গত কয়েকদিন ধরে ‘প্রিয়নবীর নিকট চিঠি’ নামক একটি ইসলাম অবমাননাকারী লেখা নাস্তিকেরা অনলাইনে খুব উৎসাহের সাথে প্রচার করছে, কারণ লেখক একজন সাবেক কওমি মাদ্রাসা ছাত্র, বর্তমানে শিক্ষক। ইতিমধ্যে ২০০ বারেরও অধিক চিঠিটি শেয়ার করেছে নাস্তিক ও হিন্দুরা। (https://goo.gl/sSHg5f)

চিঠির অধিকাংশ কথারই বাস্তবতার সাথে মিল নেই, যেমন কওমি মাদ্রাসায় নাকি হিন্দু লেখকদের বই পড়তে দেয়া হয় না। অথচ কওমি মাদ্রাসার পাঠ্যপুস্তকেই রয়েছে প্রচুর হিন্দু লেখকদের গল্প-কবিতা। দেশের সবচেয়ে বড় কওমি মাদ্রাসা হাটহাজারীর গা ঘেঁষে বিগত ১১৭ বছর ধরে অবস্থান করছে একটি মন্দির। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে মাদ্রাসা শিক্ষকেরা মন্দিরটিকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা দেখিয়েছে। হাটহাজারী মাদ্রাসার মুখপত্র মাসিক মঈনুল ইসলাম পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে মন্দিরটিকে উল্লেখ করেছে “শ্রী শ্রী সীতাকালী মায়ের মন্দির” নামে। (https://goo.gl/kBpGXF)

সুতরাং পুরো পোস্টের খণ্ডনে আমি যাবো না, আমি কেবল লেখকের গান্ধীপ্রীতি নিয়ে আলোচনা করব। উক্ত অখাদ্য চিঠিতে সে লিখেছে, তার নাকি নবীর চেয়েও গান্ধীকে ভালো লাগে। অথচ লেখকের পুরো চিঠি পড়লে তা গান্ধীর জীবনাদর্শের সাথে সাংঘার্ষিক বলেই প্রমাণিত হয়। উদাহরণস্বরূপ-

১) মাদ্রাসায় আরবী-উর্দু পড়তে বাধ্য করা হয়, হিন্দুর বইয়ের বদলে মুসলমানদের বই পড়তে বলা হয়, এটা নিয়ে লেখকের অনেক অভিযোগ। অথচ গান্ধীর আত্মজীবনীতে সে উল্লেখ করেছে যে, তার ছোটবেলায় স্কুলে মুসলমানদের জন্য ফারসী আর হিন্দুদের জন্য সংস্কৃত ক্লাস নেয়া হত। গান্ধীকে হিন্দু হিসেবে সংস্কৃত ক্লাসে বসালেও খটমটে সংস্কৃত তার কাছে ভাল লাগত না, তার কাছে ভাল লাগত সুমধুর ফারসী ভাষা। তাই সে মুসলিম সহপাঠীদের সাথে ফারসী ক্লাসে বসতে শুরু করে।

বিষয়টি নিয়ে তার সংস্কৃতের হিন্দু শিক্ষক তাকে অনেক বকাঝকা করল, যে সে কেন হিন্দু হয়ে সংস্কৃত ক্লাস ছেড়ে মুসলমানদের ফারসী ক্লাসে গিয়ে বসল। গান্ধীকে সে বাধ্য করল  পুনরায় সংস্কৃত  ক্লাসে গিয়ে বসতে। গান্ধী তার ঐ শিক্ষকের কোন সমালোচনা তো করেইনি, বরং শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছে এই বলে যে, হিন্দুর সন্তানের সংস্কৃত না শিখলে চলবে না।

অর্থাৎ ঐ অখাদ্য চিঠির লেখক যদি সত্যিই গান্ধীর জীবনী অনুসরণ করত, তাহলে সে তার শিক্ষকদের আরবী-ফারসী পড়তে বাধ্য করার জন্য শ্রদ্ধা করত।

২) অখাদ্য চিঠির লেখক আরও অভিযোগ করেছে যে, তার মাদ্রাসার সহপাঠিরা অন্যের ‘মশারিতে না ঢুকলে’ নাকি ঘুমাতে পারত না। কিন্তু এ নিয়ে অভিযোগ করার কি আছে বুঝলাম না। কারণ গান্ধীর জীবনীতে রয়েছে যে, নগ্ন নারীদের নামে বিবস্ত্র হয়ে এক বিছানায় শয়ন না করলে নাকি তার ঘুম আসত না। গান্ধী তার এই বিকৃতাচারকে উল্লেখ করত ‘পরীক্ষা’ নামে। গান্ধী অনেকের সাথেই শুয়েছিল, এমনকি নিজের নাতনীর সাথেও। ১৯৪৬ সালের ২০শে ডিসেম্বর গান্ধী তার ১৯ বছর বয়সী নাতনী মনুর সঙ্গে বস্ত্রহীন হয়ে শোয়ার কথিত ‘পরীক্ষা’ শুরু করেছিল।

শুধু তাই নয়, ছোটবেলায় গান্ধী পতিতালয়েও গিয়েছিল, যা তার আত্মজীবনীতে রয়েছে। “বন্ধু আমাকে একদিন বেশ্যা-গৃহে লইয়া গেল। সমস্ত ব্যবস্থাই পূর্ব হইতে ঠিক করা ছিল। টাকাও দেওয়া হইয়া গিয়াছিল। আমি একেবারে পাপের মুখের ভিতর গিয়া পড়িলাম। কিন্তু ‘ভগবানের অপার করুণা’ আমাকে ‘রক্ষা’ (!) করিল। সেই গৃহে আমি অন্ধের মতো হইয়া গেলাম। আমার কথা বলার মতো শক্তিও ছিল না। ‘লজ্জায় স্তব্ধ হইয়া’ সেই স্ত্রীলোকের পাশে খাটিয়ায় বসিয়া ছিলাম। স্ত্রীলোকটি ক্রুদ্ধ হইয়া প্রথমে আমাকে দুই-চার কথা শুনাইল, তারপর আমাকে দরজা দিয়া বাহির করিয়া দিলো।

তখন আমার পুরুষত্ব লাঞ্ছিত হইল বলিয়া মনে হইয়াছিল। পৃথিবী দ্বিধা হোক আমি তাহাতে প্রবেশ করি, লজ্জায় এমনি মনে হইতেছিল। কিন্তু আজ সেদিনকার উদ্ধার, ঈশ্বরের অপার কৃপা বলিয়া মনে করিতেছি। এই ধরণের ঘটনা আমার জীবনে আরও দুই চারবার হইয়াছে। তাহাতেও বিনা চেষ্টায়, কেবল ঘটনার যোগাযোগবশত আমি বাঁচিয়া গিয়াছি। কিন্তু বিশুদ্ধ দৃষ্টিতেও এই ঘটনায় আমি পতিত হইয়াছি বলিয়াই গণ্য করিতে হইবে। মনে মনে ‘ভোগের ইচ্ছাই’ আমাদের ছিল।” (গান্ধী রচনা সম্ভার: মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, পৃষ্ঠা ২৪,২৫,২৮,২৯) 

৩) মুসলমানরা হিংস্র, আর গান্ধী শান্তির অবতার! এই বিষয়টি প্রমাণ করতে অখাদ্য চিঠির লেখক লিখেছে-

//জেহাদ কি মানবতার সমাধান? রক্তপাতে কি শান্তি?
শয়তান নিয়ে এলো মহাত্মা গান্ধীকে, "চোখের বদলে চোখ পৃথিবীকে অন্ধ করে দেবে।"
- ঈমানে ওয়াসওয়াসা হানা দিল।//

অথচ ৪৭ এর দাঙ্গা থামাতে গান্ধীকে যখন মুসলমানদের ন্যায্য দাবি মেনে নিতে ব্রিটিশ ভাইসরয় ওয়াভেল অনুরোধ করেছিল, তখন গান্ধী উত্তর দিয়েছিল-

“ইফ ইন্ডিয়া নিডস এ ব্লাডবাথ, শী শ্যাল হ্যাভ ইট”

অর্থাৎ অখণ্ড ভারত তৈরীতে যদি গোটা ভারতকে মুসলমানদের রক্ত দিয়ে গোসলও করানোরও দরকার হয়, সেটা গান্ধীর অনুগত হিন্দুরা করিয়ে ছাড়বে। উপরের কোটেশনটি বহুল প্রচলিত। কংগ্রেস নেতা বিমলানন্দ শাসমল তার ‘ভারত কী করে ভাগ হলো’ বইতে তা উল্লেখ করেছে।

সুতরাং অখাদ্য চিঠির লেখকের ‘গ্যানের দৌড়’ নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই। তার লেখাই প্রমাণ করে যে, সে গান্ধীর জীবনী পড়েনি। অথবা চিঠিটা লিখে দিয়েছে অন্য কোন নাস্তিক, সে তার নিজের আইডিতে তা পোস্ট করেছে মাত্র। কিন্তু এখানে ফিকিরের বিষয় যে, এই যে সে গান্ধীকে ‘নবীর চেয়েও ভালো’ বলে ঘোষণা করল, এই বিশ্বাস, এই চিন্তা যে কোথা থেকে পেল? এ সম্পর্কে পরবর্তী পোস্টে আলোকপাত করা হবে ইনশা আল্লাহ।

----
ব্যাকাপ পেজ: https://web.facebook.com/dastaar.rajdarbaar/
সারাহাহ: dastaar.sarahah.com

Post a Comment

 
Top