১৯৮৪ সালে শিখদের আলাদা রাজ্য খালিস্তানের দাবিতে যখন আন্দোলন হয়েছিল, তখন শিখদের প্রধান উপাসনালয় স্বর্ণমন্দিরে ‘অপারেশন ব্লু স্টার’ পরিচালনা করেছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা  গান্ধী। শিখদের প্রধান উপাসনালয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য ইন্দিরা গান্ধীর শিখ দেহরক্ষীরাই তাকে গুলি করে হত্যা করেছিল এবং এর জের ধরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বহু শিখ তখন নিহত হয়েছিল।

শিখ স্বর্ণমন্দিরে হামলার প্রতিবাদস্বরূপ নিজের রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘পদ্মভূষণ’ বর্জন করেছিল শিখ সাংবাদিক খুশবন্ত সিং, যাকে শিখ সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়।

শিখদের মন্দিরটি যে এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, সে এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ ডিসিপির নাম ছিল আসাদ ফারুকী। সেই আসাদ ফারুকী ফোনে খুশবন্ত সিংয়ের সাথে যোগাযোগ করে তার সাথে দেখা করতে চাইল। দেখা হওয়ার পর আসাদ ফারুকী খুশবন্তকে প্রশ্ন করল-

“এই সামান্য বিষয়ে আপনি সরকারের উপর এতো ক্ষিপ্ত হয়ে গেলেন?”

খুশবন্ত সিং তখন অাশ্চর্য হয়ে বলল, “সামান্য বিষয়! আপনি জানেন একটিমাত্র সরকারি অভিযানে প্রায় ৫,০০০ শিখ নিহত হয়েছে?”

“তাতে কি হয়েছে? তারা তো প্রতি বছরই এই পরিমাণ মুসলমান হত্যা করছে।” আসাদ ফারুকীর নির্লিপ্ত উত্তর।

খুশবন্ত সিং এবার আর নিজেকে সামলে রাখতে পারল না। রীতিমতো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বলল “আপনাদের মুসলমানদের মার খেতে খেতে তো অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।”

কিন্তু তাতে ‘মুসলমান’ পুলিশ অফিসারের কোন প্রতিক্রিয়া হতে দেখা গেল না। “ইনশা আল্লাহ, শিখদেরও অভ্যাস হয়ে যাবে” বলে সে খুশবন্ত সিংকে উত্তর দিল।

খুশবন্ত সিং তার বই Truth, Love and a Little Malice বইতে উপরের ঘটনাটি উল্লেখ করেছে। আগ্রহী পাঠকদের পড়ার সুবিধার্থে বইয়ের পেজটির গুগল বুকস লিঙ্ক দেয়া হলো- https://goo.gl/abdqDT।

উপরের ঘটনাটি পড়ে আমরা ভারতীয় মুসলমানদের মন সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা পাই। তাদের পাছামারা খেতে খেতে এমন অভ্যাস খারাপ হয়ে গিয়েছে যে, কেউ যদি হিন্দুদের পাছামারা দেয়ার প্রতিবাদ করে তখনও তাদের খারাপ লাগে। খুশবন্ত সিং হিন্দুদের নৃশংসতার প্রতিবাদ করায় তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেছে এক মুসলিম পুলিশ অফিসার, আরে হিন্দু ভাইয়েরা তো একটু না একটু পাছা মারবেই, মুসলিম মা বোনদের না হয় একটু না একটু রেপ করবেই। এতে মন খারাপ করার কী আছে?

খুশবন্ত সিং শিখ বলে হয়তো তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে নির্লিপ্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু কোন মুসলমান যদি প্রতিবাদী হয় তখন এসব মুনাফিকগুলো কোন ভদ্রতার ধারও ধারে না। কলকাতার টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম নুরুর রহমান বরকতি আরএসএস বিজেপির প্রতিবাদ করায় তাকে কলকাতার মুসলমানরাই পিটিয়ে আহত করেছে। যখন বাংলাদেশের কোন মুসলমান হিন্দুদের বিরুদ্ধে পোস্ট দেয়, তখন কলকাতার অনেক মুসলমানই বলে “তোমরা কাফের”।

উল্লেখ্য, এই মানসিকতাই ভারতীয় মুসলমানদের পরাধীনতার মূল কারণ। শুধু ভারতীয় নয়, বাংলাদেশের মুসলমানদের মাঝেও এই মানসিকতার সংক্রমণ ঘটছে। যার ফলে আমরা যারা অনলাইন এক্টিভিস্ট রয়েছি নাস্তিক ও উগ্র হিন্দুদের বিরুদ্ধে, তাদেরকে যতোটা না হিন্দুদের বাধা অতিক্রম করতে হয়, তারচেয়ে অনেক বেশি অতিক্রম করতে হয় এসব মুনাফিকদের বাধা। একটা পোস্ট দিয়ে শান্তিতে থাকা যায় না, কোত্থেকে এসব মুনাফিকগুলো এসে ইনিয়ে বিনিয়ে ভাঙ্গা রেকর্ড বাজাতে থাকে, “ইসলাম কাফিরদের সম্মান দেয়। ইসলাম কাফিরদের দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে মুখ বুঁজে থাকার শিক্ষা দেয়। ইসলাম ঢাল তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দার হওয়ার শিক্ষা দেয়।”

এই মনোভাব ত্যাগ না করতে পারলে বাংলাদেশের মুসলমানদেরকেও ভারতীয় মুসলমানদের মতো পরাধীন হতে হবে, এটি নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

Post a Comment

 
Top