বর্তমান অবস্থা দেখে ‘বঙ্গভঙ্গ’ এর আমলের কথা বারবার মনে পড়ে। কলকাতা তখন ছিল গোটা ভারতবর্ষের রাজধানী, বাংলাভাষী হিন্দুদের হাতে তখন সর্বময় ক্ষমতা তুলে দিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার। ১৯০৬ সালে যখন ‘বঙ্গভঙ্গ’ প্রস্তাব গৃহীত হয়, তখন কলকাতার হিন্দুরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এই কারণে যে, তাতে মুসলমানদের সুবিধা দেয়া হয়েছে। ব্রিটিশরা যে কলকাতার হিন্দুদের এতো সুবিধা দিয়েছিল, তা ম্লান হয়ে গিয়েছিল মুসলমানদের সামান্য স্বায়ত্ত্বশাসন লাভের কারণে।

কলকাতাভিত্তিক হিন্দুরা তখন শুরু করে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন। শহর ও মফস্বলের হিন্দুরা ঘরে ঘরে বন্দুক-পিস্তল জমা করা শুরু করে প্রতিবেশী মুসলমানদের গুলি করে মারার জন্য। ব্রিটিশদের মূল ব্যবসা তখন ছিল কাপড়ের ব্যবসা, তাই হিন্দুরা ব্রিটিশদের কাপড়ের গুদাম ও গাড়িগুলোকে টার্গেট করে আগুন দেয়া শুরু করল।

বর্তমান আমরা দেখি যে, হিন্দুরা একতরফা ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করে, মুসলমানদের গালিগালাজ করে। মুসলমানরা কিন্তু এর বিপরীতে চুপ করে থাকে, হিন্দুদের বিপরীতে ফেসবুকে একটা বাক্য লিখতেও মুসলমানদের ‘অছাম্প্রদায়িক’ চেতনা বাধা দিয়ে থাকে। যে কারণে বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে হিন্দুদের চাওয়াটাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়, যেহেতু না কাঁদলে মা-ও দুধ দেয় না। সে যা-ই হোক, তখনও মুসলমানদের ছিল একই অবস্থা। হিন্দুদের বোমা-পিস্তলের সামনে তারা সেরকম কোন প্রতিরোধই গড়ে তোলেনি।

তাই শেষমেষ হিন্দুদের চাওয়া অনুযায়ী ব্রিটিশরা বঙ্গভঙ্গ রদ করল। কিন্তু ব্রিটিশরা আর যা-ই হোক, মুসলমানদের মতো তুনুপুনু অছাম্প্রদায়িক জাতি নয়। তারা তাই শাস্তিস্বরূপ বাংলাভাষী হিন্দুদের কলকাতা থেকে রাজধানীর তকমা কেড়ে নিল। ফলে বাংলাভাষী হিন্দুরা সেইসব হিন্দিভাষীদের গোলাম হয়ে পড়ল, যাদেরকে তারা একটা ‘খোট্টা’ বলে অবজ্ঞা করত।

নীরদ সি চৌধুরী এই অবস্থাকে উল্লেখ করেছে ‘আত্মঘাতী বাঙালী’ নামে। তবে সেই আত্মঘাতী হওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে কোন হাহাকার কাজ করেনি, বরং খুশি কাজ করেছিল এই ভেবে যে, মুসলমানদের অধিকার তো কেড়ে নেয়া গিয়েছে! মুসলমানের গলা দিয়ে একটা দানা নামলেও হিন্দুর মনে যে কষ্টের সৃষ্টি হয়, তা তাকে তিনবেলা শেরাটনে বুফেতে খাওয়ালেও মিটবে না।

সম্প্রতি জনকণ্ঠের স্বদেশ রায় এসকে সিনহা ইস্যুতে যেভাবে লিখেছে, তাতে মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ হিন্দুদের জন্য সোনার ডিমপাড়া হাঁস ছাড়া কিছু নয়। তার ভাষায়-

//অকৃতজ্ঞতার একটা সীমা থাকা উচিত। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য যা করে তা এ দেশের অন্য কোন অতি প্রগতিশীল পার্টিও করে না। এমনকি অন্য কোন দেশের প্রগতিশীল পার্টিরাও সে দেশের সংখ্যালঘিষ্ঠ কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য করে না। ভারতে কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকলে মুসলিমদের জন্য দরদ দেখায় কিন্তু সংখ্যা অনুপাতে ক’জন মুসলিম সেখানে সরকারী চাকরিতে বড় পদে থাকে?// (https://goo.gl/L8ccSh)

তাই স্বদেশ রায় আকুল আবেদন জানিয়েছে, প্লিজ হিন্দুরা, তোমরা এই সোনার ডিমপাড়া হাঁসটিকে কেটো না। কিন্তু স্বদেশ রায়ের আবেদন বৃথা, কারণ বঙ্গভঙ্গের সময়ে হিন্দুরা ব্রিটিশদের দাক্ষিণ্যে পাওয়া কলকাতার রাজধানীর সম্মানকে তুচ্ছ করে মুসলমানদের ক্ষতি করাটাকেই বড় করে দেখেছিল। ঠিক সেভাবেই আওয়ামী লীগ যতোই হিন্দুদেরকে বড় বড় চাকরি দিক না কেন, দিনশেষে বাড়ি ফিরে তারা মুসলমানের সম্পত্তি নিয়ে হিংসায় গুমরে মরবে। গর্দানে একবার চর্বি জমলে দাক্ষিণ্যের মূল্য হিন্দুরা দেয় না, নিচুজাতের হিন্দুটি তখন ভুলে যায় যে কোন গর্ত থেকে তাকে তুলে আনা হয়েছে। খবরে প্রকাশ, “হাসিনার 'দাক্ষিণ্যের' সম্মান রক্ষায় ব্যর্থ প্রধান বিচারক: হিন্দু ট্রাস্ট” (www.poriborton.com/national/68713)

আওয়ামী লীগের সামনে এখন বাঁচার একটিই উপায়, আর তা হলো ব্রিটিশরা যেভাবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কলকাতার রাজধানীর মর্যাদা খর্ব করে বাংলাভাষী হিন্দুকে হিন্দিভাষীদের অধীন করেছিল, ঠিক সেভাবেই আওয়ামী লীগকেও হিন্দুতোষণ বাদ দিয়ে, হিন্দুদের বড় বড় পদ দেয়ার খাসলত বাদ দিয়ে হিন্দুদেরকে ফের মুসলমানদের অধীনস্থ করতে হবে। তা না হলে নমশূদ্র হিন্দুর ছুরিতে তার পেট চেরা হবে অচিরেই।  হিন্দুতোষণের আগুনে নিজেকে বিসর্জন দিয়ে আওয়ামী লীগ মমতাজ-শাহজাহানের প্রেমকাহিনীকেও হারিয়ে দেবে কিনা, সেটা সময়ই বলে দেবে।

Post a Comment

 
Top