কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘সেভেন ইন্ডিয়ান ক্লাসিকস্’ নামে হিন্দুয়ানী গল্পের একটি সংকলন অনেকেই পড়েছেন। বইয়ের গল্পগুলো কালিদাসের বিভিন্ন রচনা ও প্রাচীন হিন্দুয়ানী কল্পকাহিনী থেকে নেয়া, যার অধিকাংশই আবার অশ্লীল!

সেখানে একটি গল্প রয়েছে এরকম, এক সন্ন্যাসী শহরের প্রান্তে এক গাছের ডালে উল্টো হয়ে ঝুলে সাধনা করত। তার এই সাধনার কথা শহরে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। রাজসভাতেও সেই সংবাদ পৌঁছে যায়। রাজা যখন তার সভাসদদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আশ্চর্য প্রকাশ করছে, তখন সভায় উপস্থিত এক বেশ্যা প্রস্তাব দিল, হে রাজা, বিষয়টি নিয়ে এত আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আপনি অনুমতি দিলে আমি ঐ সন্ন্যাসীকে গাছের ডাল থেকে নামিয়ে, তার সাথে সংসার করে তাকে দিয়ে আমার গর্ভে সন্তান জন্মদান করাব। শুধু তাই নয়, সেই সন্তান তার কোলে করে বহন করিয়ে আপনার রাজসভায় হাজির করাব।

সবাই একবাক্যে বেশ্যার এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করল। সে প্রথমে কতগুলো মিষ্টান্ন থালায় করে নিয়ে, সেই গাছের কাছে গিয়ে সন্ন্যাসীকে আহবান করল এই বলে যে, হে গুরুদেব, আপনার সেবায় আমি এই মিষ্টান্ন প্রস্তুত করেছি। এভাবে বেশ্যাটি সেবার ছলে সন্ন্যাসীর সাথে আস্তে আস্তে ভাব জমাল। একপর্যায়ে ঠিকই সংসার পাতল এবং সন্তান জন্মদান করিয়ে সেই সন্তান তার কোলে করে তাকে রাজসভায় নিয়ে আসল।

যখন সেই সন্ন্যাসী তার বেশ্যা স্ত্রীকে সহ রাজসভায় হাজির হল, তখনই সবাই সমস্বরে হো হো করে হেসে উঠল। তখন সন্ন্যাসীর হিন্দুয়ানী মানস আবার জেগে উঠল, ‘এ আমি কি করছি’ বলে নিজের সন্তানকে কোলের থেকে মাটিতে ছুঁড়ে দিল এবং আবার গাছের কাছে গিয়ে উল্টো হয়ে ঝুলে তপস্যায় মগ্ন হয়ে পড়ল।

ঘটনাটির সাথে পুরোপুরি মিল রয়েছে ফরহাদ মজহার আর অর্চনার কাহিনীর। হিন্দু সমাজে বেশ্যাকে মহিমান্বিত করা হয় এই বলে যে, তারা মুনি-ঋষির তপস্যা ভাঙাতে পারে, যেমন মেনকাকে দিয়ে বিশ্বামিত্রের তপস্যা ভাঙানো হয়েছিল। সম্ভবত রাজশেখর বসু হবে, কোন এক হিন্দু লেখক তার লেখায় লিখেছিল, “দেবত্বের তপস্যা না করে বেশ্যা হওয়ার আরাধনা কর। কারণ বেশ্যাদের দিয়েই দেবত্বের তপস্যা করা মুনি-ঋষিদের সাধনা ভাঙানো হয়।”

সে যাই হোক, ব্রিটিশ আমলে কলকাতার ইতিহাস থেকে শুরু করে হাল আমলের বলিউডের সানি লিওনের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায় যে, পতিতাবৃত্তি হিন্দুসমাজে খুব সম্মানের বিষয় এবং এই অর্চনারাই হিন্দু সমাজের গর্ব। গল্পের সেই রাজসভার মতোই হিন্দুরা নিয়মিত তাদের মেয়েদেরকে পাঠিয়ে থাকে, আর তাদের মেয়েরাও পরপুরুষের বিছানায় গিয়ে অভীষ্ট লক্ষ্য হাসিল করাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, হিন্দুরাই এই অর্চনা কাহিনীকে অনেক বেশি ফুলিয়ে প্রচার করছে। অথচ বিষয়টি হিন্দুদের জন্যই লজ্জার। কারণ অর্চনা কাহিনী দ্বারা হিন্দু মেয়েদের চরিত্র যে কতো খারাপ, তা-ই প্রমাণিত হয়।

কিন্তু কে লজ্জিত হবে? কেন লজ্জিত হবে? হিজড়া কিংবা বেশ্যারা যখন অপরকে বিব্রত করতে জনসমক্ষে কাপড় খুলে জড়িয়ে ধরে, তখন তো তারা নিজেরা লজ্জিত হয় না। হিন্দুরাই বা কেন লজ্জিত হবে? অর্চনারাই যে তাদের রমণীকুলের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে।

Post a Comment

 
Top