বাংলা সিনেমা কিংবা যাত্রা নাটকে নরনারীর মধ্যকার প্রেম নিবেদন কিংবা যৌনতাড়না প্রদর্শনের কিছু গতানুগতিক ধারা আছে। বিশেষ করে চটুল সুড়সুড়িমূলক বাংলা গানগুলো সবই সেই ধারাকে অনুসরণ করে লেখা। যেমন উদাহরণস্বরূপ-

১) বাঁশি বাজলে সখী আসেঃ বাংলা সিনেমায় গ্রাম্য পিরীতি প্রদর্শনে বাঁশির ব্যবহার সেই ল্যাদাকাল থেকে সবাই দেখে এসেছে। নায়ক বাঁশি বাজাবে, আর প্রেমিকা সেই বাঁশির শব্দ শুনে সবকিছু ফেলে ছুটে আসবে। এ নিয়ে গ্রামীণ বাংলা গানও রয়েছে, আমি যখন রাঁধতে বসি বন্ধু বাজায় বাশি, রান্নাবাড়া ফেলে আমি কেমন করে আসি।

এই কনসেপ্টটা এসেছে রাধাকৃষ্ণের কাহিনী থেকে। চণ্ডিদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ বইতে রয়েছে যে, কৃষ্ণ যখন বাঁশি বাজাত তখন রাধা অন্যমনস্ক হয়ে ভাতের হাঁড়ি উল্টে দিত।

২) জঙ্গলের মাঝে অভিসারঃ পাশ্চাত্যের সিনেমাগুলোতে নায়ক-নায়িকার যৌনতা চরিতার্থে তাদেরকে হোটেলে যেতে দেখা যায়। কিন্তু এদেশের সিনেমাগুলোতে তাদেরকে যেতে দেখা যায় কাশবনে কিংবা গহীন জঙ্গলে। বলা বাহুল্য, জঙ্গলে অভিসারের ধারণাটিও রাধাকৃষ্ণের কাহিনী থেকে নেয়া। চণ্ডিদাসের বইতে ‘বনখণ্ড’ অংশটিকেই সবচেয়ে বেশি অশ্লীল ও রুচিগর্হিত অংশ হিসেবে ধরা হয়।

৩) পুকুরে মেয়েদের গোসলঃ হিন্দি সিনেমায় এ নিয়ে অনেক ‘কালজয়ী’ সুড়সুড়িমূলক দৃশ্য নির্মিত হয়েছে। রাজ কাপুরের ‘সঙ্গম’ সিনেমায় “বোল রাধা বোল সঙ্গম” গানটিতে কৃষ্ণের মাথার পালক থেকে শুরু করে কাপড় নিয়ে গাছের উপর চড়ে বসা, প্রত্যেকটিতে অনুসরণ করা হয়েছে কৃষ্ণের দ্বারা গোপীদের কাপড় নিয়ে গাছে চড়ার কাহিনীকে। এমনিতে ভারত ও বাংলাদেশের আরো অনেক সিনেমায় লুকিয়ে লুকিয়ে মেয়েদের গোসল করার দৃশ্য রয়েছে। বলা বাহুল্য, সবকিছুর জন্ম হয়েছে সেই রাধাকৃষ্ণের কাহিনী থেকে।

এরকম আরো অনেক পয়েন্ট রয়েছে, যেগুলো প্রচলিত সিনেমা ও গানের সাথে মিলিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে যে, উপমহাদেশের নষ্টামীর মূল ধারাটির জন্ম হয়েছে রাধাকৃষ্ণের কল্পকাহিনীকে কেন্দ্র করে। এই ধারাটি কিন্তু আবার উপমহাদেশের বাইরের সিনেমা-নাটকে অনুসরণ করা হয় না, কারণ রাধাকৃষ্ণের কল্পকাহিনীর প্রভাব ঐসব দেশের জনমানুষের উপর নেই।

অনেকে হয়তো চিন্তা করতে পারে, এইসব প্রাচীন গান ও নাটকে হয়তো কৃষ্ণলীলার কনসেপ্ট অনুসরণ করা হত, কিন্তু বর্তমান ডিজিটাল যুগে এর কোন তাৎপর্য নেই। কিন্তু এই ধারণা ভুল। বর্তমানে এদেশে ফষ্টিনষ্টি পরবর্তী লেভেলে উন্নীত হয়েছে, তথা এলজিবিটি, পায়ুকাম, হিজড়াকাম, মাসিকের রক্ত নিয়ে বাপ-ভাই-পুত্রের সাথে আলোচনাকে প্রমোট করা হচ্ছে আর এর পেছনে রয়েছে নাস্তিকেরা। বলা বাহুল্য, এই নাস্তিকগুলো সকলেই উগ্র হিন্দুপন্থী, আর এদেশে উগ্র হিন্দুত্ববাদকে মূল পৃষ্ঠপোষকতা দেয় যে সংগঠনটি তার নাম হলো ‘ইসকন’। এই ইসকনের আরেক নাম হরেকৃষ্ণ পার্টি, অর্থাৎ এরা নিজেদেরকে কৃষ্ণভক্ত বলেই পরিচয় দিয়ে থাকে।

উপমহাদেশের সমস্ত নষ্টামীর জন্ম যেই কল্পিত চরিত্রটিকে কেন্দ্র করে, আজ নাকি তার জন্মদিন! গতানুগতিকভাবে বলা হয় জন্মাষ্টমী, যদিও এর নাম হওয়া উচিত ছিল ‘জন্মনষ্টামী’। যেদিকেই যতো প্রকার নষ্টামোই দেখুন না কেন, সমস্তকিছুর সূচনা হয়েছে এই নষ্ট চরিত্রটির জন্মকে কেন্দ্র করে।

Post a Comment

 
Top