ত হিন্দু পেজ ইসলামবিরোধী লেখালেখি করে থাকে, যেমন Jago Hindu - জাগো হিন্দুAmi Hindu (আমি হিন্দু ) এরা সকলেই ইসকনের মতাদর্শে বিশ্বাসী। ফেসবুকে যে সমস্ত হিন্দু ইসলামবিরোধী লেখালেখি করে থাকে, তাদের লেখা পর্যবেক্ষণ করলেও বোঝা যায় যে তারা সবাই ইসকনী মতাদর্শে বিশ্বাসী। আর ইসকন সম্পর্কে সকলেই জানে, এরা হলো ভেজিটেরিয়ান। ইসকনীরা এমনই কট্টর ভেজিটেরিয়ান যে, মুসলমানদের তো দূরে নন-ভেজ হিন্দুদের রান্নাও এরা খায় না, এমনকি নিজেদের মায়ের হাতের রান্নাও নয়।
ইসকনীরা যার অনুসরণ করে থাকে, সে হলো নদীয়ার চৈতন্য। এই চৈতন্য পেঁয়াজ না খাওয়া, গোশত না খাওয়া হিন্দুধর্মের উদ্ভাবক, যাকে বৈষ্ণবধর্ম বলা হয়। এই চৈতন্য সারাদিন নাচগান করতো, যেভাবে ইসকনীরা সারাদিন ঢাকঢোল পিটিয়ে করে থাকে। এদের নাচগানের বহর দেখে এদেরকে উদার মনে করাটা ভুল, বরং এরা নৃত্যরত হিংস্র হনুমান। চৈতন্যের নাচগান বন্ধ করার আদেশ দেয়ায় সে মুসলিম কাজীর বাড়ি আক্রমণ করেছিল, এবং বলেছিল-”নির্যবন করো আজি সকল ভুবন।”[বাংলা দেশের ইতিহাস(মধ্য যুগ),পঞ্চম সংস্করণ, পৃষ্ঠা ২৬২]
অর্থাৎ ভেজিটেরিয়ান হিন্দুদের মূল ব্যক্তি চৈতন্যর মূল বক্তব্যই ছিলো, বিশ্বকে মুসলিমমুক্ত করতে হবে এবং এটাই সমস্ত ইসকনীদের মূলমন্ত্র। ভেজিটেরিয়ান হলেই যে সে দয়ালু হবে, এই ধারণা ভুল। বরং ভেজিটেরিয়ানদের উগ্র হওয়ার সম্ভবনাই বেশি, কারণ সে মানুষের স্বাভাবিক প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হলো গোশত খেয়ে স্বাদ লাভ করা, যেটাকে ভেজিটেরিয়ান ঘৃণাভরে অগ্রাহ্য করে। এই অস্বাভাবিক চিন্তাভাবনাই তাকে হিংস্র বানিয়ে তোলে।
কয়েকদিন আগে থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ মন্দিরের ফ্রিজে ৪০টি বাঘের বাচ্চার মৃতদেহ পাওয়ার খবর সকলেই শুনেছেন। চরম হিংস্রতা প্রদর্শনকারী থাইল্যান্ডের ঐসব বৌদ্ধ ভিক্ষুরা কিন্তু ভেজিটেরিয়ান। (http://goo.gl/oCz1vQ) বার্মার বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কথা তো বলাই বাহুল্য! লাখ লাখ মানুষের হত্যাকারী হিটলারও একজন ভেজিটেরিয়ান ছিলো। নরেন্দ্র মোদির আমলে গুজরাটের পাঠ্যপুস্তকে হিটলারের প্রশংসা উল্লেখ করা ছিলো, কারণ হিটলারের আরিয়ান জাতির একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েমের ইচ্ছা, স্বস্তিকা চিহ্নের ব্যবহার এসব হিন্দুদের ফ্যাসিবাদী চিন্তার সাথে মিলে যায়। হিটলারের ন্যায় সমস্ত ভেজিটেরিয়ান হিন্দুরাও চায় একনায়কত্ব কায়েম করতে এবং এমন একটি ভারতবর্ষ প্রতিষ্ঠা করতে, যেখানে কোন মুসলমান থাকবে না।

Post a Comment

 
Top