আজকে ভারতে হিন্দুত্ববাদী দলগুলো পালন করেছে বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তৃতার ১২৫ তম পূর্তি উৎসব। নরেন্দ্র মোদি এ জন্য বিশেষ লাইভ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে, গেরুয়া পোষাক পরা হিন্দু গুণ্ডারা বিভিন্ন স্থানে হোন্ডা নিয়ে শোডাউন করেছে। প্রশ্ন হতে পারে, ১২৫ বছর আগে বিবেকানন্দ সাদা চামড়াদের দেশের কোন এক সম্মেলনে গিয়েছিল, এ নিয়ে এতো মাতামাতির কি আছে? মুসলমান দেশগুলো তো এরকম কতো সম্মেলনেরই আয়োজন করে থাকে। এর দ্বারা কি এটাই বোঝায় না যে, হিন্দুরা তাদের ধর্মের সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য সাদা চামড়াদের ওপরই নির্ভরশীল?

বিবেকানন্দ আমেরিকার শিকাগোতে গিয়েছিল ১৮৯৩ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর। এর আগে রামমোহন, রবীন্দ্রনাথের দাদা দ্বারকানাথ সহ অনেকেই পশ্চিমা দেশগুলোতে গিয়েছিল। কিন্তু তারা হিন্দুধর্মের এজেন্ট হিসেবে সেসব দেশে যায়নি। তাছাড়া তখনও হিন্দুধর্মটাকে সংস্কার করা হয়নি, সতীদাহ সহ অনেক অমানবিক প্রথাই তখনো হিন্দুরা পালন করত। সিপাহী বিদ্রোহে মুসলমানদের পতনের পর ব্রিটিশ অনুগত হিন্দুদেরকে ভারতবর্ষের মূল ক্ষমতাপ্রাপ্ত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ব্রিটিশরা। এজন্য প্রথমে হিন্দুধর্মটাকে অন্যান্য ধর্মের ন্যায় একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করে তারা, বেদ-উপনিষদ এগুলো নিয়ে ব্রিটিশরা হিন্দুত্ববাদী চেতনা জাগ্রত করার পদক্ষেপ নেয়। ফলশ্রুতিতে ব্রিটিশ অনুগত ব্রাহ্মসমাজের অনুসারী অনেকেই তখন হিন্দুধর্মে ফেরত আসতে শুরু করে।

সেরকমই এক ব্রাহ্ম যুবক ছিল নরেন্দ্রনাথ ওরফে বিবেকানন্দ। মূলত সে ছিল ইহুদী ইলুমিনাতি তথা ফ্রিম্যাসন সংঘের সদস্য। এই বিবেকানন্দই ১৮৯৩ সালে সর্বপ্রথম হিন্দুধর্ম নামে যে একটা ধর্ম আছে, তা বহির্বিশ্বে উপস্থাপন করেছিল। খ্রিস্টান প্রভুদের মস্তিষ্কপ্রসূত ধর্ম সর্বপ্রথম খ্রিস্টানদের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল, সে উপলক্ষে আজ ১১ই সেপ্টেম্বর ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা মহাসমারোহে দিবসটি পালন করছে।

হিন্দুদেরকে তাদের ধর্মের স্বীকৃতি নিতে ১৮৯৩ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে, বিপরীতে ভারতীয় মুসলমানদেরকে ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশরাই তাদের দেশে নিয়ে যেত ব্রিটিশ যুবকদেরকে শিক্ষিত করার জন্য। একজন মুসলমান রাজকীয় কর্মকর্তা মির্জা ইতিসামউদ্দীন, ১৭৬৫ সালে মুঘল বাদশাহর চিঠি নিয়ে ব্রিটেনে গিয়েছিলেন। ব্রিটিশরা তাকে প্রস্তাব দিয়েছিল, আপনি আমাদের দেশে থেকে যান আর ভারতে চাকরি করতে আগ্রহী ব্রিটিশ যুবকদেরকে ফারসী-উর্দু শিক্ষা দান করুন। বিনিময়ে আপনি এদেশের যে কোন সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক, করতে পারেন। চাইলে একাধিক বিয়েও করতে পারেন।

কিন্তু মির্জা ইতিসামউদ্দীন সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। মির্জা ইতিসামউদ্দীনকে যেই ব্রিটিশটি তার নিজ দায়িত্বে ব্রিটেনে নিয়ে গিয়েছিল, সে তাকে ভারতে ফিরিয়ে নিতে গড়িমসি শুরু করে। মির্জা ইতিসামউদ্দীন তার রচিত ‘বিলায়েতনামা’ বইতে লিখেছিল যে, তাকে নিয়ে আসা ব্রিটিশটি তাকে সব জায়গায় উপস্থাপন করে দাবি করত যে, মির্জা ইতিসামউদ্দীন নাকি হলেন হলেন ভারতীয় মুঘল রাজার জনৈক আত্মীয়, তার সাথে ব্রিটিশটির সুসম্পর্ক রয়েছে। এভাবে ব্রিটিশটি সবজায়গায় নিজেকে জাহির করত।

অর্থাৎ মুসলমানরা খ্রিস্টানদের সভ্যতা ও শিক্ষার স্বীকৃতি দিত, আর হিন্দুরা ব্রিটিশদের কাছ থেকে তাদের ধর্মের স্বীকৃতি নিত। এতেই বোঝা যায় হিন্দুদের অবস্থানটা কোথায়। মুসলিমশাসিত স্পেনের কর্দোবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি না নিলে ভ্যাটিকানে পাদ্রী হিসেবেও নিয়োগ পাওয়া যেত না। সে হিসেবে হিন্দুধর্মকে তুলনা করা যায় একটি বনমানুষের সাথে, যাকে সদ্য জঙ্গল থেকে তুলে এনে, চুল-লোম পরিষ্কার করে সভ্য সমাজে উপস্থাপনের উপযুক্ত করা হলো মাত্র।

কিন্তু নমশূদ্র প্রধান বিচারক সম্পর্কে মতিয়া চৌধুরী যা বলেছিল, কয়লা যায় না ধুলে, ইল্লত যায় না মরলে। হিন্দুদেরকে যতোই ঝাড়পোছ করা হোক না কেন, তারা অসভ্য জংলী সম্প্রদায় ছিল আছে এবং থাকবে। পাশ্ববর্তী ভারতের দিকে তাকালে এখন দেখা যায়, হিন্দু জানোয়ারটি শেকল ছিঁড়ে উন্মত্ত আচরণ করছে।

এ সম্পর্কিত পূর্ববর্তী পোস্টঃ https://goo.gl/j6Y1e4

Post a Comment

 
Top