আজকের দিনটিই হলো আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭ তম জন্মবার্ষিকী। জাতীয় কবি হিসেবে নজরুল আমাদের হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তা নির্বাক হয়ে যাওয়ার পর। নজরুলের কবিজীবনের ফসল ঘরে তুলেছে হিন্দুরা, মুসলমানরা নয়। নজরুল মুসলমানদের হতে পারতেন, কিন্তু শত্রু না চেনার কারণে মুসলমানরা তাকে আপন করে পেলো না।
নজরুলের সাথে প্রথমে বিয়ে হয়েছিল সৈয়দা নার্গিসের। নার্গিসের মামা আলী আকবর খান ছিলেন নজরুলের যৌবনকালের বন্ধু। আলী আকবর খান চাইতেন, তার পরিবারের কোন মেয়ের সাথে এই ডানপিটে নজরুলের বিয়ে দিয়ে তাকে সংসারী করতে। নজরুলকে তিনি নিয়ে যান কুমিল্লার দৌলতপুর গ্রামে। সেখানে নজরুলের একটি অনুষ্ঠানে ভালো লেগে যায় আলী আকবর খানের ভাগ্নী নার্গিসকে। (আরো জানতে: http://goo.gl/gPBabX)
নার্গিসকে বিয়ে করার জন্য নজরুল আলী আকবর খানকে তাড়া দিতে থাকে। অবশেষে ১৯২১ সালের ১৭ই জুন জুমুয়াবার রাতে বিয়ের তারিখ ধার্য হয়। বিয়ে উপলক্ষে সাত দিন আগে থেকেই খাঁ বাড়িতে শুরু হয়েছিল উৎসব। বিয়েতে এসেছিল আলী আকবরের আত্মীয়স্বজন, আর এসেছিল কুমিল্লা থেকে আলী আকবরের ‘বন্ধু’ বীরেন্দ্রকুমার সেনগুপ্ত ও তার মা বিরজাসুন্দরী দেবীসহ পুরো সেনগুপ্ত পরিবার।
এই বীরেন্দ্রকুমার সেনগুপ্ত ছিলো আলী আকবর খানের স্কুলবন্ধু। নজরুলের জীবনীকার কমরেড মুজফফরের ভাষায়- “আলী আকবর খান কুমিল্লা জিলা স্কুলে বীরেন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের সহপাঠী ছিলেন। এই সূত্রে তিনি বীরেন্দ্রকুমার সেনের সঙ্গে তাদের বাসায় যাতায়াত করার ভিতর দিয়ে বীরেন্দ্রকুমারের মাতা বিরজাসুন্দরী দেবীর স্নেহের পাত্র হয়ে উঠেন। বীরেন্দ্রকুমারের সঙ্গে আলী আকবরও তাকে ‘মা’ ডাকতে থাকেন।” (তথ্যসূত্র: কাজী নজরুল ইসলাম: স্মৃতিকথা, ন্যাশনাল বুক এজেন্সী প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, পৃষ্ঠা ৬০)
বীরেন্দ্রকুমারের মাতা বিরজাসুন্দরীকে ‘মা’ ডাকতেন আলী আকবর। সেই ‘মা’ই নার্গিসের বিয়ে ভাঙতে কলকাঠি নাড়তে থাকে, অতিথির বেশে এসে বর নজরুলের সাথে মিশে বিষিয়ে তুলতে থাকে তার মন। নজরুলও ছিলেন খামখেয়ালী, তিনিও কুমিল্লার এই অপরিচিত হিন্দু পরিবারের কথায় নেচে আলী আকবরের সাথে দ্বন্দ্বে মেতে উঠেন।
ওদিকে বিয়ে কিন্তু হয়ে গিয়েছে। অপরিচিত বীরেন্দ্রকুমারের সাথে নজরুল বিয়ের রাতেই আলী আকবরের বাড়ি ত্যাগ করার জন্য তৈরী হয়। আলী আকবর যাকে ‘মা’ ডাকতো, সেই বিরজাসুন্দরী ওরফে বিরজা ডাইনী নজরুলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে-
“তুমি বাইরের লোক। পথঘাট চেন না, এই রাত্রে একলা যাবে কি করে? যাবেই যদি তবে বীরেনকে নিয়ে যাও। সে তবু কুমিল্লায় জন্মেছে আর কুমিল্লায় মানুষ হয়েছে, এ দেশের লোকজনকে চেনে।” (সূত্র: কাজী নজরুল ইসলাম: স্মৃতিকথা, পৃষ্ঠা ৬৭)
আষাঢ় মাসের বৃষ্টিতে ভিজে বীরেন্দ্রকুমারের বাড়িতে গিয়ে নজরুল অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখনই নজরুলের ‘সেবা’র নামে নজরুলের নিকট পাঠিয়ে দেয়া হলো সেনগুপ্ত পরিবারের মেয়ে আশালতা সেনগুপ্তা ওরফে প্রমীলাকে। নজরুল এবার পুরোপুরি হিন্দুদের কব্জায়। আস্তে আস্তে প্রমীলার প্রতি নজরুলকে আকৃষ্ট করা হয়, যার ফলশ্রুতিতে একপর্যায়ে প্রমীলাকে বিয়ে করে নজরুল। এভাবেই নজরুলকে নার্গিসের থেকে কেড়ে নিয়ে হিন্দু মেয়ের আঁচলে গছিয়ে দেয়া হলো, তথা মুসলমান সমাজের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে হিন্দুসমাজের অন্তর্ভূক্ত করা হলো।
আমরা প্রায়ই দেখি, নজরুলের বিভিন্ন বক্তব্য নাস্তিকেরা তাদের পক্ষে ব্যবহার করে থাকে। এই বক্তব্যগুলো নজরুলের দেয়ার কথা ছিলো না, কিন্তু হিন্দুদের সাথে মিশে থাকার কারণে আপসেআপ তার মুখ থেকে ঐসব বক্তব্য তারা বের করে নিতো। আমাদের সমাজের দিকে তাকালেও দেখবো, হিন্দুদের সাথে যারা ওঠাবসা করে তাদের মধ্যেও নাস্তিকতার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এটাই স্বাভাবিক, কারণ আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক করেছেন- “তারা চায় মুসলমানরা ঈমান আনার পর তাদেরকে কাফির বানিয়ে দিতে”।
মুসলমানদের সাথের হিন্দুটি বছরের পর বছর তার বগলে ইট বয়ে নিয়ে বেড়ায়, এতটুকু ধৈর্য্য হারায় না। সে অপেক্ষা করে তার সুযোগের। আলী আকবরের বাল্যকালের বন্ধু বীরেন্দ্রনাথের সুযোগ এসেছিলো তারই ভাগ্নীর বিয়েতে। সেই সুযোগেরই সে যথাযথ ব্যবহার করেছে। এখানে নজরুলকে এককভাবে দোষ দেয়ার কিছু নেই। দোষ আমাদের সমাজের, কারণ আমাদের সমাজে হিন্দুদের সাথে প্রীতির সম্পর্ক রাখার উপদেশ দেয়া হয়। আলী আকবর খান যদি বীরেন্দ্রকুমারদের সাথে অতিরিক্ত নৈকট্য না রাখতো, তাহলে তার ভাগ্নীর বিয়ে তারা ভাঙতে পারতো না।
হিন্দুদের সাথে অতিরিক্ত মাখামাখির ফলশ্রুতিতেই মুসলমানরা ব্রিটিশদের হাতে তাদের রাজত্ব হারিয়েছিলো, জমিদারী হারিয়েছিলো, এমনকি হারিয়েছিল নজরুলের মতো প্রতিভাকেও। নজরুলকে কেড়ে নেয়াটা কিন্তু সেনগুপ্ত পরিবারের একক ষড়যন্ত্র ছিলো না, এটি ছিলো হিন্দুদের জাতিগত এজেন্ডা। নজরুলের সাথে নার্গিসের বিয়ে হলে নজরুলের প্রতিভার ফসল মুসলমানরা ঘরে তূলবে, এটিই হিন্দুরা হতে দিতে চায়নি। আর মুসলমানরাও তাদের প্রতিভাকে ধরে রাখতে পারেনি, কারণ তারা তাদের শত্রু হিন্দু মুশরিকদেরকে চিনতে শেখেনি। বছরের পর বছর ‘মা’ ডেকেও কী বিরজা ডাইনীকে আপন করতে পেরেছিলো আলী আকবর?
পারবেও না, কারণ শত আবেগ দিয়েও কুরআন শরীফের বক্তব্যের কখনো হেরফের হবে না। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক করেছেন-
“তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে প্রথমত ইহুদীদের, অতঃপর মুশরিকদের।” (সূরা মায়িদা, আয়াত শরীফ ৮২)

Post a Comment

 
Top