আসলে এই ‘ঠুনকোতা’ বা স্পর্শকাতরতা কোন লজ্জার বিষয় নয়, বরং এর দ্বারাই নির্দেশিত হয় দ্বীন ইসলাম কতোটা মূল্যবান। বাজারের দাড়িপাল্লার স্পর্শকাতরতা ১০-২০ গ্রামের বেশি নয়। অর্থাৎ আপনি ১ কেজি মাছ কিনলে তা ২০ গ্রাম কম হতে পারে, বেশিও হতে পারে। কিন্তু এমনও দাড়িপাল্লা আছে, যা কিনা ১ গ্রামের ১ হাজার ভাগের একভাগের হেরফেরও ধরে ফেলতে পারে। সেসব দাড়িপাল্লার দামও অনেক অনেক বেশি।

স্পর্শকাতরতা যতো বেশি, মূল্যও ততো বেশি হয়ে থাকে। সার-কীটনাশক ছাড়া যে আগাছা আপনাআপনি জন্মে থাকে, তার কোন মূল্য নেই। কিন্তু যেই ধানগাছ অত্যন্ত স্পর্শকাতর, যার জন্য কীটনাশক ও সার লাগে, তা কিন্তু মূল্যবান। অ্যাকুরিয়ামের যেই মাছটি অক্সিজেনের সামান্য হেরফের হলে মারা যায়, তা কিন্তু অনেক মূল্যবান। ড্রেনে জন্মানো গু খাওয়া ঘাওড়া মাছকে কিন্তু কেউ মূল্য দেয় না।

হ্যাঁ ইসলাম এতোটাই স্পর্শকাতর, যে তিনবার তালাক বললে বিয়ে ভেঙে যাবে। শুধু তালাক বলা নয়, স্বামী বা স্ত্রী কুফরী করলেও কিন্তু বিয়ে ভেঙে যায়। যেমন বিষাদসিন্ধুর লেখক সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন ‘গোজীবন’ নামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিল মুসলমানদের গরু কুরবানিতে নিরুৎসাহিত করে। সেই প্রবন্ধ লেখার দায়ে তার বিরুদ্ধে মুরতাদ হওয়ার এবং স্ত্রী তালাক হওয়ার ফতোয়া জারি হয়েছিল।

এজন্য ফুরফুরা শরীফের পীর হযরত আবু বকর ছিদ্দীকী রহমতুল্লাহি আলাইহি কোন মজলিসের সফর থেকে বাড়িতে ফিরলে নিজের বিয়ে দোহরিয়ে নিতেন। কারণ যাত্রাপথে অনেক আপত্তিকর বিষয় আলোচনা হতে পারে, যা কিনা ঈমানের জন্য ক্ষতিকর। আর ঈমানের সাথেই সম্পর্কযুক্ত হলো বৈবাহিক সম্পর্কের বৈধতা। ঈমান যদি চলে যায়, তালাক আপনা-আপনি হয়ে যাবে।

ভারতীয় মুসলমানরা তাদের ফেসবুক পোস্টগুলোতে তিন তালাকের বিষয়টিকে অস্বীকার করতে চাইছে। তারা বলতে চাইছে যে, তিন তালাক ইসলামে নেই, ইসলাম এতো ঠুনকো নয়। মোদি সরকার এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করলেই হলো।

আসলে এই ভারতীয় মুসলমানদের তো কোন অনুভূতি নেই, কোন স্পর্শকাতরতা নেই, কোন মূল্য নেই, তাই তাদের পক্ষে দ্বীন ইসলামের স্পর্শকাতরতা অনুধাবন করা সম্ভব নয়। ১৯৮৪ সালের স্বর্ণমন্দির এলাকায় ৫০০০ শিখ মেরে ফেলার প্রতিবাদে সাংবাদিক খুশবন্ত সিং যখন ‘পদ্মভূষণ’ খেতাব বর্জন করেছিল, তখন মন্দির এলাকায় কর্তব্যরত ‘মুসলমান’ পুলিশ অফিসার আসাদ ফারুকী তাকে বলেছিল, “আরে এটা তো সামান্য বিষয়, এই পরিমাণ মুসলমান তো প্রতি বছরই ভারতে মেরে ফেলা হয়।”

এই অনুভূতিহীনতা ও আপোষকামী পাপোষ হওয়ার কারণেই ভারতীয় মুসলমানরা এতো এতো মার খায়। ইউরোপ-আমেরিকায় ইহুদীদের বিরুদ্ধে পান থেকে চুন খসানো যায় না, সাথে সাথে একঘরে করে ফেলা হয়। মহারাষ্ট্রে ডাকাত শিবাজীর জন্মদিন কেন বছরে দুইদিন পালন করা হয়, শুধুমাত্র এই প্রশ্ন করার কারণে অন্য রাজ্যের এক প্রফেসরকে গণপিটুনির শিকার হতে হয়েছে। একারণে তাদেরকে সারা দুনিয়া সমীহের চোখে দেখে।

কিন্তু মুসলমানদের বিরুদ্ধে যা খুশি তা-ই বলে গেলেও তারা এতটুকু প্রতিবাদ করে না। যেই দেশের মুসলমানরা প্রতিবছর হাজার হাজার মুসলমান হত্যার পরও নির্লিপ্ত থাকে, তাদের মনে তিন তালাক নিয়ে সন্দেহ উঠাটাই স্বাভাবিক। ভারতীয় মুসলমানরা ভোঁতা অছাম্প্রদায়িক জনগোষ্ঠী, তাই তিন তালাকের স্পর্শকাতরতা কিংবা ইসলামী শরীয়তের সূক্ষ্মতা, কোনটাই বোঝার মতো সামর্থ্য তাদের নেই।
----
ব্যাকাপ পেজ: https://web.facebook.com/dastaar.rajdarbaar/
সারাহাহ: dastaar.sarahah.com

Post a Comment

 
Top