আজকে জন্ম-নষ্টামীতে প্রধানমন্ত্রী তার হিন্দুধর্মে কনভার্ট হওয়ার প্রমাণ আবারও দিয়েছেন। তিনি কৃষ্ণের আদর্শে সবাইকে দীক্ষিত হতে আহবান জানিয়েছেন। “কৃষ্ণের আদর্শ ও শিক্ষা বাঙালির হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সোহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করবে বলে বাণীতে তিনি প্রত্যাশা ব্যাক্ত করেন।” (https://goo.gl/NYdeu7)

প্রধানমন্ত্রীর মূর্খতা দেখে সত্যিই হাসি পায়। কারণ যেই কৃষ্ণভক্তরা শত শত বছর ধরে মুসলিমবিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতার চূড়ান্ত নজির স্থাপন করেছে ভারতবর্ষের ইতিহাসে, সেই কৃষ্ণের আদর্শকেই কিনা এই কনভার্টেড নমশূদ্র প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থাপনে কাজে লাগাতে চায়! উল্লেখ্য, এই কৃষ্ণের প্রসঙ্গ আসলেই সর্বপ্রথম চৈতন্যের প্রসঙ্গ এসে যায়, কারণ এই চৈতন্যই সর্বপ্রথম হরেকৃষ্ণ কীর্তনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন শুরু করেছিল। নদীয়ার কাজীর বাড়ি আক্রমণ করে এই চৈতন্য ঘোষণা দিয়েছিল-

“নির্যবন করো আজি সকল ভূবন“ [বাংলা দেশের ইতিহাস(মধ্য যুগ),পঞ্চম সংস্করণ, পৃষ্ঠা ২৬২].

অর্থাৎ শুধু কাজীকে নয়, বিশ্বের সমস্ত মুসলমানকেই হত্যা করার আহবান জানিয়েছিল এই কৃষ্ণভক্ত চৈতন্য। উল্লেখ্য, ‘বৈষ্ণব’ বা কৃষ্ণের পূজারী যারা, তারা সবাই হচ্ছে চৈতন্যের অনুসারী। শুধু তাই-ই নয়, পুরো বিশ্বকে মুসলিম মুক্ত করার ঘোষণা দেয়া চৈতন্যকে সাক্ষাৎ ‘কৃষ্ণের অবতার’ বলেই সমস্ত বৈষ্ণবরা বিশ্বাস করে থাকে।

অর্থাৎ হিন্দুদের ‘কৃষ্ণ’ দেবতাটি যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক নয়, বরং মুসলিম নিধনের প্রতীক, মুসলিম বিদ্বেষের প্রতীক; তা শিক্ষিত পাঠকের বোঝার জন্য উপরের উদাহরণটিই যথেষ্ট। ব্রিটিশ আমলে হিন্দু লেখকদের লেখা বইগুলোতে বারবার ঘুরেফিরে মুসলমানদের ‘প্যাঁজখোর’ বা ‘পেঁয়াজখেকো’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছে। যেমন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত লিখেছিল-

“প্যাঁজখোর যারা তারা আহারে সন্তোষ
লোম ফুঁড়ে গন্ধ ছুটে এই বড় দোষ।”

বস্তুত হিন্দু কবিয়ালরা তাদের সাম্প্রদায়িক রুচিহীন কবিতাগুলোতে মুসলমানদের যতোবার না ‘যবন’ বলে সম্বোধন করেছে, তার চেয়ে অনেক বেশিবার পেঁয়াজ খাওয়া কিংবা মুরগির গোশত খাওয়া নিয়ে কটাক্ষ করেছে। যেন পিঁয়াজ কিংবা আমিষ খাওয়াটা খুব খারাপ একটা জিনিস! এর উৎপত্তি হয়েছে বৈষ্ণব ধর্ম থেকে, যার একটি মূল নিয়ম হচ্ছে পেঁয়াজ কিংবা যে কোন প্রকারের আমিষ খাওয়া যাবে না।

শুধু কি পেঁয়াজ বা আমিষভোজন? গরু নিয়ে হিন্দুদের মধ্যে সম্প্রতি যে উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে, তারও উৎপত্তি হয়েছে এই ‘কৃষ্ণের আদর্শ’ থেকেই। কারণ অন্যান্য দেবদেবীর ন্যায় কৃষ্ণেরও একটি বাহন রয়েছে, আর তা হচ্ছে গিয়ে গরু। হয়তো অনেকেই জানে না যে, ভারতে গো-রক্ষক তথা গরু নিয়ে মুসলমানদের পিটিয়ে মারে যেসব সংগঠনগুলো, সেগুলো মূলত ‘ঘোষ’ বা ‘যাদব’ সম্প্রদায়ের সংগঠন। এই যাদব সম্প্রদায়টি নিজেদেরকে জাতিগতভাবে কৃষ্ণের সেবক ও ভক্ত বলে দাবি করে থাকে। কারণ কৃষ্ণ যেসব গোপীদের কাছ থেকে যৌনসেবা নিত, হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে তারা ছিল এই ‘ঘোষ’ বা ‘যাদব’ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত।

২০০২ সালের দাঙ্গা হয়েছিল যে গুজরাটে, সেই গুজরাট মূলত কৃষ্ণপূজারী অধ্যুষিত রাজ্য।  কারণ যাদবদের নিয়ে কৃষ্ণ যেই ‘দ্বারকা’ নামক কল্পিত স্থানে নিজের রাজত্ব স্থাপন করেছিল বলে হিন্দুরা দাবি করে থাকে, তা নাকি গুজরাটে অবস্থিত! সুতরাং বুঝতেই পারছেন পাঠকেরা, হিন্দুধর্মে কনভার্টেড প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী ‘হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’ তো নয়ই, বরং হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা ও দাঙ্গা সৃষ্টিতে এই ‘কৃষ্ণের আদর্শ’ই মূল ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে ফেসবুকে ‘জাগো হিন্দু’র মতো যেসব হিন্দু পেজগুলো একের পর এক সাম্প্রদায়িক পোস্ট দিয়ে দাঙ্গা সৃষ্টির পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, এগুলোর সবগুলো হচ্ছে ‘ইসকন’ বা হরেকৃষ্ণ পার্টি বলে পরিচিত একটি সংগঠনের সদস্য।

আসলে এই হিন্দুধর্মে কনভার্টেড প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য আর কৃষ্ণপূজারীদের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। চৈতন্যের উদ্দেশ্য ছিল গোটা পৃথিবীকে মুসলিম মুক্ত করা, আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গোটা পৃথিবীকে না হোক অন্ততপক্ষে বাংলাদেশকে ইসলাম মুক্ত ও মুসলিম মুক্ত করতে বদ্ধপরিকর। “কৃষ্ণের আদর্শে অ-সাম্প্রদায়িকতা স্থাপন” বলতে প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়েছে মুসলিম জাতি ও সম্প্রদায়ের আগে ‘অ’ বসিয়ে দেয়া তথা মুসলিম জাতির বিলুপ্তি, তারপর সে তার পেয়ারের হিন্দু সম্প্রদায়কে নিয়ে সুখে-শান্তিতে মুসলিম মুক্ত ‘অ-সাম্প্রদায়িক’ বাংলাদেশে বসবাস করতে পারবে, এই-ই তার সারাজীবনের স্বপ্ন ও আশা।

আমার কথাটি ফুরলো, নটে গাছটি মুড়লো।

Post a Comment

 
Top